‘মনে রেখো যত চুরি করেছো, যত ডাকাতি করেছো, যত খুন করেছো, তার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বিচার হবে ‘: মমতা
বাংলার জনরব ডেস্ক : দেশ তথা রাজ্যের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ শুরু হতে আর কয়েকটি দিন বাকি রয়েছে । এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গে প্রচার তুঙ্গে উঠেছে । গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোচবিহারে ভোট প্রচার করে গেছেন । সোমবার সেই কোচবিহারে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র ভাষায় সমালোচনা করলেন মোদী ও বিজেপির ।
সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম সভা ছিল জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায়। সেখানে মোদী ও বিজেপিকে একদফা একহাত নিয়ে কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে আসেন তিনি। রবিবার এখানেই মোদীর সভায় ময়দান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ফলে এদিন সেখানে মমতার বক্তব্যও ছিল আরও ঝাঁঝাল।
কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানের সভামঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাব দেন মমতা।তিনি বলেন, কী ভাবে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে কোচবিহার-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন করেছে তার সরকার। এমনকী রেলমন্ত্রী হিসাবে কোচবিহারের জন্য তাঁর অবদানও স্মরণ করান তিনি।
এর পরই মোদীকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, ‘বিনাশ কালে বুদ্ধি নাশ হয়েছে। এত মিথ্যে কথা বলতে আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে শুনিনি’। মমতার দাবি, ‘আমি মিথ্যা কথা বললে হামাগুড়ি দেব। আপনার মিথ্যা কথা ধরা পড়লে আপনাকে ও হামাগুড়ি দিতে হবে।”
এদিন মমতা বলেন, ‘এই ময়দানে ছোট্টবেলা থেকে সভা করেছি। ৬৬ বছরের ছিটমহল সমস্যা ৬ মাসে সমাধান করেছি।’
তৃণমূল নেত্রীর পালটা অভিযোগ, ‘এই ভোট দিল্লিতে বদলানোর ভোট। এই নির্বাচন আমার নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনে যাঁর কৈফিয়ত দেওয়ার কথা সে দিচ্ছে না। উলটে আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছে।’ মোদীকে মমতা সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘
আমি যা কাজ করেছি তার ১ শতাংশ করেছেন? আমার চ্যালেঞ্জ আমি যা করেছি তার ১ শতাংশ করে দেখান।’
এদিন মাঠ বিতর্ক নিয়েও বিজেপিকে চরম ভর্ত্সনা করেন মমতা। বলেন, ‘গত ৩১ তারিখ আমরা প্রথম এই মাঠ বুক করি। রবীন্দ্রনাথ ঘোষরা এই মাঠ বিজেপিকে দিতে চেয়েছিল না। আমি বললাম দিয়ে দে। কোথায় কৃতজ্ঞতা জানাবে, তা না উলটে আজেবাজে বলছে।’
এর পরই দেশ চালানোর ক্ষমতা নিয়ে মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, ‘উনি না কি সুশাসন দেবেন। ওরা দুর্যোধন আর দুঃশাসন। তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। আপনি কখনো নিজের বৌকে দেখেছেন? যার নিজের সংসার নেই তারা দেশকে কি দেখবে’
সারদা-নারদ নিয়েও বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন তিনি। বলেন, ‘সারদা-নারদায় অভিযুক্তকে পাশে বসিয়ে সভা করছেন। ৬ বছর ধরে সারদাকাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। কেন এখনো সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দিতে পারল না তারা? সিপিএমের সময় চিটফান্ডের জন্ম হয়েছিল। কেন তাদের কোনও নেতা গ্রেফতার হল না।’
মমতার হুঁশিয়ারি, ‘আমি ভাঙি কিন্তু মচকাই না। আমরা লড়ি কিন্তু মাথানত করি না। আমরা লড়াই করে বেঁচে ছিলাম, বেঁচে থাকব। আর বেঁচে যদি থাকি মোদীবাবু ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে কড়ায় গন্ডায় হিসেব নিয়ে ছাড়ব। মনে রেখো যত চুরি করেছো, যত ডাকাতি করেছো, যত খুন করেছো, তার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বিচার হবে।’
মমতা বলেন, ‘সরকারি আধিকারিকদের ওরা ধমকাচ্ছে। ধমকে লাভ হবে না। যারা আসবে তারাও আমাদের লোক। তারা তাদের মতোই কাজ করবে। সেন্ট্রাল ফোর্স চলে যাবে, কিন্তু রাজ্যের পুলিস থাকবে।’
এদিনের সভায় হাজির ছিলেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারী-সহ জেলার সমস্ত তৃণমূল নেতারা। সভামঞ্চ থেকে পরেশ অধিকারীর পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।