আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ 

৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম সরকারিভাবে হজে যাচ্ছে না এই ইসলামিক দেশে কোন মানুষ! কেন? জানতে হলে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : দেশ প্রতিষ্ঠা হওয়ার ৭৫ বছরের ইতিহাসে কোনদিন যা ঘটেনি তা ঘটেছে পাকিস্তানে। আর্থিক অবস্থার সঙ্গীন দশার কারণে এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে পাকিস্তান থেকে সরকারিভাবে কেউ হজে যাচ্ছে না। ইসলাম ধর্মের অন্যতম আবশ্যিক বিষয় হল হজে যাওয়া। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব থেকে প্রাপ্ত হজের কোটা এবার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক সংকট। গলফ নিউজের খবর অনুযায়ী জানা যাচ্ছে পাকিস্তান এবার এক লক্ষ ৭৯ হাজার কোটা পেয়েছিল হজযাত্রার জন্য তার সবটাই বাতিল করেছে সে দেশের সরকার।

ঘোষিত একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ইসলাম ধর্মের অন্যতম আবশ্যিক বিষয় পালনের তার নাগরিকদের প্রতি কর্তব্য পালন করতে পারছে না এই ইতিহাস সম্ভবত এর আগে কোনদিন ঘটেনি। কারণ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র শহর সৌদির মক্কা। সেখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন হজরত মহম্মদ সা। প্রতি বছর এই শহরে তীর্থযাত্রা করে থাকেন মুসলমানেরা। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তাঁরা মক্কায় হাজির হন বছরের একটি বিশেষ সময়ে।

Advertisement

ইসলামে শারীরিক ভাবে সক্ষম এবং আর্থিক ভাবে সামর্থ্যযুক্ত যে কোনও মুসলমানের জন্য হজযাত্রা বাধ্যতামূলক। ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শেষ মাসে হজযাত্রার আয়োজন করা হয়। পাঁচ থেকে ছ’দিন ধরে চলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান।

হজের পুণ্যার্থীদের নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রতিটি দেশের জন্য কোটা নির্দিষ্ট করে দেয় সৌদি আরব। কোন দেশ থেকে কত জন মক্কায় আসবেন, তা সৌদিকে আগে থেকে জানাতে হয়। কোটার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্যও মেলে।

দেশের মুসলমান জনসংখ্যার উপর কোটার সুবিধার মাত্রা নির্ভর করে। সে দিক থেকে বরাবরই অন্য অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকে পাকিস্তান। প্রতি বছর পাকিস্তান হজের কোটায় বহু পুণ্যার্থী পাঠিয়ে থাকে।

এ বছর সৌদি থেকে ১ লক্ষ ৭৯ হাজার মানুষের কোটা পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইসলামাবাদ তা ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে হজযাত্রা এখন তাদের কাছে বিলাসিতার সমান।

পাক সংবাদমাধ্যম গাল্‌ফ নিউজ়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হজযাত্রার আয়োজন করতে হলে এ বছর পাকিস্তানের দরকার ছিল মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে অর্থ মন্ত্রককেই দিতে হত ৭৩৭ কোটি টাকা।

তীর্থযাত্রার জন্য এই মুহূর্তে এত খরচ করার সাধ্য পাকিস্তানের নেই। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইসলামাবাদ বহু অব্যবহৃত আসন ফিরিয়ে দিয়েছে। এ ভাবে পাক সরকার প্রায় ১৯৬ কোটি টাকা বাঁচাতে পেরেছে।

হজযাত্রা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ বছর, প্রতি তীর্থযাত্রীর জন্য পাকিস্তানি মুদ্রায় অন্তত ১২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে মক্কা যেতে। গত বছরের তুলনায় যা অনেকটাই বেশি।

গত বছর হজযাত্রায় মাথাপিছু খরচ ছিল ৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকা (পাকিস্তানি মুদ্রা)। এ বছর খরচের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। পাকিস্তানি মুদ্রার দাম পড়ে যাওয়া এই খরচ বৃদ্ধির একমাত্র কারণ।

এ সবের মাঝে পাকিস্তানের কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের পকেট থেকে খরচ করে মক্কায় যেতে চান, তবে যেতেই পারেন। তাঁদের জন্য পাক বিমান সংস্থাগুলি বিমানের ভাড়ারও পরিবর্তন করেছে।

প্রতি পুণ্যার্থীকে মক্কা পৌঁছে দিতে বিমানভাড়া বাবদ খরচ হবে ৭১ হাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকা, জানিয়েছে পাক এয়ারলাইন্স। দেশের উত্তর অংশ থেকে পুণ্যার্থীরা যেতে চাইলে তাঁদের জন্য বিমানভাড়া আরও কিছুটা বেশি হবে।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে হজযাত্রা যাঁরা করতে চান, পাকিস্তান সরকার এ বছর তাঁদের কোনও ভর্তুকি দিচ্ছে না। তবে এক পাক মন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার পুণ্যার্থীদের কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করবে।

গত বছরও পাকিস্তান সরকার হজযাত্রীদের ভর্তুকি দিতে পারেনি। ফলে মক্কায় যেতে অনেককেই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। এ বছরও ভর্তুকি নেই। উল্টে হজের কোটাও তুলে নিয়েছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের ইতিহাসে এ বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ শুধুমাত্র আর্থিক কারণে এক লক্ষ ৭৯ হাজার হজের কোটা বাতিল করতে হয়েছে যা কোনদিন ঘটেনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে কেউ হজে যেতেই পারেন সে ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলে পাকিস্তানে সরকার ঘোষণা করেছে।

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ