প্রচ্ছদ 

পার্থর জেল যাত্রা নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে ঘুরিয়ে মমতাকেই আক্রমণ ! দলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো কুণালকে

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : দলের বিবেক -এর নামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেস জনমানষে হেয় করার চেষ্টা করে চলেছে শাসক দলের কিছু নেতা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়টি জানেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে । যাঁরা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইস্যুতে নানা বয়ান দিচ্ছেন তাঁরা আসলে খুব কৌশলে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি করে এই রাজ্যে বিজেপির আসার পথকে সুগম করছে । একথা বহুবার বাংলার জনরব দাবি করেছে । বাংলার জনরব মনে করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দলের বিবেক বলে দাবি যাঁরা আক্রমণ করছেন তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঙুল তোলার চেষ্টা করছেন । খুব সুকৌশলে তাঁরা জনমানষে মমতা সম্পর্কে একটা খারাপ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে ।

গত শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জেল হেফাজত হওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলন করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কটাক্ষ করেছিলেন । তিনি সরাসরি পার্থর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,জেলে ঢুকে দেখুন কেমন লাগে । একই সঙ্গে কুণাল আরও বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে যাঁরা ষড়যন্ত্র করেছেন তাঁরা সবাই জেলে যাবে । এই কটাক্ষ আসলে তৃণমূলের নেতাদেরকে লক্ষ্য করেই যে তৃণমূল মুখপাত্র করেছিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । মনে রাখতে হবে কুণাল ঘোষ জেলে থাকার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখনই কুণালকে আক্রমণ করেন যখন তৃণমূলের সাংসদ হয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছিলেন । ঠিক তখনই পার্থ চট্টোপাধ্যায় কুণালকে আক্রমণ করে পাগল বলে সম্বোধন করেছিলেন । এ থেকে এটা পরিস্কার পার্থর জেল যাত্রাকে কটাক্ষ করে আসলে মমতাকেই ঘুরিয়ে আক্রমণ করেছেন কুণাল ।

Advertisement

কুণালের কথা মতোই তাহলে পার্থর মতোই কী খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুণালে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন ! কারণ কুণালকে গ্রেফতার করেছিল বিধাননগরের পুলিশ । রাজ্য পুলিশের প্রধান কর্ত্রী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এথেকে পরিস্কার পার্থকে আক্রমণ করতে গিয়ে খোদ দলনেত্রী আক্রমণ করে ফেলেছেন কুণাল ঘোষ । ফলে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । তাই শেষ পর্যন্ত দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে কুণালকে সরানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর । তিনি এখন আর দলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না । তবে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁকে বহাল রাখা হয়েছে ।এই প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘দলের পক্ষ থেকে আমায় জানানো হয়েছে। আমি দলের কঠিন দিনের সৈনিক। এখন দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’’ শুধুই পার্থ সম্পর্কে না কি দলের যে কোনও বিষয়েই তাঁকে মন্তব্য করতে নিষেধ করা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেননি কুণাল।

প্রসঙ্গত গত শুক্রবার পার্থের জেলা হেফাজত হওয়ার পর কুণাল বলেন, ‘‘জেলে ঢুকে দেখুন কেমন লাগে। আমি মাথা উঁচু করে বলছি, আমি কোনও অপরাধ করিনি। আশা করব, আমি যেমন নাগরিক হিসেবে বন্দিজীবনের প্রত্যেকটি নিয়ম মেনেছি, পার্থের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম প্রযোজ্য হোক। কারা দফতর যেন সে রকমই করে। তাঁকে কোনও জেল হাসপাতালে নয়, সেলে রাখতে হবে। আমাকেও সেলে রাখা হয়েছিল। আমার সঙ্গে তখন থেকে বহু কর্মী ও বন্দির যোগাযোগ রয়েছে। আমি খবর পাব।’’ এখানেই না থেমে কুণাল বলেন, ‘‘আমি প্রথম দিন থেকে বলেছি ষড়যন্ত্র। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে পার্থও ছিলেন। যখন বন্দি ছিলাম, যন্ত্রণায় জ্বলে মরেছি, তখন বলা হয়েছিল আমি পাগল। অথচ উনি তো প্রথমে কোনও কথা বলেননি। কাকে যেন ফোন করছিলেন। কেন মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন, এ সব বলে বেরিয়েছেন।’’

প্রসঙ্গত সারদা মামলায় দীর্ঘ সময় জেলে ছিলেন কুণাল। সেই প্রসঙ্গ টেনেই তিনি বলেন, ‘‘আমার জেল জীবনে যা হয়েছিল, আমি যখন বলেছিলাম চক্রান্ত, তখন এই পার্থ এবং কেউ কেউ বলেছিলেন আমি নাকি পাগল। এই পার্থ আমায় দলবিরোধীও বলেছিলেন। অথচ এই পার্থই তখন থেকে অপা, অমুক, তমুক করে বেরিয়েছিলেন।’’ পার্থ-সহ দলের আর যাঁর তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন তাঁদেরও একই দশা হবে বলেও মন্তব্য করেন কুণাল।

এর পরেই কুণালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে তৃণমূল। তবে এ নিয়ে শাসক দলের মধ্যে দু’রকম মত রয়েছে। এক দল বলছেন, ব্যক্তিগত রাগ মেটাতে গিয়ে দলে আরও চক্রান্তকারী রয়েছেন বলে কুণাল তৃণমূলকেই অস্বস্তিতে ফেলছেন। অপর পক্ষের বক্তব্য, পার্থ-কাণ্ডে জনমানসে যে প্রতিক্রিয়া সেখানে কুণালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ক্ষতির হতে পারে। কেউ কেউ ভাবতেই পারেন যে এখনও পার্থ সম্পর্কে তৃণমূল দুর্বল। তবে রাজ্য তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘পার্থের বিরুদ্ধে তো যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা দল নিয়েইছে। এর পরেও এক জন বর্ষীয়ান মানুষ সম্পর্কে দলের তরফে অসম্মানজনক কথা বলাটা ঠিক হবে না।’’

তবে রাজ্যের তৃণমূল কর্মীরা মনে করছে শুধু দলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দিলেই হবে না , দল থেকে এই ধরনের নেতাদের সরিয়ে না দিলে শাসক দলকে আরও বেশি খেসারত দিতে হবে । একথা অস্বীকার উপায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রচন্ড পরিমানে অহংকারী ছিলেন, মানুষকে মানুষ বলে বিবেচনা করতেন না । কথায় কথায় অপমানজনক কথাবার্তা বলতেন । তবে ঔদ্ধত্যের দিক থেকে কোনো অংশেই কম নেই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ