পরমাণু অস্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী! বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি কি? নাকি চাপে রাখার কৌশল?
বাংলার জনরব ডেস্ক : সীমান্ত সংঘর্ষে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না কি পাকিস্তান? পাকিস্তান কি আরো বড় কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে? পরমাণু যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান? কি করতে চাইছে পাকিস্তান! আজ শনিবার সকালে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বে ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)-র বৈঠকে বসেছে। সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবং আল জাজ়িরা জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে সংঘাতের আবহে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার উদ্দেশেই এই বৈঠক।
পাকিস্তানের সামরিক এবং অসামরিক শীর্ষকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির হাতেই রয়েছে পরমাণু অস্ত্র এবং দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ়ের নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, মন্ত্রিসভার পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য (অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং শিল্প ও প্রতিরক্ষা উৎপাদন) ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার (স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা) প্রধান রয়েছেন। রয়েছেন, পাক সশস্ত্র বাহিনীর ‘জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফস কমিটি’র চেয়ারম্যান, ‘স্ট্র্যাটেজ়িক প্ল্যানস ডিভিশন’ (কৌশলগত পরমাণু হামলা সংক্রান্ত গবেষণা এবং পরমাণু অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত)-এর প্রধান এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ডিরেক্টর।
পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, শুক্রবার রাতে তাদের অন্তত দু’টি বিমানঘাঁটিতে ভারতীয় সেনা ‘ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আঘাত হানার চেষ্টা করেছে’। এই আবহে প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিতেই শাহবাজ এনসিএ-র বৈঠক ডেকেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধ্বস্ত ইসলামাবাদের পক্ষে নয়াদিল্লির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সংঘাতে যাওয়া সম্ভব নয়। আর তা বুঝেই পরমাণু অস্ত্রকে ‘তুরুপের তাস’ করছে পাকিস্তান। তাদের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক ‘নজর’ কেড়ে আপাতত সংঘাতে ইতি টেনে মুখরক্ষা।
কোণঠাসা ইসলামাবাদের সামনে যে অন্য কোনও বিকল্প খোলা নেই পাক উপপ্রধানমন্ত্রী (তথা বিদেশমন্ত্রী) ইশাক দারের মন্তব্যেও তা স্পষ্ট হয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের পর নয়াদিল্লির সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটতে যে তাঁরা কার্যত বাধ্য হয়েছেন, সে কথা কবুল করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছি। ভারতের সামরিক পদক্ষেপের পর আমাদের সামনে প্রতিশোধ নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না।’’
তাঁর কথায়, ‘‘নুর খান বায়ু সেনা ঘাঁটিতে ভারতের হামলার পর আমাদের সামনে আর কোনও বিকল্প ছিল না। যে কারণেই সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ওদের প্রত্যুত্তর দিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘‘আমরা যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা থাকে। বিশেষ করে ভণ্ডামি এবং দ্বৈত সত্তার পরিচয় যে দেশ দেয়, তাদের জন্য খুব বেশি ধৈর্য ধরা যায় না। এখনও পর্যন্ত আমরা স্বল্প এবং পরিমিত প্রত্যাঘাত করেছি। প্রয়োজনে আরও বেশি প্রত্যাঘাতের জন্য সেনা প্রস্তুত।’’
ইতিমধ্যেই সীমান্তে পাকিস্তান সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে। এর ফলে বড় কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে পরমাণু যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে চাপে রাখার চেষ্টাও করছে পাকিস্তান বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রীর সফরের পর দিল্লি সফরে এসেছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী। মনে করা হচ্ছে দুই মুসলিম দেশের বিদেশ মন্ত্রী ভারত সফরে এসেছেন একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত যাতে অবসান ঘটে। কিন্তু অবসান ঘটবে কি ঘটবে না সেটা পরের কথা কিন্তু ইতিমধ্যেই পাকিস্তান যেভাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে কিনা তা নিয়ে তাদের বিশেষ কমিটির বৈঠক দেখেছে তাতে অস্বস্তি বেড়েছে বিশ্ববাসীর। আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে পাকিস্তানের মতো একটা পিছিয়ে পড়া দেশ আর্থিকভাবে পঙ্গু দেশ এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের মদদ দাতা দেশের পক্ষে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করাটা কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়। সুতরাং সাবধানতা অবলম্বন করাটা জরুরি বলে অনেকে মনে করছে।