প্রচ্ছদ 

ওরা পেরেছে, আমরা পারিনি , আমাদের উদারতা নেই, ওরা উদারতার পরিচয় দিয়েছে !

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ব্রিটিশরা আমাদের দেশকে শাসন করেছে সময়ের বিচারে ১৯০ বছর । ব্রিটিশরা এক সময় সমগ্র বিশ্বের শাসক ছিল।প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে ব্রিটিশের সাম্রাজ্যের সূর্য় অস্ত যেত না । ইংরেজদের অনেক অত্যাচারের কাহিনী আমাদের ইতিহাসে বর্ণিত আছে । এমনকি প্রথম শ্রেণির কামরায় ভ্রমণ করার অধিকারও ছিল না ভারতীয়দের । কালের চক্রে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই । ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আর নেই । সুপার পাওয়ারও নেই । মূলত ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্গে ব্রিটেনের আর্থিক অবস্থার খুব বেশি তফাৎ নেই ।

আমরা উচ্ছ্বসিত হয়েছি যে অবিভক্ত ভারতের নাগরিক বা বংশোদ্ভুত ঋষি সুনক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন । তিনি নিজেকে একজন হিন্দু বলে পরিচয় দেন , গীতা হাতে শপথ নিয়েছেন । ভারতীয় সফটওয়ার কোম্পানী ইনফোসিসের মালিক নারায়ণ মূর্তির জামাই ঋষি সুনক । সুতরাং সাধারণভাবেই ভারতীয়রা উচ্ছ্বসিত হবেই । কারণ একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত সন্তান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন । আর এই ঘটনায় ভারতীয় হিসাবে গর্ববোধ করার পাশাপাশি আত্মসমালোচনাও করা উচিত । ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক , সেদেশের নাগরিক এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই , ২০১৫ সাল থেকে তিনি ব্রিটেন পার্লামেন্টের সদস্য , সেদেশের অর্থমন্ত্রীও তিনি ছিলেন । এথেকে এটা প্রমাণিত ব্রিটেনের গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী । একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ খ্রিষ্টান জনবহুল দেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সেদেশের জনগণ বিনা প্রশ্নে তা মেনে নিচ্ছে। অথচ আমরা যারা ঋষি সুনককে নিয়ে গর্ববোধ করছি , উচ্ছ্বাসবোধ করছি তারা একবার প্রশ্ন করছি না আমাদের দেশে কোনো মুসলমান কিংবা কোনো খ্রিষ্টান প্রধানমন্ত্রী হলে তা কী আমরা মেনে নেব !  চোখের সামনে উদাহরণ আছে, ২০০৪ সালে আমরা কংগ্রেসের তৎকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদে মেনে নিইনি । সেদিন আমরা উদারতা পরিচয় দিতে পারিনি । অথচ দেশের মানুষ সোনিয়া গান্ধীকে দেখেই ভোট দিয়েছিলেন । ভোট প্রচারের অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী । তা সত্ত্বে কোনো কোনো রাজনীতিবিদ সোনিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে মাথা নেড়া করে আজীবন থাকবেন বলে হুংকার দিয়েছিলেন ।

Advertisement

আমরা যাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছি সেই ইংরেজরা নিরবে গণতন্ত্রের স্বার্থে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বরণ করে নিলেন একজন কালো আদমিকে । আমরা যা করতে পারিনি , ইংরেজরা তা করে আমাদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়ে গেলেন । আমাদেরকে নতুন করে গণতন্ত্রের পাঠ শেখালেন । আমরা যে ভাষায় সোনিয়া গান্ধীকে বিদেশী বলে আক্রমণ করেছিলাম, ঋষি সুনককে সাদরে বরণ করে আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেল ইংরেজরা । অথচ সোনিয়া গান্ধীকে সেদিন মেনে নিলে সমগ্র বিশ্বের সামনে ভারতের গণতন্ত্র যেমন সম্মানিত হতো একইভাবে ভারতীয়দের উদারতা বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেত । তাই যারা ঋষি সুনকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে ভারতীয়দের জয় দেখছেন তাদেরকে সবিনয়ে বলি ঋষি সুনকের ঠাকুরদা ও ঠাকুমা ১৯৩৭ সালেই অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা ( অধুনা পাকিস্থানে) ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন ।

আর এ নিয়ে খুব বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশেরও প্রয়োজন নেই । কারণ এমন এক সময় ঋষি সুনক দায়িত্ব পেয়েছেন সেই দায়িত্ব যথাযথ পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে । মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ব্রিটেনের দুই জন প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে । তাই আগামী দিনে আরও কঠিন লড়াই । তাছাড়া ব্রিটেনের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ঋষি সুনক কতটা সফল হবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ