জেলা 

পরিবেশের ভারসাম্য ও সুস্থিত উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে মহিষাদল রাজ কলেজে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দুদিনের রাষ্ট্রীয় কর্মশালা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন : রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজ কলেজ বর্তমানে এক উজ্জ্বল নাম। সম্প্রতি এই কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আয়োজন করেছিল দুদিন ব্যাপী (30-31মার্চ) রাষ্ট্রীয় স্তরের এক পরিবেশ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা। বিষয় ছিল পরিবেশ দূষণ এবং আমাদের সুস্থিত উন্নয়নl মহিষাদল রাজ কলেজের প্রানিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে ছিল দুই সহকারী সংস্থা – ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর এনভাইরনমেন্ট এন্ড ইকোলজি, কলকাতা ও ন্যাশনাল এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স একাডেমী,কলকাতা।

উপস্থিত ছিলেন একত্রিশ জন রাষ্ট্রীয় স্তরের বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক, দু জন বিদেশে আমেরিকার নাবরাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনামধণ্য বৈজ্ঞানিক, আড়াইশো এদেশের ছাত্র গবেষক ।

Advertisement

এই পৃথিবীকে আরও বেশ কিছু দিন বাঁচিয়ে রাখতে গেলে আমাদের ব্যক্তিগত স্তরে কি কি করা উচিত- প্রত্যেকে রাখলেন তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা। চিন্তাভাবনা রাখলেন স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক সঙ্গে বর্তমান ছাত্রছাত্রী সমাজ ।

উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সম্পাদক মাননীয় ডঃ অমিতকৃষ্ণ দে, ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ( ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইনভারমেন্ট এন্ড ইকোলজি), তিলক কুমার চক্রবর্তী মহাশয়( মাননীয় বিধায়ক মহিষাদল), অধ্যাপক সুদীপ বরাট (উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়), বিকাশ পাত্র (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট সাইন্স অ্যাক্যাডেমি), কৃষ্ণেন্দু দাস (প্রিন্সিপাল সাইন্টিস্ট আই সি এ আর),ডক্টর অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় ( বিজ্ঞানী গবেষক, নাবরাস্কা ইউনিভার্সিটি,ওমাহা ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রে আমেরিকা ), ডক্টর পিনাকি মণ্ডল ( বিজ্ঞানী গবেষক নাবরাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় ওমাহা আমেরিকা) , অধ্যাপিকা টিনা মুখোপাধ্যায় (স্কটিশ চার্চ কলেজ), সুভাষ ভট্টাচার্য (ইনস্টিটিউট অফ ইকোলজি এন্ড এনভায়রনমেন্ট), অধ্যাপিকা সেঁজুতি হালদার (স্কটিশ চার্চ কলেজ), অধ্যাপিকা মালবিকা চক্রবর্তী (স্কটিশ চার্চ কলেজ),প্রফেসর শ্রীমন্ত কুমার রাউত (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ,অধ্যাপিকা সুচিস্মিতা চ্যাটার্জী সাহা ( নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ), অধ্যাপিকা মীনাক্ষী দে (সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) , শুভেন্দু বিকাশ পাত্র (বিকে সি কলেজ) এবং আরো বহু বহু বিজ্ঞানী । ১৫৭ জন গবেষক তাদের গবেষণার ডালি নিয়ে প্রায় ৭০ টি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাপত্র পড়লেন এই সেমিনারে ।

কেউ কেউ বললেন আমাদের স্থানীয় স্তরে পিকনিক বা বনভোজন কিভাবে পরিবেশ দূষণ করছে, কেউ বললেন মহিষাদল তমলুকের পুজো এবং শব্দ দূষণ- , কেউ বললেন কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করেও কি করে গাছের গল- কিভাবে পরিবেশ দূষণের মাত্রা নির্দেশ করতে পারে, কিভাবে দূষণ পানকৌড়ির বাসাকে নিয়ন্ত্রণ করে , আবার কেউ বললেন পরিবেশ দূষণের মাত্রা কি করে বককে অন্য জায়গায় বাসা তৈরি করতে বাধ্য করাচ্ছে, কেউ বললেন পরিবেশ দূষণ কি করে পাখির খাদ্যাভ্যাসকে পাল্টে দিচ্ছে, পরিবেশ দূষণ কি করে শামুকের ইমুনোলজি পাল্টে দিয়েছে ।

আমাদের স্থানীয় স্তরে পরিবেশ দূষণ কিভাবে দিঘা তালসারি তাজপুরের লাল কাকড়ার বাসার উপর থাবা বসাচ্ছে, পরিবেশ দূষণ কি করে লাল কাঁকড়া বাসার বৈচিত্র্যকে নষ্ট করছে, পরিবেশ দূষণ কি করে আমাদের স্থানীয় শ্যামাপোকা বৈচিত্র ধ্বংস করছে, বিভিন্ন বিভিন্ন রঙের আলো শ্যামা পোকার মৃত্যুর জন্য কিভাবে দায়ী, এলইডি বালব কি শ্যামাপোকার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করছে? পশ্চিমবঙ্গের জলজ পোকামাকড়ের বৈচিত্র কি কমছে? গত ১০ বছর আগে কোন কোন ধরনের মাছ পাওয়া যেত? তাদের আকার আকৃতি এবং তাদের বৈচিত্র কি কমছে? এরকম হাজারো প্রশ্ন হাজারটা উত্তর । সরাসরি গবেষণা। সরাসরি বক্তব্য ।বক্তব্য রাখবেন প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক এবং ছাত্র ছাত্রীরা।

দুদিনের এই আলোচনা সভা ছিল বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর । কেউ বললেন রূপনারায়ণ নদীতে মাছের বৈচিত্র। কেউ বললেন শিলাবতী নদীতে মাছের বৈচিত্র। কেউ বললেন ধান গাছের পোকা মাকড়ের বৈচিত্র, কেউ বললেন পারদ দূষণ কিভাবে খলশে মাছের প্রজননকে প্রভাবিত করছে,কেউ বললেন ইকোট্যুরিজম কিভাবে জীববৈচিত্র্যের সর্বনাশ করছে, কেউ গন্ধি পোকার বাড়বাড়ন্তের কারণ পর্যালোচনা করলেন, কেউ যানবাহন দূষণ কিভাবে আম গাছের গল বা ক্যান্সার তৈরীর কারণ -সেটা নিয়ে আলোকপাত করলেন, কেউ আলোকপাত করলেন শামুকের চলাফেরা এবং গতিবিধির ওপর,কেউ বললেন পিঁপড়ে সমাজের যুদ্ধ- পরিবেশ দূষণ এবং তার প্রভাব, কেউ পশ্চিমবঙ্গের ফড়িং বৈচিত্র এবং তার ডানার গঠন, কৃষিকার্যের ফলে যে ধরনের দূষণ হয় সেটা নিয়ে আলোকপাত করলেন বেশ কিছু গবেষক। এ তো গেল সামান্য কিছু তালিকা।এ থেকে বোঝা গেল বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল এই আলোচনা সভা।

এই আলোচনা সভার উদ্বোধক বিধায়ক তিলক কুমার চক্রবর্তী বলেন মহিষাদল রাজ কলেজের প্রানিবিদ্যা বিভাগের হাত ধরে স্থানীয় পরিবেশের সুস্থিত উন্নয়ন ঘটবে । ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রাক্তন সম্পাদক অমিতকৃষ্ণ দে বলেন এই কলেজের ছাত্র ছাত্রী গবেষক এবং তাদের গবেষণা দেখে আমরা অবিভূত এবং আগামীদিনে আরো অনেক অনেক পরিকল্পনা রয়েছে মহিষাদল এবং হলদিয়া কে কেন্দ্র করে । দুই সহযোগী সংস্থা আগামীতে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন ।ডঃ তন্ময় রূদ্র সকলেজের ছাত্রছাত্রী দের উদ্বুদ্ধ করেন আরো সক্রিয় হবার জন্যে। অধ্যাপক শ্রীমন্ত কুমার রাউত বলেন চিত্তশুদ্ধি না করলে এ কর্মশালা অর্থহীন । অধ্যক্ষ অসীম কুমার বেরা আগামীতে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন ।

 

মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ উপস্থিত ছিল তার গবেষণার বিষয়বৈচিত্র ডালি সাজিয়ে ।

এই বিশাল কর্মাকান্ডের কর্নধার বিভাগীয় প্রধান ডঃ শুভময় দাস তিল তিল করে প্রতিনিয়ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিশাল টিম গড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় স্তরের পরিবেশ রক্ষার প্রচেষ্টা ।

মূল ভাষনে শুভময় বাবু বলেন ” মহিষাদলে বুনোশুয়োর, কুমির, চৈত্রে ইলিশ, আর পথ হারানো অলিভ রিডল কচ্ছপ… এ সবই আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত । এসবের কারন অনুসন্ধান করছে আমাদের ছাত্র ছাত্রীরা । ওরা একদিন ঠিকই পথ দেখাবে । আমি তো শুধুই হাল ধরে আছি । দাঁড় তো টানছে বর্তমান প্রজন্ম । কলেজ, অধ্যক্ষ, বিধায়ক আর সারাভারতের বৈজ্ঞানিক গবেষক- ওঁরা তো পালের মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছেন এই নৌকোকে ।”


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ