কলকাতা 

মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে উন্নয়নের গালগল্প রাজ্যের কঠিন বাস্তবতাকে আড়াল করতে পারবে না : হাকিকুল ইসলাম

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : ২ ডিসেম্বর ২০২৫, কলকাতা : আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রেস কনফারেন্সে উন্নয়নের যে দীর্ঘ তালিকা পেশ করেছেন, তা প্রকৃত অবস্থাকে আড়াল করার একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উন্নয়নের বুলি যত জোরালো, বাস্তব বাংলা ততটাই বিপর্যস্ত। শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে—হাজার হাজার শিক্ষক পদ খালি, নিয়োগ–দুর্নীতির পাহাড় প্রমাণিত, যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা বছরের পর বছর রাস্তায় আন্দোলন করেও ন্যায় পাচ্ছেন না। স্কুলগুলিতে পরিকাঠামোর সংকট, ভগ্নদশা ভবন, চক ডাস্টার, বেঞ্চ–ডেস্কের অভাব, বাচ্চাদের পড়াশোনা নয়, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হওয়ার মতো পরিস্থিতি—এগুলোই বাংলার সত্যিকারের ছবি। যে সরকার শিক্ষাকে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে, ছাত্রদের স্কুলে যেতে আগ্রহী করার পরিবর্তে হাজার হাজার স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের মুখে উন্নয়নের গল্প— জনগণকে উপহাস মাত্র।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থাও একইভাবে ভয়াবহ। জেলা থেকে রাজ্য স্তরের হাসপাতালে ডাক্তার নেই, নার্স নেই, ওষুধ নেই—রোগীদের হয়রানি প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। স্ট্রেচার, শয্যা, অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর ঘটনাই আজ নিত্যদিনের বাস্তবতা। হাসপাতালে ভর্তির সময়ে অভিভাবকের কাছে সই করে নিচ্ছে “বেড নেই, মারা গেলে আপনার দায়িত্ব” এভাবেই চলছে রাজ্য। স্বাস্থ্যসাথী বা অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং অসাধু চক্র ব্যতীত সাধারণ মানুষের কাছে কার্যকর হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি করা উন্নয়নের পরিসংখ্যান এই বাস্তব স্বাস্থ্যসঙ্কটকে ঢাকতে পারে না।

Advertisement

এছাড়া তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। চাকরি দুর্নীতি, কাটমানি, গরু–কয়লা চোরাচালান, পঞ্চায়েত থেকে বড় বড় প্রকল্প পর্যন্ত—সব জায়গায় দলীয় সিন্ডিকেট রাজ ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সরাসরি অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনও পদক্ষেপ নেই। শুধুমাত্র নিচুতলার কিছু নেতাকে গ্রেফতার করে পুরো দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের গল্প যতই বড় হোক না কেন, দুর্নীতির পাহাড় তার চেয়ে কয়েকগুণ বড়। মূলত— এই সমস্ত প্রকল্প তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রচার ও তাদের নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতি করার জন্যই তৈরি হয়েছে। এই সামান্য ভাতা দিয়ে জনগণকে তার প্রকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে।

অপরদিকে পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়, দীর্ঘদিন যাদেরকে শিক্ষা থেকে দূরে রাখা হয়েছে, ওবিসির মাধ্যমে তারা এগিয়ে আসছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওবিসির তালিকা পরিবর্তন করে তাঁদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একইভাবে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তি সরকারিকরণ করার রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়েছে।

এসডিপিআই স্পষ্ট জানাতে চায়—পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্নীতির প্রশ্নে অবিলম্বে স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন। শিক্ষক ও চাকরিপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বেসরকারিকরণ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বড় নেতাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। ওবিসি তালিকার পুনরগঠন ও বেদখল হয়ে থাকা রাজ্যের যাবতীয় ওয়াকফ সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী আজ যে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ পড়লেন, তা বাস্তব নয়—এটা বাংলার মানুষের দুঃখ, বঞ্চনা ও শোষণের ওপর দাঁড়ানো এক রাজনৈতিক কৌশল।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ