কলকাতা বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

শারদীয় উৎসব উপলক্ষে বাংলার জনরব এর বিশেষ সাহিত্যের ডালি /৩

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

তুষারকান্তি সাহার দুটি কবিতা

১.

প্রাচীন কিশোরের বিকেল

Advertisement

বাক্সবন্দি প্রিয় বিকেলগুলো একাকিনী

চুপিসারে শ্বাস নেয় ভাদ্রের দুপুরে

আমাদের তালপুকুরে

জ্ঞানোয়ারির মা যখন ইটখোলার

জানালায় জট ছাড়ায় চুলে

ঠিক তখনি সব কাজ ভুলে

অপেক্ষায় থাকা বিষণ্ণ যাপনের দিনে

নষ্টালজিয়ার প্রহর গোনে কেউ

ভাঙে জীবনের অবকাশ-ঢেউ

গৌরাঙের বিলুপ্ত সব ঘাট,

পরিত্যক্ত নৌকোর গলুই

তাদের রাত-বিরেতের সই

সব ভুলে কেবল এক প্রাচীনকিশোর

মনজোয়ারের টানে ভেসে যায়

ব্রহ্মপুত্রের পারে পারে নিরিবিলি ছায়ায়

যার কোনো দুঃখগাঁথা হয় না লেখা

কোনো কালের ইতিহাসে

শুধুই নিঃসঙ্গ কবিই থাকে পাশে

নবমীর জ্যোৎস্না তখন ভিন্ন আলোয়

খোঁজে মায়াবী সেই মুখ

জাদুকরী কিশোরীর গোপন অসুখ

এবং হঠাৎ আমজামলিচুর দুপুরশেষে

বিকেলের দল আত্মগোপনতা সরিয়ে

নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায় গুটিগুটি পায়ে

অতঃপর সেই প্রাচীনকিশোরের হাত ধরে

সূর্যডোবার কালে আগামীদিনের মায়ায়

জীবনের সব সবুজ আবির ছড়ায়…

২.

মানুষের অসুখ হলে

প্রতিদিন জল দিই

নিভৃতে শূন্যপাথারে, ছায়াগাছে

স্থিরচিত্রের মতো জ্বলে ওঠে

জোনাকির বাতি

রাতগুলো লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে

পাখিদের পালকবিছানায়

অসুখের জল গড়িয়ে যায়

গাছের কোটরে ,জন্ম নেয়

অসংখ্য ছায়াগাছ…

সকাল হতেই একটু একটু করে ফুটে ওঠে

আলোফুল ছায়াবাগিচায়

অসুখের হাত ধরে

ঈশ্বর হেঁটে যায় অনন্ত দিশায়।

————————————

সবার শরৎ

শেখ সিরাজ

শরৎ এলো নতুন সাজে

পড়লো ঢাকে ঘা

নীল আকাশে মেঘের মেলায়

আসছে দেবী মা।

নতুন সুখের আলোয় মেতে

উঠলো সারা দেশ

জাতি ধর্ম নির্বিশেষে

খুশিরই পরিবেশ।

সাজলো আকাশ সাজলো বাতাস

সাজলো দূরের মাঠ

দিঘির জলে পদ্ম ফুলে

ভরিয়ে দিলো ঘাট।

সাজলো সবুজ মাঠের পাশে

সাজলো পাহাড় বন

নতুন পোশাক ভরিয়ে দিলো

শিশুর অবুঝ মন।

 

খুশির আলোয় এক হয়ে যায়

হিন্দু মুসলমান

শরৎ আমার শরৎ তোমার

শরৎ সবার প্রাণ।।

—————————–

বিবসনা যামিনী

এ কে আজাদ (বাংলাদেশ)

সভ্যতার খোঁপায় ফুল গুঁজতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই,

সম্মুখে বিবসনা যামিনী, কোন্ দিকে হাত বাড়াই?

ভালবাসার কথাগুলো এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেয়

কবিতার খাতা থেকে।

ছন্দের কারুকাজ পাখি হয়ে উড়ে যায়

কবিদের মাথা থেকে।

চিৎকার করে শীৎকার তোলে-

কবিদের হাতে নাকি ফুল থাকতে নেই।

পটুয়ার তুলিতে শুচি জীবনের ছবি আঁকতে নেই।

এখানে রুচির শরীরে সুচি করা দর্প,

চুর্ণ করে দেয় ভালবাসার ইমারত, ফুঁসে ওঠে সর্প।

আঙ্গুলের অহং থেকে নেমে আসে শব্দের জেদ,

অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয় জীবনের হিতাহিত বেদ,

কবির কলম খামচে ধরে একটা গিরগিটি।

সূর্য-খাদক রাত্রি এসে হেসে ওঠে মিটিমিটি।

মগজের তন্ত্রীতে হলে টিকটিকির বাসা,

মানুষ ভুলে যায় ভেদজ্ঞান আর ভাব-ভালবাসা।

#

………………………………….

মা মাগো মা

সেখ আব্দুল মান্নান

পরমেশ্বরের পরম সৃষ্টি ওগো আমার মা

অপরুপ এই সৃষ্টির কোনো নেইকো তুলনা।

ছিলে তুমি রূপবতী যৌবনবতী গুণবতী মেয়ে

তিলেতিলে তোমার দেহে এলো মাতৃত্ব ছেয়ে।

প্রথম যেদিন জেনেছিলে তুমি হবে নতুন মা

সেদিন তোমার বক্ষজুড়ে ঝরেছিল খুশির ঝর্ণা।

সেই খুশির খবর দিয়েছিলে আব্বার কানে কানে

তারায় ভরা নিশুত রাতে নিবিড় সঙ্গোপনে।

জন্মনিলুম যেদিন আমি তোমার মধু কোলে

পড়ল ঝরে খুশির রাশি তোমার নয়ন জলে।

আজ কোথায় তুমি আছো বলো ওগো মা

দিগ্বিদিক খুঁজে ফিরি তোমায় পাইনা ঠিকানা।

কেন মা তুমি চলে গেছ আমায় অনাথ করে

কে আমায় বাঁধবে বল তোমার স্নেহের ডোরে।

বুক ফেটে যে কান্না ঝরে শোনো মা গো মা

হাত বাড়িয়ে নাওনা কোলে আর সইতে পারি না।

……………………………………………

তোমায় প্রনাম

শর্মিষ্ঠা মাজি

শুরু হলো দেবী পক্ষ

সকালে স্নান সেরে তুলসী তলায়

মারুনি ,পিটুলি দিয়ে আলপনায়

সাজবে সবার উঠান।

প্রদীপ জ্বেলে, শিউলি ফুলে

শিশির ভেজা আঙিনায় ,

শারদ শোভায় সাজাব তোমার রাঙা দুটি চরণ

পদ্ম আর ভক্তি দিয়ে করব তোমায় বরণ।

সবুজ মাঠে সাদা কাশে

দীঘির জলে পদ্ম ভাসে

দুর্গামাতা ত্রিশূল হাতে মর্তেআসে।

তোমার পায়ে দিলাম মাগো

গচ্ছিত ভক্তি ভরা জমানো প্রনাম।

……………………………….

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ