অন্যান্য কলকাতা 

বিরোধী দলগুলিকে দোষারোপ না করে বরং নিজের দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে উদ্যোগ নিলে ভাল করবেন মমতা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : সম্প্রতি পর পর কয়েকটি ঘটনা রাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে যে ফেলেছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে অবশ্যই জনমানসে প্রশ্ন উঠছে । ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তাঁর মৃত্যু পর ৪৫ দিন কেটে গেলেও দোষীকে এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি প্রশাসন। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় বলেছিলেন, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই এই মৃত্যু রহস্যের জট কাটানো হবে । ১৫ দিন তো দূরের কথা একমাস কেটে যাওয়ার পরেও কী করে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট করতে পারেনি মমতার প্রশাসন ।

অন্যদিকে, তৃণমূলের বিধায়ক ও নেতারা আনিস খান সম্পর্কে নানা রকম মন্তব্য করে রাজ্যের সচেতন মহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে । আমরা বাংলার জনরব-এর পক্ষ থেকে বারবার বলেছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে কলুষিত করার জন্য তাঁর দলের কিছু নেতা সক্রিয় । সেই কথা অনেকের বিশ্বাস না হলেও আনিস খানের মৃত্যুর পর মমতার কথার সঙ্গে তাঁর দলের মুখপাত্র এবং এক বিধায়কের মন্তব্য ঘিরে এই প্রশ্ন জনমানসে উঠেছে ।

Advertisement

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রামপুরহাটের বগটুইয়ে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তাতে আর যাইহোক মমতার সাদা কাপড়ে দাগ লেগে গেছে । এটা খুব সহজে আর মুছতে পারবেন না মমতা ।শুধু তাই নয় দেশজুড়ে মমতার ভাবমূর্তিতেও কালো দাগ লেগে গেছে। বগটুইয়ের ঘটনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু পদক্ষেপ ভাল ছিল , এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । কিন্ত তারপর থেকে যা ঘটছে তাতে এটা প্রমাণিত হয়েছে বিপুল গরিষ্টতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরও দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব । রামপুরহাট ব্লকের সভাপতি আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আনারুল তো একজন ব্লক সভাপতি , তাঁর নির্দেশে কী পুলিশ প্রশাসন পরিচালিত হয়? এই ঘটনার পরেই হাইকোর্টের নির্দেশে বগটুই ঘটনার তদন্ত সিবিআই করতে শুরু করেছে । সিবিআই এই তদন্তভার নেওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা বলতে শুরু করেছেন ।

এই ধরনের কথাবার্তা মমতার মতো জননেত্রীর কাছে আশা করা যায় না । কারণ মনে রাখতে হবে পশ্চিমবাংলায় যে প্রতিদিন তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন , এর জন্য কোনো বিরোধী দল দায়ী নয়। শাসক তৃণমূল দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই শাসক দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন ! রামপুরহাটের বগটুইয়ে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তা হয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ফলে । এর নেপথ্যে বিরোধী দলের কোনো ষড়যন্ত্র নেই । আর মমতা যত এই ধরনের কথা প্রচার করছেন ততই তিনি জনমানসে হাস্যকর হয়ে উঠছেন ।

 

এদিকে, গতকাল শুক্রবার কলকাতার পার্কসার্কাস সাত মাথা মোড থেকে ‘নো ভোট টু বাবুল’ শ্লোগানকে সামনে রেখে কয়েকটি অরাজনৈতিক সংগঠন মিছিল করতে গেলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয় এবং তাঁদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করে । এই কাজটা কলকাতা পুলিশ না করলে ভাল করত । অন্তত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি এতটা ম্লান হতো না । কারণ, ‘নো ভোট টু বাবুল’ শ্লোগান দিয়ে যারা মিছিল করতেন তাদের দুএকজন বাদে পার্কসার্কাস এলাকায় তাদের কোনো পরিচিত নেই । অথচ এদেরকে বাধা দিয়ে এক লহমায় সমগ্র রাজ্যজুড়ে খবরটি ছড়িয়ে দেওয়া হলো । মুসলিম সমাজেও এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব বিষয়ে বিরোধীদের চক্রান্ত খোঁজেন, কিন্ত গতকাল পার্কসার্কাসে অহেতুক কয়েকজনকে গ্রেফতার করে তিনি কী বার্তা দিলেন ? এলাকার জনমত তো বটেই সমগ্র বাংলা জুড়ে মমতা সম্পর্কে একটা নেগেটিভ প্রচার বৈধতা পেয়ে গেল । আর মিছিল করতে দিলে হয়তো এতটা প্রচার ওরা পেত না । এর নেপথ্যে তো আর বিরোধীদের কোনো ভূমিকা ছিল না ! মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের পুলিশই তো একাজ করেছে । বাবুল সুপ্রিয়কে বালিগঞ্জে প্রার্থী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নিজেই তাঁর কমিটেড ভোট ব্যাঙ্ককে আঘাত করেছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । বালিগঞ্জে বাবুল সুপ্রিয় হয়তো জিতবেন । কিন্ত জিতলে সংখ্যালঘু সমাজে মমতার ভাবমূর্তি অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে , আর হারলে তৃণমূলের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে, যা পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে মনে হয় ।

আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ-দক্ষ-যোগ্য ব্যক্তিদের কোথা্ও গুরুত্ব দেন না । অন্তত পঞ্চায়েত স্তরে সেই নেতারা গুরুত্ব পাচ্ছেন যারা তোলাবাজিতে বেশি দর দিতে পারবেন । ফলে এই ভাগের খেলায় রাজ্য জুড়ে ‘খেলা হচ্ছে’। আর সেই খেলায় বলি হচ্ছে তৃণমূলের কর্মীরাই । বিশেষ করে সংখ্যালঘু কর্মীরা । সিপিএমের ৩৪ বছরের রাজত্বে তার দলের নেতা-সাংসদ-বিধায়কদের নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়নি । অথচ তৃণমূলের সামান্য পঞ্চায়েত প্রধানকেও নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হচ্ছে । এটা মমতাকে ভাবতে হবে । অন্যের দিকে আঙুল তুলে সাময়িক সাফল্য আসতে পারে কিন্ত তাতে সমূলে বিনাশ রক্ষা করা যাবে না । তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত নিজের দল এবং প্রশাসনে স্বচ্ছ এবং দক্ষ লোকদের ঠাঁই দেওয়া । অহেতুক কোনো গণ-আন্দোলনকে পুলিশ দিয়ে ঠান্ডা না করা । তা না করলে আগামী দিনে তৃণমুল কংগ্রেসের অস্তিত্বের সংকট দেখা যেতে পারে । তাই বিরোধীদের নিশানা না করে , নিজের দলে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে সম্মান এবং মর্যাদা দিতে পারলে জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন মমতা ।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ