মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মনোজ্ঞ আলোচনা বাংলার জনরবের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে
সংবাদদাতা বাংলার জনরব: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দিকে দিকে আলাপ আলোচনা মগ্ন ভাষা প্রিয় বাঙালি সচেতন মহল। পিছিয়ে নেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, সমাজ কল্যাণমূলক সংস্থাগুলিও । এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বাংলার জনরবের সাহিত্য বিভাগ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করেছিল। কথায়, কবিতায় মনোজ্ঞ আলোচনায় আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন গ্রেটার নয়ডা দিল্লি থেকে সাহিত্য পত্রিকা ‘অভিব্যক্তি’র সম্পাদিকা ডালিয়া মুখার্জি, মুর্শিদাবাদ থেকে বিশিষ্ট সাহিত্যিক সামসুল হুদা আনার, কলকাতা থেকে ক্যালকাটা গার্লস কলেজের অধ্যাপিকা যূথিকা পান্ডে এবং সাহিত্যিক সামসুজ জামান।
আলোচনার শুরুতে বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদক তথা সঞ্চালক সেখ আব্দুল মান্নান বলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে এ যাবৎ আমরা অনেক তাত্ত্বিক আলোচনা শুনে এসেছি। আজ আমরা আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে শুনতে চাইব আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে তাঁদের নিজস্ব অনুভব। এই দিবসটি তাঁদের কিভাবে তাড়িত করে সেই বিষয়ে একান্ত আলোচনা। ঠিক সেইভাবেই এদিন আলোচকরা তাঁদের অনুভূতি প্রাঞ্জল আলোচনায় তুলে ধরেন।
বিশিষ্ট লেখিকা তথা পত্রিকা সম্পাদিকা ডালিয়া মুখার্জি কলকাতার মেয়ে হয়েও প্রবাসে কিভাবে তাঁর ত্রিভাষিক সাহিত্য পত্রিকা ‘অভিব্যক্তি’কে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তার একটা ছবি আলোচনায় ফুটিয়ে তোলেন। তিনি মনে করেন পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতা বাংলা সাহিত্যের খাসতালুক হলেও তিনি বা তাঁর মতো অনেকেই প্রবাসে আন্তরিক ভাবে বাংলা সাহিত্য চর্চা করে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য দেখাতে পেরে তাঁরা নিজেদের ধন্য মনে করেন।
অধ্যাপিকা যূথিকা পান্ডে তাঁর আলোচনায় খেদ প্রকাশ করে বলেন পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের আধিপত্য থাকলেও দিনে দিনে এখানে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি একটা উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে। যা আগামীর জন্য অশনি সংকেত। তিনি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা বাংলা হলেও আজও সরকারি কাজে বাংলা পুরোপুরি ব্যবহৃত হয় না। তিনি বাংলার জনরবের এদিনের আলোচনা মঞ্চ থেকে দাবি জানান এই রাজ্যে সরকারি কাজে বাংলা যাতে আরও বেশি মাত্রায় ব্যবহৃত হয় তার আশু পদক্ষেপ যেন সরকারি ভাবে নেওয়া হয়।
সাহিত্যিক সামসুল হুদা আনার তাঁর আলোচনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষিত দিয়ে শুরু করে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি শব্দের উৎপত্তি নিয়ে বৌদ্ধিক বিশ্লেষণ করেন। আবার বাঙালি হয়ে আজকাল একধরণের বাঙালি কিভাবে মাতৃভাষার আভিজাত্যকে তাঁদের ব্যবহারিক জীবনে ব্রাত্য করে চলেছেন তার কয়েকটি উদাহরণ সহযোগে ব্যক্ত করেন।
সামসুল হুদা আনারের বৌদ্ধিক আলোচনার সূত্র ধরেই সাহিত্যিক সামসুজ জামান তাঁর আলোচনায় বাংলা ভাষার অপভ্রংশ এবং অমর্যাদা কিভাবে সরকারি তরফেও করা হয় তা বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তুলে ধরেন।
কর্মজীবনে চাকরি সূত্রে তিনি দীর্ঘদিন আন্দামানে কাটিয়েছেন। সেখানে কিভাবে মাতৃভাষা মাধ্যমের বিদ্যালয়ে বাংলার পরিবর্তে হিন্দি ইংরেজিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করানো হয় তার এক হৃদয় বিদারক পটভূমিতে ব্যাখ্যা করেন। যদিও তাঁর একক প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত এনসিআরটি এর ইংরেজি বই বাংলায় অনূদিত হয়ে এখন ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে, যেটা এক বাঙালি হিসেবে তাঁর আনন্দের বিষয় বলে উল্লেখ করেন। আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন আন্দামানে শুধু ভাষাগত ভাবে বাঙালিকে অপাঙক্তেয় করে রেখে সেখানকার প্রশাসন ক্ষান্ত নন। ইতিমধ্যে বৃটিশ অত্যাচারের নিদর্শন সেলুলার জেলে যেসব বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল এবং তাঁদের প্রতিকৃতি রাখা ছিল, কালক্রমে সেগুলো অবলুপ্তি ঘটে চলেছে। যা কখনই কাম্য নয়। তিনি মনে করেন দিনে দিনে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও বাঙালির আভিজাত্য প্রশ্নচিহ্নের মুখে।
এদিন আলোচনার পাশাপাশি আলোচকরা অনুষ্ঠানের মানের সাথে সাযুজ্য রেখে কয়েকটা স্বরচিত কবিতা পাঠ করে অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেন।
বাংলার জনরবের সম্মানীয় সম্পাদক সেখ ইবাদুল ইসলাম আমন্ত্রিত আলোচকদের আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন বাংলার জনরব তার সীমিত সামর্থে এভাবেই প্রতিমাসে বাংলা ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতির উন্নয়নে প্রয়াস চালিয়ে আসছে। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন এযাবৎ ভার্চুয়াল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের জ্ঞাণীগুণীদের বৌদ্ধিক আলোচনায় বাংলার সামগ্রীক সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করে আসছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। শুধু তাই নয় করোনা সঙ্কট পুরোপুরি মিটে গেলে এ ধরণের আলাপ আলোচনা সরাসরি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করা হবে বলে তিনি জানান।