কলকাতা 

গণ-আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী টিপু সুলতানকে ইউএপি আইনে গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর মানবাধিকার কর্মীরা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : গত ১২ ই অক্টোবর রাতে কোন আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় কর্মী বোলপুরের বাসিন্দা টিপু সুলতান কে গ্রেপ্তার করে রাজ্য পুলিশ। জানা গেছে ২০১৬ সালের এক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে UAPA আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আর এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্যের মানবাধিকার সংগঠন গুলি। ফ্যাসিস্ট আরএসএস বিজেপি বিরোধী বাংলা মঞ্চের পক্ষ থেকে টিপু সুলতানের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে এই মঞ্চ বলেছে,”আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে গণ-আন্দোলনের পরিচিত সক্রিয় কর্মী টিপু সুলতানকে বোলপুর পুলিশ ২০১৬ সালের ঝাড়গ্রাম থানার একটি পুরাতন মামলায় অভিযুক্ত করিয়ে ঝাড়গ্রামে নিয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা, ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা মঞ্চ, মনে করছি, মামলাটিতে টিপুকে ভুয়ো ভাবে যুক্ত করা হয়েছে। আরো উদ্বেগজনক হল, ফ্যাসিস্ট বিজেপির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষে লড়াই চালাচ্ছে বলে দাবি করছে যে সরকার, সেই সরকারই বিজেপির কায়দায় ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রতিবাদরত বিক্ষোভকারীদের অন্যতম টিপুকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার শুধু করলো তা-ই নয়, ইউএপিএ-এর তিনটি ধারায় অভিযুক্তও করেছে।

দেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ২২ মোতাবেক টিপু সুলতানের গ্রেফতারি বেআইনি শুধু নয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ২২-এর নির্লজ্জ লঙ্ঘন। ১২ই অক্টোবর তারিখে রাতে পুলিশ এসে বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। সেই সময়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা নং ৫০ অনুসারে কাস্টডি মেমো দেয়নি, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানায় নি, গ্রেপ্তার করেছে কি না জানায়নি। তারপর আজ সারাদিন বাড়িতে খবর দেয়নি। সরকারি নোটিশে মিথ্যা লিখেছে যে, পুলিশ তাকে আজকে (১৩/১০/২০২১ তারিখে) গ্রেপ্তার করেছে।

Advertisement

আরও ধিক্কারের ব্যাপার হলো, যারা কিছুদিন আগে ইউএপিএ দেওয়ার বিরুদ্ধেই স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করলো, তারা নিজেরাই ইউএপিএ আবার নতুন করে এ রাজ্যে রুজু করলো গণআন্দোলন কর্মীর বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে টিপু সুলতান সহ আরো তিনজনকে গোয়ালতোর থানা গ্রেপ্তার করেছিলো। তখনও আদালতকে পুলিশ জানায়নি, টিপুর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের কোনও মামলা আছে এবং কোনও ইউএপিএ মামলা আছে। এবং, সেই কেসে জামিন পাওয়ার সময়েও তখন টিপুকে পুলিশ এই ২০১৬ সালের মামলার জন্য রিমান্ড বা হেফাজত চায়নি। তাই বোঝাই যাচ্ছে কেসটাই সাজানো, ভুয়ো।

টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তারের পুরো প্রক্রিয়া, মিথ্যা মামলা দেওয়া, শিশুধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের সপক্ষে আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় ভয়-ভীতি দেখানো ইত্যাদি পুরোটাই ফ্যাসিস্ট পদ্ধতি, যা আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিন্দা করছি এবং টিপু সুলতানের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা মঞ্চের পক্ষ থেকে সুজাত ভদ্র, কুশল দেবনাথ ও কস্তুরী বসু দ্বারা প্রকাশিত। ”

অন্যদিকে, এস ডি পি আই এর রাজ্য সভাপতি তায়েদুল ইসলাম এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।তিনি এক প্রেস বিবৃতিতে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে লড়াই করা যুবক টিপু সুলতানের মুক্তি দাবি করেছেন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তায়েদুল ইসলাম বলেছেন, “১২ অক্টোবর রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ, শান্তিনিকেতনে গুরুপল্লীর বাড়ি থেকে গণ আন্দোলনের কর্মী টিপু সুলতানকে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে যায়।

সে সময় বাড়িতে তাঁর বাবা মা কেউ ছিলেন না। একমাত্র তাঁর দাদু আর টিপু বাড়িতে ছিলেন। রাত সাড়ে এগারোটার সময়, ৬-৭ জন পুলিশ, তার মধ্যে ৪ জন সিভিল ড্রেসে ছিল, গাড়ি করে এসে টিপুকে বাড়ি থেকে বলপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। টিপু সুলতানের দাদুকে পুলিশ জানায় যে, কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে বাড়ি পৌঁচ্ছে দেবে তারা। টিপু সুলতানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ লিখিতভাবে কোনওরকম নোটিস তাঁর দাদুকে দেয়নি।
আজ ১৩ অক্টোবর সকালে তাঁর দাদু বোলপুর এবং শান্তিনিকেতন থানায় বারবার খোঁজ নিতে গেলে পুলিশ জানায় যে তারা কাউকে গত রাতে গ্ৰেফতার বা আটক করেনি।
আজ বিকেলে ঝাড়গ্ৰাম থানা টিপুর দাদুকে জানায় ২০১৬ সালের একটি মামলায় তাঁকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে এবং সেই মামলায় অন্যান্য ধারার সাথে ইউএপিএ ধারাও দেওয়া হয়েছে।
সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য কমিটি পুলিশের এই বেআইনি কাজের তীব্র প্রতিবাদ করছে এবং ইউএপিএ আইন ব্যবহার করার জন্য রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছে।
কমিটি টিপু সুলতানের উপর থেকে ইউএপিএ ধারা তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।

রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন– পুলিশ এবং রাজ্য প্রসাশনের এই বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। জোরদার গণ আন্দোলন গড়ে তুলুন রাজ্যে ইউএপিএ আইন ব্যবহার না করার জন্য। রাজ্য সরকার একদিকে ইউএপিএ আইন ব্যবহার করার জন্য ইউনিয়ন সরকারের বিরোধিতা করছে , একই সাথে রাজ্যে ইউএপিএ আইন ব্যবহার করছে। এটা রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতা এবং রাজ্যবাসীর প্রতি প্রতারণা। এই দ্বিচারিতা বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে।”


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ