দেশ 

ত্রিমুখী লড়াইয়ে বরাত জোরে বিজেপির জয় ত্রিপুরায়, লোকসভা নির্বাচনে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখাতে পারবে না বিজেপি

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : ত্রিমুখী লড়াইয়ের জেরে বিজেপি ত্রিপুরাতে যেভাবে সাফল্য পাবে বলে ভেবেছিল সেইভাবে সাফল্য পায়নি। বাম কংগ্রেস জোট ত্রিপুরা মোথা এবং বিজেপি মূলত এই তিন দলের মধ্যেই ২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই হয়েছে। ত্রিপুরা ল্যান্ড এর দাবিতে আন্দোলনরত প্রদ্যুৎ দেব বর্মনের ত্রিপুরা মোথা বাম কংগ্রেসের জয় কে অনেকটাই আটকে দিতে পেরেছে। অমিত শাহ যে ত্রিপুরা মোথা কে নানা ভাবে কটাক্ষ করেছিলেন সেই ত্রিপুরা মোথার জন্যই ত্রিপুরাতে জয় পেল বিজেপি। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ত্রিপুরা মোথার মূল জনসমর্থন কুড়িটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে থাকলেও অর্থাৎ জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে ত্রিপুরা মোথার জনসমর্থন অনেকটাই রয়েছে অন্যদিকে এই দলটি বাঙালি অধ্যুষিত ২২ টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল। নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে কম করে দশটি আসনে ত্রিপুরা মোথার জন্যই হেরে গেছে বাম কংগ্রেস জোট।

যদি ত্রিপুরা মোথা এই ২২ টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী না দিত তাহলে হয়তো ফল উল্টে যেতে পারত। যাইহোক শেষ পর্যন্ত জিতেছে বিজেপি দল। তারা ৩২ টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে তাদের জোট সঙ্গী একটি আসন পেয়েছে। মোট ৩৩ টি আসন বিজেপির দখলে রয়েছে। একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই ত্রিপুরাতে বিজেপি দলের ভাঙ্গন যেকোনো সময় ঘটতে পারে তাতে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে কারণ মাত্র তিনটি আসনের তফাৎ নিয়ে বিজেপি এবার সরকার গড়তে চলেছে।

Advertisement

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই ২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনের ত্রিপুরার ফল বলছে বিজেপি ভালো নেই। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্য থেকে দুটি লোকসভা আসন বিজেপি জিততে পারবে না একথা এখন থেকে হলফ করে বলে দেওয়া যায়। কারণ বিজেপির যেমন ভোট শতাংশ কমেছে উল্টোদিকে আসন সংখ্যা ও কমেছে।

যে কয়েকটি আসনে জিতে তারা ক্ষমতায় এসেছে সেগুলি জয়ী হয়েছে মূলত বিরোধী দল গুলির ভোট ভাগাভাগির অংকে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাঙালি অধ্যুষিত লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি যে খুব ভালো ফল করতে পারবে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে জনজাতি এলাকায় যে এবারও প্রদ্যুৎ দেব বর্মনের ত্রিপুরা মোথা জিতবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সব মিলিয়ে ত্রিপুরা ভোটের ফল নিয়ে বিজেপির উৎসাহিত হওয়ার মতো কিছু নেই একদিকে প্রায় পাঁচ শতাংশ ভোট কমে গেছে অন্যদিকে যে কটি আসন জিতে তারা ক্ষমতায় এসেছে তার মধ্যে অধিকাংশই ভোট কাটাকাটির অংকে ক্ষমতায় এসেছে। বিরোধী দল গুলোর ভোট যদি যোগ করা হয় তাহলে দেখা যাবে বিজেপির চেয়ে তারা অনেক বেশি ভোট পেয়েছে।

গদি মিডিয়া যেভাবে নরেন্দ্র মোদীকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেতা বলে দাবি করছে তা সঠিক নয়। মনে রাখতে হবে ত্রিপুরাতে এককভাবে ক্ষমতা এসেছে বিজেপি এটা ঠিকই কিন্তু নাগাল্যান্ড বা মেঘালয়ে সেভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি মেঘালয়ের মাত্র দুটি আসন পেয়েছে বিজেপি । ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে মেঘালয়ে সবচেয়ে ভালো ফল করেছিল কংগ্রেস কিন্তু কংগ্রেসকে ক্ষমতার বাইরে রাখার উদ্দেশ্যে বিজেপি বিধায়ক তিনে যেভাবে সরকার গঠন করেছিল তা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জা বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। সব মিলিয়ে এ কথা বলা যেতেই পারে বিজেপির ফলকে যেভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে সেটা আসলে ঠিক নয় বিজেপি সেভাবে ভোট হাসিল করতে পারেনি বা জনসমর্থন হাসিল করতে পারেনি।

৬০ সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভায় বিজেপি এ বার ৫৫টিতে লড়ে ৩২টি আসনে জিতল। সহযোগী আইপিএফটি ৬টি লড়ে মাত্র ১টিতে। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ ভোট। সঙ্গী আইপিএফটি এ বার ভোট পেল মাত্র ১.২ শতাংশ। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছে বিজেপি জোটের।

২০১৮ সালের সেই বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরার ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫১টি লড়ে ৩৬টিতে জিতেছিল বিজেপি। পেয়েছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট। তাদের সহযোগী জনজাতি দল আইপিএফটি ৯টিতে প্রার্থী দিয়ে ৮টিতেই জেতে। ভোট পেয়েছিল প্রায় ৭.৪ শতাংশ। আড়াই দশক শাসন চালানোর পরে মাত্র ১৬টি বিধানসভা আসনে জয় পায় বামেরা। গত জুনের উপনির্বাচনে হাতছাড়া হয় তারও একটি আসন। অন্য দিকে, ওই উপনির্বাচনে আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রটি বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিজেপি মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন।

গত দেড় বছরের বিজেপির চার জন বিধায়ক দল ছেড়েছিলেন। আইপিএফটির অধিকাংশ বিধায়কই যোগ দিয়েছিলেন রাজপরিবারের বংশধর প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের গড়া নয়া জনজাতি দল তিপ্রা মথায়। ২০২১ সালের এপ্রিলে ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (এডিসি) নির্বাচনে বিজেপি-আইপিএফটি জোটকে ধরাশায়ী করে জয়ী হয়েছিল তিপ্রা মথা। ত্রিপুরা বিধানসভার এক-তৃতীয়াংশ (মোট ২০টি) বিধানসভা আসন রয়েছে এডিসি এলাকায়। পরিস্থিতি বুঝে সেখানে এ বার সহযোগী আইপিএফটি-কে মাত্র ৬টি আসন ছেড়েছিল তারা।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ