জেলা 

বিধায়ককে সাত লক্ষ টাকা দিয়েও করিমপুর ২ ব্লকের সভাপতি পদ পাননি অভিযোগ তৃণমূল কর্মীর, অভিযোগকারীকেই আটক করলো পুলিশ

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : কয়েকদিন আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে করিমপুর এলাকা নিয়ে মাথা ঘামাতে বারণ করেছিলেন। কারণ করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি মুর্শিদাবাদ লোকসভার অন্তর্গত এই কেন্দ্রের সাংসদ হচ্ছেন আবু তাহের। সুতরাং সাংসদ থাকার বদৌলতে তিনিই করিমপুর দেখবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়া মৈত্রকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ব্লক সভাপতি করে দেয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে করিমপুরের বিধায়ক নাকি দশ লক্ষ টাকা উৎ খোঁজ নিয়েছেন হলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা হাসান আলী মন্ডল  তিনি আবার প্রাক্তন সেনা কর্মীও। এই হাসান অভিযোগ করেছেন তাকে ব্লক সভাপতি করে দেয়া হবে এর জন্য করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ মহাশয় নাকি ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু হাসান ১০ লক্ষ টাকা নগদ ছিল না তাই স্ত্রীর গয়না বন্দক দিয়ে এবং বিক্রি করে তিনি নাকি টাকা জোগাড় করেছিলেন বলে অভিযোগ। তৃণমূল কর্মী হাসান আলী মন্ডল এর এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই হাসান আলী মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে করিমপুর থানার পুলিশ বলে জানা গেছে।

Advertisement

অভিযোগকারী নিজেই গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার কারণে বিষয়টি নিয়ে হইচই করেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন দলকে স্বচ্ছ নেতাদের দ্বারা ভরিয়ে দিতে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের একজন সাধারণ কর্মী বেআইনিভাবে অভিযোগ তুলেছেন বিধায়কের বিরুদ্ধে। আর এ কারণেই হাসান আলী মন্ডল কে আটক করেছে করিমপুর থানার পুলিশ বলে জানা গেছে।

সূত্রের খবর,করিমপুর-২ ব্লকের বারবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান। তিনি প্রাক্তন সেনাকর্মী। তাঁর অভিযোগ, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম দিকে করিমপুর-২ ব্লকের দলীয় সভাপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন বিধায়ক বিমলেন্দু। শনিবার সকালে হাসান বলেন, ‘‘পরবর্তী কালে আলোচনা সাপেক্ষে ব্লক সভাপতি পদের জন্য আমি ৭ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হই। সেই মোতাবেক স্ত্রী এবং বৌমার গয়না বন্ধক দিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার ঋণ নিই। সেনা পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ৩ লক্ষ টাকা ধার করি। কিছু জমিজমা বিক্রি করে মোট ৭ লক্ষ টাকা বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহরায়কে নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে তাঁর নিজস্ব চেম্বারে তুলে দিই।’’

হাসান আরও জানিয়েছিলেন, এর পর তৃণমূলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় নদিয়া উত্তরের তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন ব্লক সভাপতির নাম। কিন্তু সেই তালিকায় ঠাঁই হয়নি তাঁর। হাসানের কথায়, ‘‘এটা জানতে পেরে আমি বিধায়ককে বলি টাকা ফেরত দিতে। কিন্তু আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও টাকা ফেরত না পেয়ে আমি শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের দ্বারস্থ হই।’’

বিমলেন্দুর ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসাবেই পরিচিত হাসান। তৃণমূল বিধায়কের নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যেত প্রাক্তন সেনাকর্মী হাসানকে। সেই হাসানই অভিযোগ করেছেন বিমলেন্দুর বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে বিধায়ক বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমাকে কালিমালিপ্ত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। মানুষ জানেন বিমলেন্দু সিংহরায়কে। আশা করি মানুষ এ সবের বিচার করবেন।’’

এ নিয়ে শনিবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের কাছে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন বিমলেন্দু। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে হাসানকে। হাসান বলেন, ‘‘বিধায়কের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগের পক্ষে কী কী তথ্যপ্রমাণ আছে তা পুলিশের কাছে জমা দিতে বলে হয়েছে। আমাকে বাড়ি থেকে পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছে। কেন এনেছে আমি তা জানি না।’’ কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল যদিও বলেন, ‘‘বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আমরা এখনও পাইনি। বিধায়ক যে অভিযোগ করেছেন, তার প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসান আলিকে করিমপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’ যদিও হাসানের ছেলে মহম্মদ আফ্রিদির অভিযোগ, ‘‘আজ বিকেল ৪টে নাগাদ করিমপুর থানা থেকে পুলিশ এসে বাবাকে থানায় নিয়ে যায়। তাঁকে আটক করে রেখেছে।’’

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ