কলকাতা 

শিক্ষকদের মর্যাদাহানি যেন কোনোভাবে না হয়, এটাই ছিল আমার জীবনের মূল মন্ত্র। অবসরের দিনে জানালেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দেবব্রত মুখোপাধ্যায়

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন : প্রায় ৪০ বছরের কাছাকাছি সুদীর্ঘ শিক্ষকতা কাল প্রথামাফিক গত কাল মঙ্গলবার শেষ করলেন তিনি। পুরুলিয়া, কলকাতা, কোচবিহার, বীরভূম, হুগলি জেলার সরকারি স্কুলে প্রথমে সহশিক্ষক এবং পরে প্রধান শিক্ষকের দায়ভার অত্যন্ত সফলভাবে নির্বাহ করে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পদার্থবিদ্যার গুণী শিক্ষক ড.দেবব্রত মুখোপাধ্যায় অবসর নিলেন সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে।

শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতে গিয়ে প্রত্যেকেই তাঁর সম্পর্কে বলছিলেন, যখন যে স্কুলে তিনি কাজ করেছেন, একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক অভিভাবিকা সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষা কর্মচারীসহ সকলের সঙ্গে। এমনকি স্থানীয় দোকানদার, অটো-চালকদের সঙ্গেও। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলাই তাঁর একমাত্র ধ্যান জ্ঞান। শিক্ষালয়ের পবিত্রতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগরুক ঘটুক, অভিভাবকদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক, গোটা শিক্ষা প্রক্রিয়া হয়ে উঠুক দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অবশ্যই আনন্দময়। এই নিয়েই দেবব্রত স্যারের নিরলস পরীক্ষা-নিরীক্ষা। নানা রকম ভাবে টুকরো টুকরো কথাগুলো উঠে এলো তাঁর বিভিন্ন স্কুলের সহকর্মীদের মুখ থেকে। আত্মপ্রচারহীন এই মানুষটির সম্পর্কে অনেকেই জানতেন না তাঁর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্তির কথা, ডি লিট বা শিক্ষারত্ন পাওয়ার কথা। বহুদিনের পুরনো সঙ্গী বিশিষ্ট রসায়নের শিক্ষক যশোবন্ত মহাপাত্র যেমনটি জানাচ্ছিলেন, তিনি যেমন একজন দক্ষ প্রশাসক, বাগ্মী, সুলেখক আবার অন্যদিকে তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়ও বটে। খোখোতে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্বও করেছেন তিনি।

Advertisement

এদিন হিন্দু স্কুল, হেয়ার স্কুল-এর প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক ছাড়াও কলকাতা ও তার আশপাশের অন্তত গোটা কুড়ি-পঁচিশ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কলেজ ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি, প্রাক্তন ছাত্র ও অসংখ্য অনুরাগী উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর ভালোবাসার টানে। যা চোখ মেলে দেখে নিল বর্তমান প্রজন্মের ছাত্ররা এবং তাদের অভিভাবকেরাও।

প্রধান শিক্ষক হিসেবে মঞ্চ থেকে তাঁর শেষ বক্তৃতায় দেবব্রত বাবু জানালেন, তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র হল কোনোভাবেই যেন শিক্ষকরা অমর্যাদার পাত্র না হন, তাঁদের দিকে কোনোভাবেই আঙ্গুল যেন না ওঠে। এমনই ভাবে মিশতে হবে চলতে হবে আমাদের। আসলে শ্রদ্ধা ভক্তির এক বিশেষ বাতাবরণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে না গড়ে উঠলে, জ্ঞানের প্রবাহ ঘটে না। আদর্শ শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার এই পবিত্র ভূমি শিক্ষার্থীদের মনে যথেষ্ট আস্থা জোগাতে পারে না। এ বিষয়ে আমাদের সকলকে সদা সর্বদা সতর্ক ও যত্নবান হতে হবে।

এ দিনের বিদায়ী অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক-অভিভাবিকা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষা সংগঠনের সাথে সাথে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সত্যিই মনে হচ্ছিল ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ