দেশ 

ডেপুটি স্পিকার পদ ছাড়তে নারাজ বিজেপি, ১৯৪৬ সালের পর স্পিকার পদে নির্বাচন!

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : স্বাধীনতার পর এই প্রথম লোকসভার স্পিকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঠিক হতে চলেছে। এতদিন ধরে বিরোধীপক্ষ এবং শাসক পক্ষ সর্বসম্মতভাবে স্পিকার নির্বাচন করত। এরফলে দুপক্ষের সর্বসম্মতির ভিত্তিতে স্পিকার নির্বাচিত হতেন। এবার অর্থাৎ ২০২৪ সালে অষ্টাদশ লোকসভায় প্রথম দেশে স্পিকার নির্বাচন হতে চলেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোট এবারও ওম বিড়লাকে প্রার্থী করেছে। I.N.D.I.A জোটের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে কংগ্রেসের কে সুরেশকে, যিনি আট বারের সাংসদ। ১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম দেশে স্পিকার নির্বাচন হতে চলেছে। এতদিন এক ব্যক্তিকে সমর্থন করতেন সব পক্ষই। (Lok Sabha Speaker Election)।

স্পিকার নির্বাচন ঘিরে যে টানাপোড়েন তৈরি হতে চলেছে, তা টের পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরেই। স্পিকার পদে তাদের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন এক এক করে বিরোধীদের দ্বারস্থ হচ্ছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজনাথ সিংহ এবং কিরেণ রিজিজুকে বিরোধীদের সম্মতি আদায়ের কাজে নামানো হয়। পাল্টা বিরোধীদের তরফে ডেপুটি স্পিকার পদের দাবি জানানো হয়, যা নিয়ে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি বিজেপি-র তরফে। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত সংসদীয় রীতি অনুযায়ী ডেপুটি স্পিকারের পদটি বিরোধীদেরই প্রাপ্য ছিল। কিন্তু ২০১৪ শরিক AIADMK-র এম তাম্বিকে ডেপুটি স্পিকার নিযুক্ত করে বিজেপি। ২০১৯ সালে পদটি ফাঁকা রাখা হয়েছিল। এবার চাপ বাড়াতে শুরু করে বিরোধীরা।

Advertisement

এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালেই বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সরব হন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। তিনি জানান, সোমবার বিকেলে মল্লিকার্জুন খড়্গেকে ফোন করেন রাজনাথ সিংহ। তাঁদের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন চেয়ে দরবার করেন। পাল্টা ডেপুটি স্পিকারের দাবি জানালে, আলোচনা করে জানাবেন বলেছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে কোনও ফোন আসেনি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধীদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমর্থন চেয়ে বার বার যে বুলি আওড়াচ্ছেন, তা অর্থহীন, আসলে ভিতরে ভিতরে অন্য চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেন রাহুল। মোদি দেশের সামনে এক কথা বলছেন, ভিতরে ভিতরে আর এক কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁদের নেতাদের অপমান করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অখিলেশ যাদব, তৃণমূল নেতৃত্বও এ নিয়ে একমত পোষণ করেন। বরাবর ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদের দেওয়ার রীতি হলেও, মোদি সরকার সংসদীয় সেই নীতি মানছেন না বলে অভিযোগ করেন। যদিও রাজনাথের দাবি, কাল থেকে খড়্গের সঙ্গে তিন বার কথা হয়েছে তাঁর।

স্পিকার নির্বাচন নিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূস গয়াল বলেন, “সকালে রাজনাথ সিংহ মল্লিকার্জুন সিংহের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কে সি বেণুগোপাল কথা বলবেন, তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান খডড্গে। কিন্তু টিআর বালু এবং কেসি বেণুগোপালের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, সেই আগের মানসিকতা নিয়েই চলতে চাইছেন, আধিপত্য কায়েম করতে চাইছেন অধিবেশনে। প্রথমে ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের দিতে হবে, তবে সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়। এই ধরনের রাজনীতি নিন্দনীয়।”

স্পিকার পদে মনোনয়ন জমা দিয়ে কে সুরেশ বলেন, “আমি মনোনয়ন জমা দিয়েছি। এটা দলের সিদ্ধান্ত, আমার নয়। লোকসভার কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। শাসকদল থেকে স্পিকার নির্বাচিত হন, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার। ডেপুটি স্পিকার পদটির উপর অধিকার রয়েছে আমাদের। কিন্তু ওরা ছাড়তে নারাজ। আজ সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। কোনও সাড়া মেলেনি। তাই আমরা মনোনয়ন জমা দিলাম।” এর আগে লোকসভার সবচেয়ে বেশিবারের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও কে সুরেশকে প্রোটেম স্পিকার করা হয়নি। এবার সরাসরি স্পিকার পদে মনোনয়ন জমা দিলেন।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ