কলকাতা 

“প্রত্যেক মহিলার সিঁদুরের প্রতি সম্মান রয়েছে। তাঁরা স্বামীদের থেকে সিঁদুর নেন। কিন্তু আপনি তো সবার স্বামী নন। আপনি কেন আগে আপনার স্ত্রীকে সিঁদুর দেন না?” মমতার প্রশ্নে অস্বস্তিতে বিজেপি

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : অপারেশন সিঁদুরের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরবঙ্গ প্রচারে এসেছিলেন। সেখানে তিনি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে মমতা সরকারকে আক্রমণ করেন একই সঙ্গে বাংলাতেও অপারেশন হবে বলে জানিয়ে দেন সুকান্ত মজুমদার। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ভাষায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেমন অপারেশন সিঁদুর হয়েছে একই রকম ভাবে বাংলাতে অপারেশন হবে।

মোদি সুকান্তের এই বক্তব্য শোনার পরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে রীতিমতো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হুঁশিয়ারি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

তিনি এদিন বলেন “অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। প্রত্যেক মহিলার সিঁদুরের প্রতি সম্মান রয়েছে। তাঁরা স্বামীদের থেকে সিঁদুর নেন। কিন্তু আপনি তো সবার স্বামী নন। আপনি কেন আগে আপনার স্ত্রীকে সিঁদুর দেন না?” মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য পরক্ষণেই বলেন, “আমি দুঃখিত। এটা আমার বলার কথা ছিল না। কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন মুখ খুলতে”।

এদিন আলিপুরদুয়ারের সভায় দাঁড়িয়ে বাংলার সরকারকে ‘নির্মম’ বলেন প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi)। সেই সঙ্গে মুর্শিদাবাদ ও মালদায় মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। এর জবাব দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,“মালদা, মুর্শিদাবাদে হামলা করেছে বিজেপি। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে”। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এক সময় বলতেন চাওয়ালা ছিলেন। চা বেচতেন। এখন বলছেন, সিঁদুর বেচবেন। সিঁদুর এভাবে বেচা যায় না। বাংলার মা বোনেরা সম্মানের সঙ্গে বাঁচেন। তা কি উত্তরপ্রদেশে হয়? অসমে, গুজরাতে, মধ্যপ্রদেশে হয়? উত্তরপ্রদেশের রাস্তায় তো গাড়িতে বসে অশ্লীল ছবি দেখা হয়”।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরো বলেন, “মোদীজির মুখে এসব মানায় না। উনি রাজ্যে এসে বলছেন, বাংলায় অপারেশন সিঁদুর করবেন। তার মানে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে বাংলার মাটি বাংলার মহিলাদের মর্যাদা মিশিয়ে দিয়েছেন। এটা তিনি করতে পারেন? বাংলায় এসে বাংলার মানুষকে, বাংলার মাটিকে অপমান করছেন। বাংলার মহিলাদের অপমান করছেন।”

এদিনের বক্তৃতায় বাংলায় ৬ সঙ্কটের কথা ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে অন্যতম হল, রাজ্যে বল্গাহীন দুর্নীতি চলছে। তার জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বড় বড় কথা বলছেন, বিজেপির রাজ্যে কী অবস্থা? গুজরাতে বসে, মধ্যপ্রদেশে পাকিস্তানকে মদত করছে, সেই ঘটনা বেরিয়েছে। তা নিয়ে কী বলবেন? বাংলায় হলে কী করতেন?”

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তো সমস্ত বিরোধীরা মিলে গোটা দুনিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচার করছেন। আর এখানে আপনি নিজের পাবলিসিটি করে বেড়াচ্ছেন। আগে বলুন পহেলগামের ওই চার জঙ্গি কোথায় গেল? তাদের ধরতে পারলেন?

এখানেই না থেমে, মমতার কড়া আক্রমণ, “আমেরিকা বললে এক মিনিটে চুপ করে যান, আর বড় বড় কথা বলেন? আমাদের এখানে নারী সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। আপনি কী করেছেন ? যারা মহিলাদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করেছে আপনি তাদেরকে বিজয়ীর মতো ঘুরিয়েছেন। আমাদের এখানে যেমন নারীদের নিরাপত্তা আছে, সারা বিশ্বে কোথাও তেমন নেই।”

মোদী আজ অভিযোগ করেছিলেন, বাঙালিরা বাংলার বাইরে গিয়ে কোথাও চিকিৎসা পান না। কারণ কেন্দ্রের আয়ুষ্মান কার্ডের সুবিধা এ রাজ্যে নিতে দেওয়া হয় না। এ প্রসঙ্গে মমতার কটাক্ষ, “আপনি আয়ুষ্মান হোন। ঈশ্বর আপনাকে ১৭৫ বছর বাঁচিয়ে রাখুন, আমরা খুশি হব। কিন্তু আমরা আয়ুষ্মান ভারত করছি না। কারণ এখানে সাধারণ মানুষকে কোনও টাকা দিতে হয় না। আয়ুষ্মান ভারত করতে গেলে তো রাজ্যকে ৪০ শতাংশ টাকা দিতে হতো।”

মুখ্যমন্ত্রী আজ দৃশ্যতই কড়া মেজাজে ছিলেন। রীতিমতো চালিয়ে খেলেন মোদীর বিরুদ্ধে। তিনি বলতে থাকেন, “কেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের প্ল্যানিং কমিশন সরিয়ে দিলেন? কেন গান্ধীজির নাম সরিয়ে দিলেন? আম্বেদকরের নাম, আজাদের নাম ভুলে গিয়েছেন। নীতি আয়োগের বৈঠকের কথা বলছেন?

আমি যখন শেষবার নীতি আয়োগের বৈঠকে গিয়েছিলাম, সেদিন কেন আমার বক্তব্য মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল? সবার জন্য ১০ মিনিট করে সময় বরাদ্দ ছিল। কিন্তু আমি বলার সময় মাত্র চার মিনিটের মধ্যে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা রাজ্য সরকারকে অপমান নয়? এটা একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান নয়? তাহলে কেন যাব আমি সেই মিটিংয়ে? শুধু আমি নয় কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীও তো যাননি, কই সেটা তো বললেন না। আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিদেশে ঘুরে বেড়ান আর অ্যাক্টিং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর এক জনকে বানিয়ে রেখেছেন, যে কোনও কিছু মানে না। কোনও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আপনি মানেন না।”

শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উনি সিঁদুর বেঁচে বেড়াচ্ছেন। মহিলাদের সম্মান করতে শিখুন। সিঁদুর খেলা আমাদের রাজ্যে হয় দুর্গাপুজোর দশমীর সময়। যতদিন আমাদের দল থাকবে ততদিন আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাব। দেশ কারও একার নয়। দেশ আমাদের সবার।”


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ