দেশ 

অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবী ভাষণে নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ এর লড়াই ঠিক করে দিলেন, কংগ্রেস বনাম বিজেপি

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম: নিজের সরকারের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গতকাল সন্ধ্যায় লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রায় এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট ধরে যে, ঐতিহাসিক ভাষণ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিলেন তা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে এবার মোদীজি কংগ্রেসকে ভয় পাচ্ছেন। কারণ এই এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট ভাষণের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নষ্ট করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে। কংগ্রেস নাকি দেশকে কাদের কিনারায় এসে দাঁড় করিয়েছে সেটা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।

৫৬ ইঞ্চির বুকের ছাতি যার সেই নরেন্দ্র মোদি যেভাবে ক্রমাগত কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন দেড় ঘন্টা ধরে তাতে মনে হচ্ছিল যে কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেনি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদী অনাস্থা এনেছে। অনাস্থা প্রস্তাবের নিয়ম হলো যে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয় এবং যে বিষয় নিয়ে আনা হয় সেটাকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে তার উত্তর দেওয়া। রাহুল গান্ধী পরশুদিন বলেছিলেন যে হনুমান লঙ্কা পোড়াইনি, লঙ্কা পুড়েছিল রাবণের অহংকারের কারণে । তার উত্তরে নরেন্দ্র মোদী যা বললেন সেটা যুক্তি হতে পারে কিন্তু এখানে হাস্যকর বলে মনে হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য হল কংগ্রেস তার অহংকারের কারণে ৪০০ আসন থেকে ৪০ আসনে পৌঁছেছে। কিন্তু রাহুল গান্ধী যে প্রশ্ন রেখে গেছে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি দেশের প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

রাহুল পরশুদিন কি বলেছিলেন? রাহুল পরশুদিন বলেছিলেন যে মনিপুরে প্রতিদিন ভারত মাতা খুন হচ্ছে। মণিপুরে প্রতিদিন হিন্দুস্তান খুন হচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রায় দেড় ঘন্টা পর মনিপুর প্রসঙ্গ নিয়ে এলেন যখন লোকসভা বিরোধী শূন্য হয়ে গেছে। বিরোধীদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনিপুর নিয়ে কিছু বলুন তা না করে জহরলাল নেহেরু থেকে শুরু করে ইন্দিরা হয়ে তিনি যা বললেন তাতে আর যাই হোক মনিপুরের প্রসঙ্গটা এলো না। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে মনিপুরে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলবেন! আর ঠিক আগের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য সভায় দাঁড়িয়ে যা বলেছেন তাতে আর যাই হোক সেটাও মনিপুরের ব্যাখ্যা নয়।

রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলেছিলেন? রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা হয়েছে দেশের ৩ প্রধানমন্ত্রীর আমলে। জহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর আমলে। কিন্তু সংখ্যা পরিসংখ্যান বলছে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর এবং তাকে কেন্দ্র করে নরসিমা রাও এর আমলে সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা হয়েছিল তা নিয়ে নীরব কেন অমিত শাহ?

যাইহোক গতকালের নরেন্দ্র মোদির ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে তিনি যা বলেছেন সবটাই কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন এমনকি কংগ্রেসের পরিবার তন্ত্রকেও তিনি কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি। কিন্তু জনতার যে প্রশ্ন মনিপুরের সহিংসতা কবে কমবে? তা নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রী দেননি। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শুরু করেছিলেন অধীর চৌধুরীকে লক্ষ্য করে তিনি বলেছিলেন যে সংসদে যখনই কোন অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে তখনই বিরোধী দলের নেতা সেই অনাস্থা প্রস্তাবের সূচনা করেছেন কিন্তু এক্ষেত্রে অধীর চৌধুরীকে সূচনা করতে দেয়নি কংগ্রেস। তাহলে কি কলকাতা থেকে ফোন এসেছিল?

যাই হোক এই কটাক্ষ তৈরি করে নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের ভেতরের অভ্যন্তরীণ লড়াইকে উসকে দিলেও বা বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার ভেতরের গন্ডগোলকে সামনে আনলেও মূল বিষয় থেকে তিনি এড়িয়ে যে গেছেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। নরেন্দ্র মোদির প্রথম থেকে এবং শেষ পর্যন্ত যেভাবে কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেছেন তা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে আগামী দিনে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির লড়াই হবে অন্যরা সব ব্রাত্য।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ