কলকাতা 

Naprajit Mukhopadhyay: পুলিশের ইউনিফর্মকে মানুষের সেবায় কাজ করার চেষ্টা করেছি : নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : পুলিশের ইউনিফর্ম মানুষের সেবা করার জন্য মানুষকে জব্দ করার জন্য নয়। বা সাধারণ মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য নয়। এই মন্তব্য করলেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডাইরেক্টর জেনারেল না পরাজিত মুখোপাধ্যায়।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার এক পাঁচ তারা হোটেলে রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি ও প্রাক্তন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের এক সংবর্ধনা আয়োজন করে অল ইন্ডিয়া লিগাল এইড ফোরাম ।

Advertisement

সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা বলেন, পুলিশকে মানবিক হতে হবে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোকে শুনতে হবে। সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি আমার ৩৭ বছরের কর্ম জীবনে এই কাজটি নিরবে করেছি। তিনি আরো বলেন আমরা যখন আইপিএস হিসাবে নির্বাচিত হই। তারপর প্রশিক্ষণরত থাকার সময় আমাদেরকে ভারত দর্শনে নিয়ে যাওয়া হতো। কখনো কাশ্মীর কখনো নাগাল্যান্ড প্রভৃতি এলাকায়। ওই সময় আমরা নাগাল্যান্ডে গিয়েছিলাম সেখানকার গভর্নর এবং ওই রাজ্যের ডাইরেক্টর জেনারেল পুলিশের সঙ্গে আমরা দেখা করেছিলাম। তিনি একটা কথা বলেছিলেন পুলিশের ইউনিফর্ম বা পুলিশের পোশাক মানুষের সেবা করার জন্য মানুষের উপর অত্যাচার করার জন্য নয়।

উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই রাস্তাঘাটে ঠেলাওয়ালা দেখতে পাই যারা গাড়িতে করে বিভিন্ন মালপত্র বিক্রি করে। সারা দেশেই দেখা যায় কলকাতাও তার ব্যতিক্রম নয় যে, এই ঠেলা ওয়ালাদের নানাভাবে পুলিশ বিরক্ত করে। কিন্তু আমাদের প্রশিক্ষক বলেছিলেন ঠেলা ওয়ালাদেরকে বিরক্ত না করে তাদের সমস্যাগুলোকে শুনে সমাধান করাটা পুলিশের মূল কাজ। না পরাজিত মুখোপাধ্যায় এদিন বলেন আমি আমার কর্মজীবনে এই কাজটি করার চেষ্টা করে গেছি। মানুষের কথা শুনেছি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি আর কতটা পারি নি তা আপনারা বিচার করবেন। চেষ্টা আমি করেছি এটা বলতে পারি।

তিনি এদিন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসাবে যে কাজ করেছেন যেভাবে কাজ করেছেন তারও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। তিনি বলেন আমি যখন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হই তখন অনেকেই রে রে করে উঠেছিলেন এমনকি আমার নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলাও করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব হল মানবাধিকার রক্ষার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হল পুলিশের। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্য তাই বলছে এবং নির্দেশিকাও তাই বলছে। তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব পুলিশ এবং প্রশাসনের। সেই পুলিশের কোন অবসরপ্রাপ্ত কর্তা যদি মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হন তাতে মানবাধিকার যে বেশি করে রক্ষিত হবে, এটা অস্বীকার করা যায় না। আমি মানবাধিকার কমিশনে থাকাকালীন সময়ে এই কাজটি করার চেষ্টা করে গেছি। বটতলা থানায় এক ব্যবসায়ীর পুলিশ হেফাজতের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আমরা তদন্ত করেছিলাম এবং কড়া রিপোর্টও দিয়েছিলাম।

এদিনের সভায় প্রাক্তন পুলিশ কর্তা না পারাজিত মুখোপাধ্যায় কে সংবর্ধনা দেওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে অল ইন্ডিয়া লিগাল এইড ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী, জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, নাপরাজিত মুখোপাধ্যায় এমন একজন পুলিশকর্তা ছিলেন যিনি মাটির সঙ্গে মিশে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। শুধু তাই নয় আর্থো সামাজিক প্রেক্ষাপট বিচার করে তিনি কাজ করতেন যার ফলে তাঁর সাফল্যের হার সবচেয়ে বেশি। আজ আমরা বাংলা জুড়ে যে শান্তি  লক্ষ্য করছি তার নেপথ্যে নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের অবদানকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। একটা সময় আমাদের বাংলার কয়েকটি জেলায় মাওবাদী উপদ্রবে সাধারণ মানুষের জান মালের নিরাপত্তা সংকটের মধ্যে পড়েছিল। সেই সংকটকালীন সময়ে একজন পুলিশকর্তা হিসাবে, যেভাবে বাংলার মানুষকে নিরাপদ এবং শান্তির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে গেছেন তা অবশ্যই স্মরণীয়। বাংলার শান্তি ফেরানোর জন্য অবশ্যই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর উদ্যোগ এবং তারই সহকর্মী হিসাবে রাজ্য পুলিশের প্রধান কর্তা হিসেবে না পরাজিত মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব কম ছিল না।

এদিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা অধীর শর্মা, বিশিষ্ট আইনজীবী সুরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং বিতর্কিত বিচারপতি সি এন কান্নান।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ