সংখ্যালঘু দফতর থেকে গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দিয়েই কী মমতা এ রাজ্যের বাঙালি মুসলমানদের মন পাবেন! নাকি সমস্যা গভীরে! দয়া করে সমস্যার গভীরতা উপলব্ধি করুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! সমস্যা ঠিক কোথায়? জানতে হলে ক্লিক করুন
সেখ ইবাদুল ইসলাম : শেষ পর্যন্ত রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীকে সরিয়েও এ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের মন পাওয়া যাবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কে তাদের মন-মানসিকতা সম্পর্কে যে ধারণা আমাদের রয়েছে তা থেকে স্পষ্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর কোনভাবেই এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন তিনি পাবেন না। কারণ ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি এবং তার দল যেভাবে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজকে তাচ্ছিল্য করেছেন অবহেলা করেছেন সে কথা এই রাজ্যের সাধারণ মুসলমানরা ভুলে যায়নি।
একজন অবাঙালি মুসলমানকে রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী করে কার্যত এই রাজ্যের ৯৮% বাঙালি মুসলমানকে অপমান করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। রাজ্যের মন্ত্রী তো কোন ক্ষমতা ছিল না মূল ক্ষমতা যার হাতে এই রাজ্যের যিনি সংখ্যালঘু দফতরের প্রধান সচিব তিনি এ রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। তাকে কেউ দুবার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলে তিনি রেগে যান, এইরকম একজন অফিসারকে সংখ্যালঘু দফতরের দায়িত্ব দিয়ে রাখলে এ রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়ন দেখভাল করার জন্য আলাদা করে সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করা হচ্ছে। বাংলার জনরব বেশ কয়েক মাস আগে দাবি করেছিল ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ যদি গঠিত হয় তাহলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদ কেন গঠিত হবে না! এই আবেদনে মান্যতা দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী এই পর্ষদ তৈরি করছে বলে জানা গেছে। তবে আবারো বলছি এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমানদের মন পাওয়াটা খুব সহজ ব্যাপার নয়।
২০০৬ সালে সাচার রিপোর্ট সামনে আসার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার একের পর এক সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। বেশি কথা বলেননি, নীরবে কাজ করে গেছেন বুদ্ধদেব সরকার। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে এম এস কে এস এস কে জেলায় জেলায় সংখ্যালঘু ভবন তৈরি করার উদ্যোগ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার নিয়েছিল এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এক কথায় বলা যেতে পারে ২০০৬ এর সাচার রিপোর্ট সামনে আসার পর বাম সরকার এই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য যে ছুট দিয়েছিল যে উন্নয়নের জোয়ার এনেছিল তার সিকিভাগ উন্নয়নের জোয়ার আনতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজকে অবহেলা করেছে তাচ্ছিল্য করেছে এবং বাঙালি মুসলিম সমাজের যারা তরুণ ছেলে মেয়ে আছে তাদের সঙ্গেও প্রতিনিয়ত তাচ্ছিল্য এবং অবহেলা করে চলেছে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা স্টাইপেন্ড পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানীকে সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে রাখতে হবে এই রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে ৯৮% বাঙালি মুসলমান সেই বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থে কাজ করতে হলে বাঙালি সমাজ থেকে হিন্দু-মুসলমান উভয় সমাজ থেকেই অফিসার নিয়োগ করতে হবে। যারা এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজকে যথাযথ মর্যাদা দেবে, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবে। নাহলে নবান্নে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, বাঙালি মুসলমান হওয়ার অপরাধে বাইরে বসে থাকতে হবে অফিসাররা খোশ গল্পে মেতে থাকবে এটা চলতে পারে না।
বাঙালি মুসলিম ভোট ব্যাংক খুব সহজে মমতার ফিরবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সাগর দিঘিতে যে জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে সেই জলোচ্ছ্বাস এর প্রভাব সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে অর্থাৎ খুব সহজে বাঙালি মুসলিম ভোটকে মমতার অনুকূলে আনা খুব কঠিন হবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সময় এখনো আছে তিনি বর্তমান তৃণমূলের মুসলিম নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ মুসলিম নেতাদেরকে তুলে এনে যদি তাদেরকে সামনে রাখেন তাহলে আগামী দিনে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজ মমতার দিকে খানিকটা ঝুঁকতে পারে ।তা নাহলে গোলাম রব্বানী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী তাজাম্মল হোসেনদের দিয়ে আর যাই হোক এ রাজ্যের বাঙালি মুসলিম ভোট যে ফিরবে না তা হলফ করেই বলা যায়। তবে একটা ভালো উদ্যোগ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েছেন সংখ্যালঘু দফতর তিনি নিজের হাতে রেখেছেন যেটা অবশ্যই রাখার প্রয়োজন ছিল। সবশেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ সংখ্যালঘু দপ্তরের ভেতরে বসে থাকা বাস্তু ঘুঘুদের হাত থেকে বাঙালি মুসলমানদের উদ্ধার করুন।