আমেরিকায় হাজার হাজার জঙ্গি রয়েছে, ব্যবস্থা নেবই প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
বাংলার জনরব ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পর থেকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন। শপথ নেওয়ার দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন জন্মসূত্রে পাওয়া আমেরিকার নাগরিকত্ব নীতি বাতিল করে দেয়। শপথ নেওয়ার পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা হু এর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে আমেরিকা প্রশাসন। এরপরেই অবৈধ ভাবে আমেরিকায় যারা প্রবেশ করেছে তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক তার পরের তিনি মার্কিন প্রশাসন জানিয়ে দেয় ভারতের কয়েক হাজার অভিবাসীকে বের করে দেয়া হবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হয়েছে।
আর আজ ২৩ শে জানুয়ারি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে প্রথম সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি আজব দাবি করেছেন আমেরিকায় হাজার হাজার জঙ্গি লুকিয়ে রয়েছে।তাঁদের বিরুদ্ধে আগামী দিনে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, তা-ও জানিয়ে রাখলেন ট্রাম্প। ঘটনাচক্রে, ট্রাম্প এমন সময়ে এই মন্তব্য করলেন, যখন অবৈধ অভিবাসনের রুখতে কড়া ব্যবস্থার পথে এগোচ্ছে আমেরিকার প্রশাসন।
বাইডেন প্রশাসনের নীতির সমালোচনা করে আমেরিকা নিয়ে তাঁর আগামী দিনের ভাবনার কথা বোঝাচ্ছিলেন ট্রাম্প। সে সময়েই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কথায় উঠে আসে সে দেশে থাকা ‘জঙ্গি’দের প্রসঙ্গ। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স নিউজ়’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের দেশে হাজার হাজার জঙ্গি রয়েছে। প্রায় দশ হাজার খুনি রয়েছে। তারা স্বাধীন ভাবে আমাদের দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দাবি, এদের মধ্যে অনেকেই ভিন্ দেশ থেকে আমেরিকায় এসেছে। অনেক দেশ নিজেদের এলাকায় অপরাধের হার কমাতে অপরাধীদের আমেরিকায় পাঠিয়ে দিচ্ছে বলেও সন্দেহ ট্রাম্পের। উদাহরণ হিসাবে ভেনিজুয়েলার প্রসঙ্গও টানেন তিনি। ট্রাম্পের দাবি, ভেনিজুয়েলায় অপরাধের হার ৭৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। কারণ, তারা সেখানকার অপরাধীদের আমেরিকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। এ সবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
আমেরিকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে সে দেশের রাজনীতিতে। গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময়ে এই প্রসঙ্গ বার বার উঠে এসেছে। শপথ নেওয়ার আগেও ট্রাম্প জানান, অবৈধ ভাবে যাঁরা আমেরিকায় প্রবেশ করেছেন, তাঁদের সকলকে ফেরত পাঠাবেন তিনি। একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেন, কোনও বিদেশি অপরাধচক্রকে আমেরিকায় বরদাস্ত করা হবে না। শপথের আগে ওই বক্তৃতায় ট্রাম্প জানান, ভিন্ দেশ থেকে কিছু অপরাধচক্র আমেরিকায় এসেছে। সেগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের বার্তা দেন তিনি।
চুরি-ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় করতে নতুন আইন আনার পথে এগোচ্ছে আমেরিকা। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার আমেরিকার সেনেটে এই সংক্রান্ত বিল পাশ হয় এবং বুধবারের মধ্যে হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভ্সেও বিলটি পাশ হয়ে যায়। এ বার সেটি যাচ্ছে ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সইয়ের জন্য। এই আবহে সে দেশে ‘জঙ্গি’দের থাকা নিয়ে মন্তব্য করে অবৈধ অভিবাসন বিতর্ক আরও উস্কে দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
অবৈধ অভিবাসন বিতর্ক ছাড়াও ‘ফক্স নিউজ়’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুন নিয়েও বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেন তিনি। আমেরিকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা সংস্থা ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা)-রও সমালোচনা করেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্য, তিনি চান প্রতিটি প্রদেশকে এমন ভাবে সক্ষম করতে তুলতে, যাতে তারা আঞ্চলিক সমস্যাগুলি নিজেরাই সমাধান করতে পারে।
গত বছরে বাইডেন প্রশাসন চিনা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ‘টিকটক’ আমেরিকায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার জন্য আইন পাশ করে। তা নিয়ে আইনি লড়াইও হয়। তবে টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞার আইন বহালই রেখে দেয় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই আশ্বস্ত করেন, আমেরিকায় টিকটকের পরিষেবা চালু থাকতে কোনও সমস্যা হবে না। ‘ফক্স নিউজ়’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের বক্তব্য, টিকটকে তরুণ ও কিশোরেরা মজার মজার ভিডিয়ো দেখে। ছোটদের উপর নজরদারি করা কি চিনের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? তিনি বলেন, “চিন আপনার কম্পিউটার বানাচ্ছে, মোবাইল বানাচ্ছে, সেটি আরও বেশি ভয়ের কারণ নয় কি?”