কলকাতা জেলা 

রাম নবমীর মিছিলে পুষ্প বৃষ্টি এবং লাড্ডু বিতরণ মুসলিমদের, বিজেপি তৃণমূল হিন্দু মহাসভা সব একাকার!

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : হুংকার ছিল রাজ্য জুড়ে অশান্তি করার। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছিলেন রামনবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল হবে। এ রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজ কে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও অন্য কেউ বা অন্য কোন বিজেপি নেতা শুভেন্দুর ধার কাছ দিয়েও হাঁটেন নি, তবু একটু আতঙ্ক ছিল বাংলার মানুষের মধ্যে। রাম নবমীর পুজোকে ঘিরে কোন অশান্তি হবে না তো, আবার বাংলা দেখবে না তো কোন অনাচার অত্যাচার মিথ্যাচার। তেমন কিছু ঘটেনি। শুভেন্দুর পরিকল্পনা কাজেও লাগেনি।

বরং এ রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজের আন্তরিকতায় আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়েছে হিন্দু সমাজ। হাওড়ার বাউরিয়া থেকে শুরু করে রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় রামনবমীর মিছিলে হেঁটেছে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা আর তাদের কাছে জলের বোতল মিষ্টি লাড্ডু ফুলের পুষ্পস্তবক সুরে বরণ করে দিয়েছেন এ রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজ। মালদা থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে এই চিত্র চোখে পড়েছে। বীরভূম যেখানে তৃণমূলের ঘর বলা হয় সেখানেও মুসলমানরা রাস্তায় নেমে এসেছেন লাড্ডু জলের বোতল শরবত এবং পুষ্প বৃষ্টি দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন রামনদীর মিছিলে অংশগ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের।

Advertisement

রবিবার রাজ্য জুড়ে রামনবমী পালন শুরু হয়েছে। কোথায় বিজেপি, কোথায় শাসক তৃণমূলের নেতারা শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। নন্দীগ্রামে রামনবমীর মিছিলে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। খড়্গপুরে কর্মসূচি করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। আবার বীরভূমের সিউড়িতে মিছিলে হেঁটেছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। মালদহের ইংরেজ বাজারে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রামনবমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে শান্তি, সম্প্রীতি রক্ষারও বার্তা দিয়েছেন তিনি।

তেমনই সম্প্রীতির ছবি দেখা গেল বীরভূমের রামপুরহাটে। রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া সকলকেই জল-মিষ্টি দিলেন বগটুইবাসী আকসার, রিয়াজুলেরা। দু’জনেই বলেন, ‘‘সম্প্রীতির বার্তা দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’ ওই কর্মসূচিতে যোগ দেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একই ছবি দেখা গেল মালদহের ইংরেজ বাজারেও। সেখানে রামনবমীর শোভাযাত্রায় পুষ্পবৃষ্টি করলেন রহিম শেখেরা। আলিঙ্গন করে মিষ্টিমুখও করানো হল মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের। রহিম বলেন, ‘‘খুব সুন্দর অনুভূতি, সম্প্রীতির অনুভূতি। এটাই ভারতবর্ষ। আমরা সকলে এক। হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই। আমরা সকলে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চাই।’’

কলকাতায় ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। মিছিলে তাঁর সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরাও হেঁটেছেন।

বিরল দৃশ্য দেখা গেল বীরভূমেরই দুবরাজপুরে। সেখানে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে শোভাযাত্রায় একসঙ্গে হাঁটল তৃণমূল এবং বিজেপি। ‘জয় শ্রীরাম সেবা সমিতি’র আয়োজনে দুবরাজপুরের রামসীতা মন্দিরপ্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বার হয়েছিল। সেই শোভাযাত্রায় হাঁটলেন দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপকুমার সাহা, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক টুটুন নন্দী, বিজেপির দুবরাজপুর শহর সভাপতি দেবজ্যোতি সিংহ। হাঁটলেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়, দুবরাজপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পীযূষ পাণ্ডেও।

হাওড়ার সালকিয়ায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে হাঁটলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমি এলাকার সব ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। আজ ওরা ডেকেছিল। তাই গিয়েছি।’’ এ নিয়ে তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা বিজেপির পাতা ফাঁদ হতে পারে। কারণ এই মিছিলের উদ্যোক্তা ছিলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই। আমরা গৌতম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলব।’’

তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এটাই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে তৃণমূলের নরম হিন্দুত্ব। এবং আরএসএস হিন্দু মহাসভার সঙ্গে গোপন যোগাযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। যেমন সালকিয়াতে মিছিল অংশ নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক গৌতম চৌধুরী সেই মিছিলর আয়োজক ছিল বিজেপি এবং হিন্দু মহাসভা। রামনবমীর মিছিলে বিজেপি হিন্দু মহাসভা এবং তৃণমূল এক হয়ে গেল। এ এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলার রাজনীতিতে বিরাজ করবে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ