কলকাতা 

সলিডারিটি ইউথ মুভমেন্ট-পশ্চিমবঙ্গের মহাজাতি সদনে বর্ণময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি: সলিডারিটি ইউথ মুভমেন্ট পশ্চিমবঙ্গের শুভ সূচনা হল। ২৩ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার কলকাতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাগৃহ মহাজাতি সদনে এক বর্ণময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলের পথ চলা শুরু হল। সদ্যজাত এই যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জনাব ওসমান গনি সাহেব। যুগ্ম সহ-সভাপতি হয়েছেন জনাব সাবির আহমেদ ও মোঃ সাদিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হলেন সেখ আরিফুল রহমান। এছাড়াও রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হিসাবে মনোনীত হয়েছেন ইমরান আলী, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, ডা: নিয়াজউদ্দিন হোসাইনী ও আব্দুল হামিদ। এই মহতী অনুষ্ঠানে আমীরে জামাআতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি জনাব লায়েক আহমেদ খান সাহেব।

জনাব লায়েক আহমেদ খান এই আবেগময় মুহূর্তে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, খায়রা উম্মাহ তথা নির্বাচিত উম্মাহ হিসেবে মানবতার কল্যাণে মুসলিম সমাজের উত্থান হয়েছে। মুসলিম যুব সমাজকে বর্তমান ভারতবর্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে খায়রা উম্মাহর যথার্থ ভূমিকা পালন করতে হবে। এখানে অবিচার ও বৈষম্য বিরাজমান। সিএএ ও এনআরসি-র মাধ্যমে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে লক্ষ্য বানানো হয়েছে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য। গণপিটুনি ও গোরক্ষকদের তাণ্ডব সংখ্যালঘুদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। যারা আক্রমণের শিকার তাদের বিরুদ্ধে আনন্দোৎসব করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় যুবকদের সচেতন হতে হবে। ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় তাদেরকে সক্রিয় হতে হবে। জীবনের নির্দিষ্ট দিশা গ্রহণ করে যুব আন্দোলনকে সম্প্রসারিত করা এখন সময়ের দাবি। পশ্চিমবঙ্গ জামাআতের ইউথ সলিডারিটি গঠনের তিনি প্রশংসা করেন এবং এর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Advertisement

মাওলানা এএফএম খালিদ সাহেবের তাযকির বিল কোরআনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয়। কর্মসূচির দিকনির্দেশনা দেন শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বশীল জনাব আব্দুল আজিজ সাহেব। অনন্য ও তামদ্দুন শিল্পীগোষ্ঠীর কলাকুশলীরা ইসলামী তারানা, সলিডারিটির মূল সংগীত, আবৃত্তি অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে উপস্থাপন করেন।

আমীরে হালকা মাওলানা আব্দুর রফিক সাহেব সমাপ্তি ভাষণে বলেন, জালেমের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠাতে যুব সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর সেটা পারে মুসলিম যুব সমাজ। মুসা (আ.) ফেরাউনের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে কথা বলতেন। তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। ঈসা (আ.) অন্যায়ের প্রতিবাদে এতটাই অবদান রাখেন, যার ফলে তাঁকে চরমদণ্ড দেওয়ার ঘোষণা তৎকালীন শাসক দেয়। যুবক সমাজ পুনর্গঠনে অবদান রেখে গেছেন যুবক নবী ইউসূফ (আ.)। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইসলামের শত্রুরা আমাদের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি সবকিছুকে ভুলিয়ে দিতে; আমরা যেন অধিকারের দাবিতে সরব না হই। আমরা যেন ইসলামের মৌলিক শিক্ষা দৈনন্দিন জীবন থেকে বাদ দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ঠ জীবন যাপন করি। কিন্তু ইসলাম এমন বেপরোয়া জীবন যাপন করতে নিষেধ করেছে। আমাদেরকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা মেনে চলতে হবে। পরিমিত ও সংযত জীবন যাপন করতে হবে। দেশের মধ্যে যত প্রকার অনাচার ও অপসংস্কৃতির রমরমা চলছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। সৎকাজের আঞ্জাম এবং অসৎ কাজ থেকে লোকদেরকে বিরত রাখতে হবে। কেবল নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তাভাবনা না করে এসব অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সাধনায় লিপ্ত হতে হবে।

প্রাক্তন আমীরে হালকা জনাব রহমত আলি খান বলেন, ফুল ফুটুকু না ফুটুক আজ বসন্ত। তাঁর কথায়, অনেক যুবক ভাবেন আগে পেশাগত দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত হই, তারপর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কথা ভাবা যাবে। কিন্তু আল্লাহ তা বলেননি। আল্লাহ যৌবন কালের ইবাদাতকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কেয়ামতের ময়দানে মুমেনকে কাঠগড়ায় তুলে প্রশ্ন করা হবে, জীবনের এই উত্তম সময়কাল কোন পথে অতিবাহিত করেছ।

বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে সেক্রেটারি হালকা জনাব মশিউর রহমান দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। এই প্রেক্ষাপটে মুসলিম যুবকদের সক্রিয় হবার আহ্বান জানান। মীযান পত্রিকার সম্পাদক ডা. মসিহুর রহমান বলেন, আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে যুব সমাজের স্বর্ণোজ্জ্বল ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন। মুসা (আ.)-এর সময় থেকে নবী করিম (সা.)-এর সময় পর্যন্ত তাঁদের মহান যুব সাথীদের ইতিহাসকে তুলে আনেন। বিংশ শতাব্দীতে ইখওয়ানুল মুসলেমিন-এর প্রতিষ্ঠাতা মিসরের শহীদ হাসানুল বান্না, সাইয়েদ কুতুব, পাক-ভারত উপমহাদেশের সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী এবং তুরস্কের বদীউজ্জামান নূরসী তাঁদের যৌবন বয়সে মহান কৃতিত্বকে উপস্থাপন করেন।

মাওলানা এম তাহেরুল হক সমাজ গঠন ও পুনর্নির্মাণে যুব সমাজের কাছে উদ্দীপ্তময় আহ্বান জানান। জনাব নাসিম আলি সাহেব বলেন, ক্ষমতালিপ্সুরা সর্বদা যুব সমাজকে ভয় পায়। তাঁরা যুব-আতঙ্কে ভোগেন, এই বোধহয় বিপ্লব হয়ে গেল, তাদের মসনদ উল্টে গেল। তাই সমাজের মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে যুব সমাজের মনোরঞ্জনের জন্য হানিট্র্যাপ, মানিট্র্যাপ, হলিউড, বলিউড দেদার খোলা। পুঁজিবাদী অর্থনীতির রঙিন হাতছানি যুবদের সামনে। এহেন বহুমুখী প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তারা বিপথগামী হচ্ছে, যা থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র ইসলাম।

এই সভায় বক্তব্য আরো যেসব অতিথি বক্তব্য রাখেন তাঁরা হলেন জনাব শাদাব মাসুম, প্রাক্তন মুয়াবিনে আমীরে হালকা জনাব আব্দুল আজীজ সাহেব, এসআইও-র রাজ্য সভাপতি সাইদ আল মামুন। ইউথ সলিডারিটি মুভমেন্ট পশ্চিমবঙ্গের নবনির্বাচিত সভাপতি জনাব ওসমান গণি সাহেব সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ফ্যাসিবাদী অশুভ শকতির বিনাশে যুব সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুবকরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো ছিল। জামাআতে ইসলামী হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ মজলিসে শূরার কোনো কোনো সদস্য এবং জেলা নাযিম ও সহকারী জেলা নাযিমরাও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ