দেশ 

ধর্মে খ্রিস্টান মন্দিরে ঢুকতে রাজি হননি, সেই অফিসারকে বরখাস্ত করল সেনা আধিকারিক, তোপ সুপ্রিম কোর্টের

শেয়ার করুন

মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে রাজি হননি। নির্দেশ শোনেননি ঊর্ধ্বতন আধিকারিকারিকের। সেই কারণে খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী এক অফিসারকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছিল সেনা থেকে। নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখল দেশের সর্বোচ্চ আদালতও। ওই আধিকারিক সেনায় থাকার ‘অযোগ্য’ বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। (Supreme Court)।

ভারতীয় সেনাপর তৃতীয় ক্যাভালরি রেজিমেন্টের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট, স্যামুয়েল কমলেশন। চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন তাঁকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত নেতৃত্বাধী বেঞ্চ। CJI সূর্যকান্ত বলেন, “কী বার্তা দিতে চাইছেন উনি? সেনার আধিকারিক হয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন উনি। শুধু এই কারণেই ওঁর চাকরি কেড়ে নেওয়া উচিত ছিল। এই ধরনের কলহপ্রিয় লোক কি সেনায় থাকার যোগ্য?” ( Samuel Kamalesan) CJI সূর্যকান্ত আরও বলেন, “হতে পারে গুণী অফিসার উনি। কিন্তু ভারতীয় সেনার অযোগ্য। বর্তমান সময়ে আমাদের বাহিনীর ঘাড়ে কত দায়িত্ব…এই ধরনের জিনিস বরদাস্ত করা হবে না। গুরুদ্বার অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষ জায়গা। উনি যে আচরণ করেছেন, তাতে অন্য ধর্মকে অপমান করা হয় না? এত অহং যে বাকিদের পরোয়া করেন না?” CJI সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি স্য়ামুয়েলকে চাকরি থেকে বরখাস্তর সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন এদিন ক্রিস্টান ধর্মাবলম্বী স্যামুয়েলের দাবি, মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে তাঁকে পুজো করার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা তাঁর ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। কিন্তু তাঁকে বহিষ্কার করে সেনা। যদিও এদিন আদালত জানায়, ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের নির্দেশ অমান্য করেছেন ওই অফিসার। ( Samuel Kamalesan)।

Advertisement

স্যামুয়েলের হয়ে সওয়াল করছিলেন আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ। তিনি বলেন, “প্রত্যেক রেজিমেন্টের সদর দফতরেই একটি ‘সর্বধর্ম স্থল’ রয়েছে। শুধুমাত্র পঞ্জাবের মামনুনেই একটি মন্দির ও গুরুদ্বার রয়েছে। স্যামুয়েল মন্দিরে ঢুকতে অস্বীকার করেন। জানান, মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করা তাঁর ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী। বাইরে থেকে পুষ্প নিবেদন করতে রাজি ছিলেন উনি। ভিতরে ঢুকতে চাননি। আর কারও কোনও সমস্যা হয়নি। শুধুমাত্র একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারিকই শৃঙ্খলাভঙ্গের পদক্ষেপ করেন।” শঙ্করনারায়ণ আরও বলেন, “টার্মিনেশন অর্ডার দেখুন। উনি কলহপ্রিয় নন। সংবিধান প্রত্যেককে ধর্মাচারণের অধিকার দিয়েছে, একই ভাবে অন্য ধর্মাচারণে অংশ না নেওয়ার অধিকারও দিয়েছে। ”

কিন্তু এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বলে, “এই ধরনের কলহপ্রিয় লোককে কি শৃঙ্খলাবদ্ধ সেনা রাখা যায়? দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীতে থেকে এসব করছেন? শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন উনি।” ওই অফিসার যে গর্ভগৃহে ঢুকে পুজো করতে রাজি হননি, তাতে তাঁর সহ-সৈনিকদের কি অপমান হয়নি, এই প্রশ্নও তোলে সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়, “নিজের সৈনিকদের কি অপমান করছেন না উনি? ওঁর এত অহং বোধ যে সৈনিকদের সঙ্গে যাবেন না। প্রত্যেকের নিজ ধর্মাচারণের অধিকার রয়েছে। কেউ আচারানুষ্ঠান পালন করতে বললে, না বলতেই পারেন। কিন্তু ভিতরে ঢুকতে অস্বীকার করেন কী করে?”

 

বিচারপতি বাগচি বলেন, “অনুচ্ছেদ ২৫ অপরিহার্য ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যকে সুরক্ষা প্রদান করে। কিন্তু তা প্রত্যেক ধর্মীয় অনুভূতির জন্য নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের সার্বিক বিশ্বাসকে সম্মান জানাতে হবে। খ্রিস্টধর্মে মন্দির বা অন্য ধর্মীয় স্থানে প্রবেশ নিষিদ্ধ কোথায় বলা আছে?” এতে আইনজীবী ‘বাইবেল’ উদ্ধৃত করে বলেন, “প্রথম আদেশ হল, অন্য কোনও দেবতার উপাসনা নয়। প্রবেশ নিয়ে সমস্যা ছিল না। ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে অংশ নিতে বাধ্য করা হবে বলেই উদ্বেগ ছিল এক্ষেত্রে।”

 

শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মন্দিরে ঢুকতে অসুবিধা নেই বলে ওই অফিসারকে জানান গির্জার পাদরি। তার পরও মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে রাজি হননি স্যামুয়েল। বিচারপতিরা বলেন, “নিজের পাদরির কথাও শুনছেন না উনি। সর্বধর্ম স্থলে যেতে সমস্যা নেই বলে ওঁকে জানান পাদরি। পাদরি বোঝালে, সেটাই মেনে নিতে হয়। ধর্ম কী অনুমোদন করে, কী করে না, তা নিজে ঠিক করা যায় না, তাও আবার ইউনিফর্ম গায়ে থাকা অবস্থায়। ” স্যামুয়েলের আবেদনই খারিজ করে দেয় আদালত।

সে দিল্লি হাইকোর্টের গলাতেও একই সুর ধরা পড়ে। ওই আফিসারকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়। দিল্লি হাইকোর্টের মত ছিল, স্যামুয়েল নিজের ধর্মকে ঊর্ধ্বতন অফিসারের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ