কলকাতা 

মাদ্রাসা পর্ষদের হাই মাদ্রাসা, আলিম,ফাজিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ, হাই মাদ্রাসার মেধা তালিকায় এগিয়ে মালদা, আলিম ফাজিলে দুই ২৪ পরগনা ও হুগলির সাফল্য নজরকাড়া!

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : শনিবার, ৩ মে বেলা সাড়ে দশটায় প্রকাশিত হল ২০২৫ এর হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষার ফলাফল। মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড.আবু তাহের কামরুদ্দিন সাংবাদিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট পর্ষদের তরফে হাই মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘হাইমাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই! আমি আশা করি তোমরা ভবিষ্যতে আরও সাফল্য পাবে। তোমাদের জীবনের এই বিশেষ দিনটিতে, আমি তোমাদের বাবা-মা, তোমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক-সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁদের সহায়তাই তোমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি। আর যারা আজকে ভাল ফল করতে পারোনি, তাদের আমি বলব, মন খারাপ করো না। চেষ্টা চালিয়ে যাও। সামনের দিনে তোমরাও অবশ্যই সফল হবে। তোমাদের সবাইকে আবারও আমার অনেক আশীর্বাদ আর শুভকামনা জানাই। তোমরা সবাই ভাল থেকো।’’

Advertisement

পরীক্ষা শেষের ৪০ কর্ম দিবসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হল বলে পর্ষদ সভাপতি জনিয়েছেন।তিনটি বিভাগ (মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল) মিলিয়ে প্রথম দশে স্থান অধিকার করেছে ৩৭ জন। এর মধ্যে হাই মাদ্রাসায় ১৫ জন, আলিমে ১০ জন, ফাজিলে ১২জন। ৩৭ জনের তালিকায় ছাত্রী রয়েছে ১৬ জন এবং ছাত্রের সংখ্যা ২১জন।

হাই মাদ্রাসায় প্রথম দশ :

হাই মাদ্রাসায় ছাত্রদের চাইতে ছাত্রীরা এগিয়ে। প্রথম দশে ১৫ জনের নাম রয়েছে। তার মধ্যে ১২ জন ছাত্রী। জেলার ভিত্তিতে প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর (পাশের হার ৯৭.৫৪ শতাংশ)। দ্বিতীয় আলিপুরদুয়ার (পাশের হার ৯৫.৬৩ শতাংশ) এবং তৃতীয় হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (পাশের হার ৯৫.২১ শতাংশ)।

মোট পরীক্ষার্থী হাই মাদ্রাসায় ৪৪ হাজার ৭৩ জন। পাশ করেছে ৩৯ হাজার ৮০৬ জন (পাশের হার ৯০.৩২ শতাংশ)। চলতি বছর যুগ্ম প্রথম হয়েছে হাই মাদ্রাসায়। মালদহ জেলার ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী ফাহমিদা ইয়াসমিন ও ওই জেলারই  বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার ছাত্রী শাহিদা পারভিন। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭৮০।

দ্বিতীয় হয়েছে মালদহ জেলার ইসলামপুর সাগর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী শ্যামসুন নেহার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৬।

তৃতীয় হয়েছে মালদহ জেলার মোহাম্মদিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী আলিফনুর খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭২।

চতুর্থ হয়েছে মালদা জেলার রামনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র  আফ্রিদা বানু।তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭১।

পঞ্চম হয়েছে ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সাবনাম বানু। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭০।

ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে মালদা জেলার রামনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র সামিম আকতার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৯।

সপ্তম স্থান দখল করেছে মালদা জেলার ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী আফিফা আফরিন সিদ্দিকা। সপ্তম স্থান দখল করেছে মালদা জেলার বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার ছাত্রী নূরজাহান খাতুন। সপ্তম স্থানে দুজন ছাত্রী রয়েছেন। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৮।

অষ্টম স্থান দখল করেছে মালদা জেলার বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার ছাত্রী ফাহহিমা খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৭

নবম স্থান দখল করেছে দুজন। উত্তর ২৪ পরগনার হাতিয়াড়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র তৌফিক আলম মন্ডল এবং পূর্ব বর্ধমানের কাশিয়ারা হাই মাদ্রাসার ছাত্র মোহাম্মদ লস্কর। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৬।

দশম স্থান দখল করেছে তিনজন মুশিদাবাদের শাহাদিয়ার হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সোহা খাতুন, মালদা জেলার ভগবান পুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী আঞ্জুমান নেশা এবং মালদা জেলার বুধিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী রিজওয়ানা সুলতানা। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭৬৫।

আলিম-এ প্রথম দশ

আলিমে মোট পরীক্ষার্থী ১১ হাজার ৫৮৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ৩০২, ছাত্রী ৫ হাজার ২৮৬ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ হাজার ৭৫৫ জন (পাশের হার ৯২.৮১ শতাংশ)। প্রথম দশে রয়েছে ১০ জন। এর মধ্যে আট জন ছাত্র ও দু’জন ছাত্রী।

প্রথম স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগনার কাটিয়া শাহ, রজব আলি সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মহম্মদ সৈয়দ আলম মণ্ডল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮৭৩।

৮৭০ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগনার কাটিয়ার শাহ রজব আলী সিনিয়র মাদ্রাসা ছাত্র মাসুম বিল্লা গাজ়ি।

তৃতীয় হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাদিপুর শাহ আনোয়ারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মহম্মদ ওমার ফারুক মণ্ডল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮৫৩।

চতুর্থ স্থান দখল করেছে দক্ষিণ 24 পরগনার সাতুলিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মোঃ মাসুম হাসান মোল্লা তার প্রাপ্ত নাম্বার ৮৫০।

পঞ্চম স্থান দখল করেছে মুর্শিদাবাদে কাবিলপুর দারুল কুরআন সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র কুতুব উদ্দিন মামুদ তার প্রাপ্ত নাম্বার ৮৪১।

ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর অসিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রী শামীমা সুলতানা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮৩৭। সপ্তম স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগনার আমিনপুর কেএমসি সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র ইরফান রহমান মোল্লা। তার প্রাপ্ত নাম্বার ৮৩০

অষ্টম স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগনার আমিনপুর kmc সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মোঃ মোসাইব মোল্লা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮২৯

নবম স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগনার আমিনপুর kmc সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মাহবুবুর রহমান। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮২৭।দশম স্থান দখল করেছে উত্তর ২৪ পরগণার হাদীপুর সাহা আনোয়ারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র তাহিরা জয়নাব।

ফাজিল-এ প্রথম দশ

ফাজিলে মোট পরীক্ষার্থী চার হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র দু’হাজার ৬৩১, ছাত্রী দু’হাজার ৮২জন। উত্তীর্ণ হয়েছে চার হাজার ৩৯০ জন (পাশের হার ৯৩.১৫ শতাংশ)। প্রথম দশে রয়েছে ১২ জন। এর মধ্যে ন’জন ছাত্র ও তিন জন ছাত্রী।

ফাজিলে প্রথম স্থান দখল করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার খেড়িয়া সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র ইয়ামিন শেখ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৬২। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কালেরাইট মোহাম্মদিয়া দারুস সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র রাইহান হোসেন ও ইসলাম নগর ডঙ্ক নাসরুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র বাকিবিল্লা গায়েন। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৯। তৃতীয় হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার ছাইঘারি কে আই সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র আব্দুল হালিম, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৮। চতুর্থ হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার সপ্তগ্রাম দারুল উলূম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রী আমাতুল্লাহ তাসনিম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার খেড়িয়া সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র আল হাবিব তরফদার ,তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৭। পঞ্চম স্থান দখল করেছে মুর্শিদাবাদের হোসেন নগর দারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র মাজমুল হক,তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৩। ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে হুগলি জেলার ইসলাম নগর ডঙ্ক নাসরুল উলুম সিদ্দিকিয়া এস এম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রী আজমিরা খাতুন,তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪৯। সপ্তম স্থান দখল করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কালেরাইট মোহাম্মদিয়া দারুস সুন্নাত সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র বুরহানউদ্দিন মোল্লা, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪৫। অষ্টম স্থান দখল করেছে হুগলি জেলার ইসলাম নগর ডঙ্ক নাসরুল উলুম সিদ্দিকিয়া এস এম সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রী সাহানা আজিজা, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪৩।

নবম স্থান দখল করেছে হুগলি জেলার ডানকুনি সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র ফিরোজ মন্ডল, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪২। দশম স্থান দখল করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার কালেরাইট মোহাম্মদিয়া দারুস সুন্নাত সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র কামরুজ্জামান মিস্ত্রি, তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪১ !

পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন চলতি বছর থেকে চালু হচ্ছে তৎকাল পিপিএস ও পিপিআর (স্ক্রুটিনি এবং রিভিউ)। ৩ মে থেকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তৎকালের জন্য আবেদন করতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। যার ফলাফল ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে পর্ষদ।

চলতি বছর হাই মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। সমস্ত পরীক্ষাই শেষ হয়েছে ৫ মার্চ। ২০৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে। তিনটি বিভাগ মিলিয়ে এ বছর প্রায় ৬০ হাজার ৩৭৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩৫৩, ছাত্রীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ২১।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ