অন্যান্য কলকাতা 

After Sagardighi By Election Result:২৪ মার্চ ফুরফুরায় উন্নয়ন পর্ষদ অফিসের উদ্বোধন ! নওশাদ সিদ্দিকীকে ৪২ দিন জেলে রাখার পর উন্নয়ন পর্ষদের অফিস উদ্বোধন করলে কি বাঙালি মুসলিমদের মন পাওয়া যাবে?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম: সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল কংগ্রেস হেরে যাওয়ার পর, রাজ্যের মুসলিমদের মন পেতে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আগামী ২৪ শে মার্চ ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদের কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হবে ফুরফুরা শরীফে। বেশ কয়েক বছর আগে ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হলেও এর কোন অফিস ফুরফুরা সংলগ্ন এলাকায় ছিল না। মূলত শ্রীরামপুর থেকে কাজ চালানো হতো। আগামী ২৪ শে মার্চ ফুরফুরা গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরের পাশেই এই অফিসের উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে নওশাদ সিদ্দিকীকে ৪২ দিন জেল খাটানোর পরে ফুরফুরা শরীফের মন পাওয়া কি সম্ভব হবে? বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, জুতো মেরে গরু দান! যেভাবে যে কায়দায় পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীকে ৪২ দিন ধরে জেলে রাখা হয়েছিল তার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণবঙ্গের মুসলিম ভোট যে নিজের অনুকূলে আনতে পারবেন না তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের বোঝা উচিত ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদের অফিস উদ্বোধনের মাধ্যমে এই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের মন পাওয়া যাবেনা। তাই যদি হতো তাহলে ২০১১ সালের আগে বামফ্রন্ট সরকার এই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের স্বার্থে একাধিক প্রকল্প এনেছিল। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় সংখ্যালঘু ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল বামেরা তা সত্ত্বেও এই রাজ্যের মুসলিমরা বামফ্রন্টকে ভোট দেয় নি।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে খুব ভালোভাবেই জানেন এই রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট যে তৃণমূলের হাতছাড়া হচ্ছে তার নেপথ্যে শুধুমাত্র একটি কারণ নেই বেশ কয়েকটি কারণ বিদ্যমান রয়েছে। বাঙালি মুসলিম সমাজের প্রতি বিদ্বেষ তাচ্ছিল্য এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজের সাধারণ মানুষ কলকে পান না এটা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন না? রাজ্যের নির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেসের কোন বিধায়ক সংখ্যালঘু দফতরের কোন সচিবকে অনুরোধ করলে যেহেতু বাঙালি মুসলিম বিধায়ক অনুরোধ করেছেন সেজন্য সে কাজটা করার কোন যুক্তি থাকে না ওই আধিকারিকের। এটা কি জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! ফুরফুরা শরীফ সংখ্যালঘুদের একটা বিশেষ জায়গা হতে পারে কিন্তু সার্বিক সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন না করলে বাঙালি মুসলিম ভোট তৃণমূলে যে ফিরবে না। সে ব্যাপারে একজন শিশুও বলে দিতে পারে!

তাই ফুরফুরা শরীফে উন্নয়ন পর্ষদের দফতর খুললেই হবে না এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন কমিটি থেকে শুরু করে শাসকদলের বিভিন্ন কমিটিতে বাঙালি মুসলমানদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে। সাংসদ বিধায়ক যেসব বাঙালি মুসলমান রয়েছেন তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে তা না করে ফুরফুরা শরীফে অফিস উদ্বোধন করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুসলিম ভোট ব্যাংকে আরো বেশি ভাঙ্গন ধরবে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় মুসলিম নেতা আব্দুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে যে আচরণ তৃণমূল নেতৃত্ব করে চলেছেন তা কি রাজ্যের সংখ্যালঘুরা ভুলে যাবেন!

এক কথায় বলা যেতে পারে ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদের দপ্তর ফুরফুরায় আছে কি কলকাতায় আছে তা নিয়ে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমানদের কোন ভাবনা নেই। বাঙালি মুসলমানরা মমতা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করে সম্মান প্রত্যাশা করে ভালো কাজের প্রত্যাশা করে মর্যাদার। সেটা কি বাঙালি মুসলমানরা মুসলমানদের দিতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! সেই প্রশ্নই এখন সামনে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আত্মসমালোচনা করে ভাবতে হবে এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজকে তিনি কি দিতে পেরেছেন?

 

 

সাগরদিঘি উপনির্বাচনে শাসকদলের বিপর্যয়ের পরপরই ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বদল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার নতুন ভবনও পেতে চলেছে পর্ষদ। এত দিন পর্ষদের কাজকর্ম পরিচালনা হত শ্রীরামপুরের দফতর থেকে। এ বার ফুরফুরা শরিফেই উদ্বোধন হবে নতুন দফতরের। এই নতুন ভবনের সঙ্গে অবশ্য সাগরদিঘির ফলাফলের কোনও সম্পর্ক মানছে না শাসকদল।

২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই হুগলি জেলার ফুরফুরা শরিফের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই পর্ষদের অফিস করা হয়েছিল শ্রীরামপুরে। সেই অফিসে বসে কখনও দায়িত্ব সামলেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কখনও জেলাশাসক, কখনও আবার ফিরহাদ হাকিম। সম্প্রতি ফিরহাদের থেকে পর্ষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব মমতা তুলে দিয়েছে আদি সপ্তগ্রামের প্রবীণ বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের হাতে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর, ফুরফুরা শরিফে নতুন অফিসবাড়ি তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করে ফেলার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। তবে দ্রুত কাজ এগোনোর সঙ্গে সাগরদিঘির নির্বাচনী ধাক্কা বা ‘সংখ্যালঘু মন ফেরানোর চেষ্টা’র কোনও সম্পর্কের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন শাসকদলের নেতারা। বিধায়ক তথা পর্ষদ চেয়ারম্যান তপনের কথায়, ‘‘অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা হয়ে ছিল। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগে। এর সঙ্গে ভোটের হিসেব জোড়া অর্থহীন।’’

ফুরফুরা শরিফ গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরের পাশেই তৈরি হচ্ছে নতুন ভবন। নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। আগামী ২৪ মার্চ পর্ষদের বৈঠকে নতুন দফতরের উদ্বোধন নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশ কয়েক বার ফুরফুরা শরিফে ঘুরে এসেছেন নতুন চেয়ারম্যান তপন। আলাদা করে কথা বলেছেন পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির সঙ্গে।

যে হেতু ফুরফুরা শরিফে এত দিন পর্ষদের কোনও কার্যালয় ছিল না, তাই চেয়ারম্যানকে যাবতীয় কাজ পরিচালনা করতে হত শ্রীরামপুর থেকেই। নতুন এই দফতরটি চালু হয়ে গেলে সেখান থেকেও ফুরফুরার উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজকর্ম চলতে পারবে। নিজের দায়িত্ব ও নতুন অফিস প্রসঙ্গে তপনের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই আমার প্রাথমিক লক্ষ্য ফুরফুরা শরিফের উন্নয়ন। নতুন অফিস তৈরি হয়ে গেলে সেখান থেকে কাজকর্ম পরিচালনা করতে অনেক সুবিধা হবে। তবে শ্রীরামপুরের অফিসটিও রেখে দেওয়া হচ্ছে। যে হেতু প্রশাসনিক সব দফতর ও বিভাগ শ্রীরামপুরের কাছাকাছি, তাই সেখান থেকেও উন্নয়ন পর্ষদের অন্য কাজকর্ম হবে।’’


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ