India-Canada Relationship : খালিস্তানপন্থী নেতার হত্যা নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের নেপথ্যে কী আমেরিকা সহ একাধিক দেশের মদদ ছিল ?
বাংলার জনরব ডেস্ক : কানাডায় এক খালিস্তানপন্থী শিখ নেতার হত্যার জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরাসরি এই হত্যার জন্য ভারতকে নিশানা করেন । আর এরপরেই দুই দেশের বন্ধুত্ব এখন তলানীতে ঠেকেছে । একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে । তবে প্রথম থেকেই মনে করা হচ্ছিল কানাডার প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এই ঘটনার জন্য ভারতকে নিশানা করেছেন এন নেপথ্যে আমেরিকা সহ একাধিক সুপার পাওয়ার দেশ রয়েছে । এই টানাপড়েনের মধ্যে আমেরিকার এক শীর্ষ কূটনীতিকের মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গেল। কানাডায় নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, খলিস্তানপন্থী শিখ নেতার হত্যায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান করেছে পাঁচটি দেশ। কূটনৈতিক স্তরে এই পাঁচ দেশ ‘পাঁচ চোখ’ বলেই পরিচিত।
সাক্ষাৎকারে আমেরিকার ওই কূটনীতিক বলেন, “পাঁচ চোখের মধ্যে বিনিময় করা গোয়েন্দা তথ্য কানাডাকে দেওয়া হয়েছে।” এই তথ্য প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর বিবৃতিকে ‘সহায়তা’ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পরে সাক্ষাৎকার সম্প্রচারক সংস্থাটির তরফে জানানো হয় যে, আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর দাবি খারিজ করে দিয়েছেন কোহেন। সম্প্রতি ওই সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কানাডা খলিস্তানি শিখ নেতার ‘হত্যা’ নিয়ে ভারতকে প্রকাশ্যে নিন্দা করার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু সেই আর্জি নাকি খারিজ করে দেয় বাইডেন প্রশাসন। প্রসঙ্গত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ড, ব্রিটেন এবং আমেরিকা— এই পাঁচ দেশ গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানের জন্য একটি জোট গঠন করেছে। এই পাঁচ দেশকে একত্রে ‘পাঁচ চোখ’ বলা হয়।
জুন মাসে খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ)-এর প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরের মধ্যেই গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনার তদন্তে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকা ছিল বলে কানাডার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে সোমবার দাবি করেন ট্রুডো। নিজ্জর খুনের ঘটনায় দায় অস্বীকার করে ভারত। ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতির বিরোধী শক্তিকে কানাডা মদত দিচ্ছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে অভিযোগ করা হয়। বুধবার সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়, ট্রুডো সরকারের মদতে অন্তত ২১ জন কট্টরপন্থী খলিস্তানি নেতা কানাডায় আশ্রয় পেয়েছেন। তাঁরা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সে দেশের ভারতীয় হাই কমিশন-সহ বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রগুলিতে হাঙ্গামার ছক কষছেন বলেও ওই খবরে দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরে কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধিদের তরফ থেকে ট্রুডো সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যা আমি সোমবার বলেছিলাম, সেই অভিযোগই পুনরুচ্চারণ করছি। কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিককে হত্যায় ভারত সরকারের এজেন্টরা জড়িত, এমনটা মনে করার বিশ্বাসযোগ্য কারণ রয়েছে।” মোদীর সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি উঠেছে, এমনটা জানিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার সঙ্গে (ভারতের) প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি এবং খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আমি কোনও রকম শর্ত ছাড়াই আমার উদ্বেগের বিষয়গুলি জানিয়েছি।”
এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবারেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, “হ্যাঁ, অভিযোগগুলি বৈঠকে তুলেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেগুলি খারিজ করে দেন।” অভিযোগের প্রেক্ষিতে কানাডা সরকার ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য’ দিলে বিষয়টি দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
তবে আমেরিকার এক রাষ্ট্রদুতের এই ধরনের মন্তব্যের পর একথা স্পষ্ট হয়েছে আমেরিকা সহ একাধিক দেশ কানাডার প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের কথা বলার জন্য বলেছিলেন অথবা এদের সঙ্গে কথা বলার পরেই জাস্টিন ট্রুডো এই মন্তব্য করেছিলেন ।