আন্তর্জাতিক 

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এক অনির্বাচিত সরকারের ট্রাইবুনাল যে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করছি : শেখ হাসিনা

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব চলাকালীন সময়ে ছাত্রদের লক্ষ্য করে যে নির্মমভাবে গুলি চালানো হয়েছিল তা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার দায় মামলা দায়ের হয়েছিল এবং তাকে মানবতা বিরোধী একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই মামলায় অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলা প্রায় ৩৯৭ দিন ধরে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ শুনানির পর সোমবার হাসিনার বিরুদ্ধে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে সে দেশের আদালত। সাজা শুনে এ বার প্রতিক্রিয়া জানালেন  হাসিনা। একইসঙ্গে হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়ার প্রতিবাদের আগামীকাল বাংলাদেশ জুড়ে বনধের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

রায় ঘোষণার পর লিখিত বিবৃতি দিয়ে হাসিনা দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলির সপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই। বরং তাঁর আমলে মানবাধিকার এবং উন্নয়নমূলক অনেক কাজ হয়েছে। সে জন্য তিনি গর্বিতও। আওয়ামী লীগ নেত্রীর দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই রায় দেওয়া হয়েছে, তা-ও আবার একটি অনির্বাচিত সরকারের অধীনস্থ অবৈধ ট্রাইবুনাল সেই রায় দিয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের রায়ও প্রত্যাখ্যান করেছেন হাসিনা। তাঁর কথায়, ‘‘এই রায় অন্তর্বর্তিকালীন সরকারে থাকা চরমপন্থী ব্যক্তিদের নির্লজ্জতা ও খুনি মনোভাবের প্রতিফলন মাত্র। বাংলাদেশের শেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করতে এবং আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ভাবে ভেঙে দিতে এই কাজ করা হয়েছে।’’

Advertisement

হাসিনা লিখেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে আনা ট্রাইবুনালের সব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করছি। গত বছরের জুলাই-আগস্টে যত জনের মৃত্যু হয়েছে, সে জন্য আমি শোকাহত। কিন্তু আমি কিংবা কোনও রাজনৈতিক নেতা কখনওই কোনও আন্দোলনকারীকে হত্যা করার নির্দেশ দিইনি। আমাকে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগই দেওয়া হয়নি। এমনকি, নিজের পছন্দমতো আইনজীবীও বাছার সুযোগ দেওয়া হয়নি আমাকে। এই ট্রাইবুনাল পক্ষপাতদুষ্ট।’’ হাসিনার দাবি, যে সব বর্ষীয়ান আইনজীবী বা বিচারপতি কোনও না কোনও সময় প্রকাশ্যে পূর্ববর্তী সরকারের পক্ষ নিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকে হয় এক এক করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেছে বেছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মুজিব-কন্যা জানিয়েছেন, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার এই রায় আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। হাসিনা বলেন, ‘‘মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তিকালীন প্রশাসন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে দেশের বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। বিশ্বের কোনও প্রকৃত পেশাদার আইনজীবী বাংলাদেশের ট্রাইবুনালের এই রায় সমর্থন করবেন না।’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ইউনূসের আমলে বাংলাদেশ আরও ‘বিশৃঙ্খল, সহিংস এবং সামাজিকভাবে পশ্চাদ্‌গামী’ একটি শাসনব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, যেখানে পদে পদে নারী ও সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, ভিন্নমতের দমনপীড়ন চলছে। অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। অথচ ক্ষমতায় থাকার জন্য এত দিন ধরে ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্বাচনে দেরি করেছেন ইউনূস। নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগকে। হাসিনা লিখেছেন, ‘‘বৈধ ট্রাইবুনালে উপযুক্ত প্রমাণ-সহ বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে আমি ভয় পাই না। তবে আমি জানি, অন্তর্বর্তী সরকার এই চ্যালেঞ্জ মানবে না। কারণ, তারা জানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা গেলে তারা আমাকে অব্যাহতি দেবে।’’

গত বছর অগস্টে বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের পতন হয়। দেশ ছাড়েন তিনি। এর পর পুনর্গঠিত হয় সে দেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল। হাসিনা সরকারের তৈরি করা ট্রাইবুনালেই শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম মামলার বিচার। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালত এবং থানায় এখনও পর্যন্ত হাসিনার বিরুদ্ধে ৫৮৬টি মামলা হয়েছে। ৩৯৭ দিন ধরে বিচারপ্রক্রিয়া চলার পর সোমবার সাজা ঘোষণা হয়েছে ওই মামলায়। হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। রায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, ‘‘এই আদালত অবৈধ। বাংলাদেশের জনগণ এই রায় প্রত্যাখ্যান করছে। আগামিকাল সারা বাংলাদেশে সকাল-সন্ধ্যা শাটডাউন হবে। যত ক্ষণ না অবৈধ ইউনূস সরকার পদত্যাগ করবে, আমাদের সংগ্রাম ততই তীব্র হবে। একদিন হাসিনা বীরের বেশে বাংলার জনগণের প্রিয় দল হিসাবে ফিরবেন। আমাদের জয় অবশ্যম্ভাবী।’’


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ