কলকাতা 

শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত নয় তবু পরিচালন সমিতির সভাপতি কেন? কাজরি বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্ন হাইকোর্টের

শেয়ার করুন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ তথা রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় যে শোকজ় নোটিস জারি করেছিলেন, তার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। গত ৩ জুলাইয়ের শোকজ় নোটিস এবং ২৯ অগস্টের সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত আট সপ্তাহ স্থগিত থাকবে বলে জানালেন হাই কোর্টের বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েক। সেই সঙ্গে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে কাজরীর নিয়োগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। ছ’সপ্তাহ পরে আবার এই মামলাটি শুনবে আদালত।

রানি বিড়লা গার্লস কলেজের অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী ভট্টাচার্যকে শোকজ় করেছিলেন কাজরী। সেই শোকজ়কে চ্যালেঞ্জ করে অধ্যক্ষা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। মামলাটির শুনানি হয়েছিল বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চে। শুনানিপর্ব শেষ হলে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার আগে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত বেঞ্চ বদলের আর্জি জানিয়েছিলেন। অনুরোধ করেছিলেন বিচারপতি বসুকে মামলা থেকে সরে দাঁড়াতে। বিচারপতি তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান। তার পর মামলাটি যায় বিচারপতি পট্টনায়েকের বেঞ্চে। সেই বেঞ্চই বুধবার কাজরীর নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

Advertisement

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এই কলেজের পরিচালন সমিতি আইন মেনে গঠিত হয়নি। কারণ, ২০১৭ সালের আইন অনুযায়ী, কলেজের পরিচালন সমিতিতে তিন জন স্থায়ী শিক্ষক এবং এক জন অশিক্ষক কর্মচারীকে নির্বাচিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। শুধু রাজ্য সরকারের মনোনীত সদস্যদের নিয়ে কলেজের পরিচালন সমিতি সম্পূর্ণ হয় না, মন্তব্য বিচারপতি পট্টনায়েকের। কাজরীর নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতিকে ‘শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি’ হতে হবে, এমনটাই বলা আছে আইনে। কিন্তু এখানে সভাপতি একজন কাউন্সিলর। তিনি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত— এমন কোনও প্রমাণ আদালতে দেওয়া হয়নি। ফলে তাঁর নিয়োগ বৈধ কি না, তা দেখা দরকার।’’

গত ৯ জুনের বিজ্ঞপ্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘৯ জুনের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ‘প্রস্তাবিত প্রেসিডেন্ট’ বলা হয়েছে। প্রিন্সিপালকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তেমন কোনও রিপোর্ট জমাই পড়েনি। আদালত মনে করছে, কলেজের পরিচালন সমিতি আনুষ্ঠানিক ভাবে গঠিতই হয়নি। ফলে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সম্বন্ধেও প্রশ্ন উঠছে।’’

আপাতত আট সপ্তাহের জন্য কাজরীর শোকজ় এবং সাসপেনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে হাই কোর্ট। ছ’সপ্তাহ পরে আবার এই মামলা শুনানির জন্য উঠবে। তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত। মামলাকারীর হয়ে এই সংক্রান্ত শুনানিতে সওয়াল করেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

কী নিয়ে বিতর্ক?

২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর রানি বিড়লা গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য হিসাবে আভেরি গুহকে মনোনীত করেছিল। ওই বছর ১২ অগস্ট উচ্চশিক্ষা দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি ওই কলেজের অধ্যক্ষা হিসাবে শ্রাবন্তীকে নিযুক্ত করেন। চলতি বছরের জুনে ওই কলেজের সভাপতি হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ তথা তৃণমূলের কাউন্সিলর কাজরীকে মনোনীত করা হয়। গত ১১ জুন ওই কলেজের অধ্যক্ষা কলেজের পরিচালন সমিতির (জিবি) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের মনোনীত সভাপতি কাজরী সাক্ষাৎ করেন। পরের দিন বাকি সদস্যেরা নির্বাচন না করে মনোনয়নের ভিত্তিতে পরিচালন সমিতি গঠনের পরামর্শ দেন। এর পরেই কাজরীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন অধ্যক্ষা। গত ৩ জুলাই তাঁকে কাজরী শোকজ় করেন।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ