কলকাতা 

ব্রিগেডের জনসমুদ্রে তৃণমূল বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ সিপিএমের, কে কি বললেন এক নজরে দেখে নিন

শেয়ার করুন

তৃণমূল বিজেপির হাতে বাংলার সর্বনাশ হতে দেব না : মুহাম্মদ সেলিম : 

‘‘দুর্নীতিবাজদের চোদ্দ তলা থেকে মাটিতে টেনে নামানোর শপথ নিতে হবে আমাদের। গরিব মানুষের লড়াই স্যুট-বুট পরে লাট-বেলাট লড়তে পারবে না। গরিবকেই লড়তে হবে। বাঁচতে গেলে হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে লড়তে হবে। লড়াইকে আমরা ভয় পাই না। কিন্তু সেই লড়াই মন্দির, মসজিদকে ঘিরে নয়। ধর্মের নামে বেসাতি যারা করে, বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমরা মুর্শিদাবাদকে বাংলাদেশের মতো সংখ্যালঘু নিধনের জায়গা হতে দিতে পারি না। লড়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে তাই। আমাদের লড়াই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ, মা-বোনের ইজ্জত রক্ষার জন্য, সম্প্রীতির জন্য লড়াই। তৃণমূল-বিজেপির হাতে বাংলার সর্বনাশ হতে দেব না। সব ধর্মের অধিকার রক্ষা করে সরকার চালাতে হবে। এখন তো সরকারই বলছে মন্দির-মসজিদ চালাবে। ট্রেনটা ভাল করে চালাক আগে। কেন্দ্র ট্রেন বেচে দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার ট্রাম বেঁচে দিচ্ছেন। আসলে তৃণমূল বিজেপির স্ক্রিপ্ট এক। তা লেখা হয়েছে নাগপুরে। লিখে দিয়েছেন মোহন ভাগবত।’’

Advertisement

সেলিম আরও বলেন, ‘‘ওয়াকফের সংশোধন নিয়ে বিরুদ্ধে গোটা দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে, শুধু বিজেপি আর তৃণমূলের পাঁচ-ছ’জন সাংসদ ছাড়া। কোথাও তো অশান্তি হচ্ছে না। এখানে হল কেন? মুর্শিদাবাদে যাঁরা খুন হলেন, তাঁদের সমস্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা চাই বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। কারা ষড়যন্ত্র করল, নেপথ্যে কারা ছিল, সব বেরিয়ে আসবে। বহিরাগতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। তারা ভিতরে ঢুকলেন কী ভাবে? আমি বলব, হিন্দু আর মুসলমান লড়াই কোরো না। লড়তে হয় বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়ো। ২৬-এর লড়াইয়ের শুরু এখান থেকেই হোক। গ্রামে গ্রামে এই লড়াই ছড়িয়ে দিতে হবে।’’

ব্রিগেড মঞ্চে বন্যা টুডু সম্পর্কে সেলিম বলেন, ‘‘লড়াইয়ের ময়দান থেকে উঠে এসেছে বন্যা। আমাদের নেতানেত্রী টালিগঞ্জ বা বলিউড থেকে উঠে আসে না। শ্রমিক, কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছেন। ক্রিকেটের ভাষায় ও বলেছে, উইকেট ফেলে দেব। তার জন্য ফুটবলের ভাষায় ‘নেমে খেলতে হবে’। যাতে দুর্নীতিবাজদের চোদ্দ তলা থেকে মাটিতে টেনে নামাতে পারি।’’

 ২৬-এ উইকেট ফেলব : বন্যা টুডু

বন্যা বলেন, ‘‘ক্ষেতমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের লড়াই। শহরের মানুষ আমাদের কথা জানে না। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। লড়াইয়ের পথ থেকে সরব না। আমাদের সরকার ১০০ দিনের কাজ চালু করার কথা বলেছিল। সবাই বলে, ব্রিগেডে এত লোক, কিন্তু ভোটবাক্স খালি। মানুষের রুটিরুজি আর ভোটবাক্স আলাদা। ১০০ দিনের কাজ আমরা ২০০ দিন করতে চাই। টাকা দাও না হলে কাজ দাও। আপনাদের জন্যই লড়াই করছি। আমরা পিছিয়ে যাইনি। তাই মা-বোনেরা ব্রিগেডে এসেছে। আমাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এত চুরি করেছে এত চুরি করেছে, দিদি কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। চপ বিক্রি করতে বলছেন। আগামী দিনে আমাদের অনেক কাজ। ব্রিগেড থেকে চলে গেলে হবে না। লক্ষ্মীদের সম্মান থাকে না, তাদের আর ভান্ডার কী? মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, টাকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওঁরা বলছেন, খেলা হবে। খেলা আমরাও করব। ২৬-এ আমরাও দেখিয়ে দেব। আমরা উইকেট ফেলব।’

বিনামূল্যে বিদ্যুৎ চাই : সুখরঞ্জন দে

সুখরঞ্জন বলেন, ‘‘বস্তিবাসীরা আগামী দিনে শহরে থাকতে পারবেন কি না, অনিশ্চিত। বস্তি উচ্ছেদ নয়, বরং বস্তিবাসীদের নিরাপদ স্বত্ব, পাট্টা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। বস্তিবাসীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়তে চাই। প্রান্তিক মানুষদের সংগঠিত করে আমরা জেলায় জেলায় আন্দোলন গড়ে তুলছি। বস্তিবাসীদের শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। পানীয় জল সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্যসাথীতে স্বজনপোষণ করা হচ্ছে। বিপিএল-কে এপিএল করে দেওয়া হচ্ছে। আবাসের টাকা দিচ্ছে না। অন্য রাজ্যগুলিতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। আমাদেরও বিনামূল্যে গোটা রাজ্যে বিদ্যুৎ দিতে হবে। অন্য রাজ্য পারলে তোমরা কেন দেবে না?’’

২০০ দিনের কাজ চাই : নিরাপদ সর্দার

নিরাপদ সর্দার বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘুম উড়ে যাবে এই ব্রিগেড দেখে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বেকারের জন্ম। কলেকারখানায় কাজ করতেন যাঁরা, তাঁদের জীবন অনিশ্চিত। পড়াশোনা করে ছাত্রযুবরা পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হচ্ছেন। পার্লামেন্টে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা হয় না। বিধানসভায় হয় না। মন্ত্রী, সাংসদদের বেতন বৃদ্ধির আলোচনা হয়। কাজের নিরাপত্তার জন্য আলোচনা হয় না কোথাও। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। মমতা চুরি করেছেন। তাই মোদী টাকা দিচ্ছেন না। আমরা বলছি, ১০০ নয়, ২০০ দিনের কাজ দিন। আইন আনুন। তিন মাসের বেশি ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করা যায় না। মোদী তা-ই করছেন। এ সব নিয়ে আলোচনা হয়? কর্মশ্রীতে কোনও কাজের সুযোগ নেই। এগুলো লোকদেখানো।’’

ভাত খেতে পাব? প্রশ্ন অমলের

অমল হালদার বলেন, ‘‘কৃষকেরা বিপন্ন। গোপনে জমি বন্ধক দিতে হচ্ছে। ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফসলের দাম পাচ্ছেন না কেউ। সারের দাম, বীজের দাম বাড়ছে। রাজ্য ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে যাচ্ছে। লড়াই ছাড়া কোনও পথ নেই। অতীতেও বাঁচানোর জন্য লাল ঝান্ডা ছুটে এসেছিল। রাজ্যে কৃষির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো ২৬ হাজার চাকরি চলে গেল। অযোগ্যদের বাঁচানোর জন্য যোগ্যদের বলি দিলেন মমতা। চালের দাম চড়চড় করে বাড়ছে। ভাত খেতে পাব আমরা আগামী দিনে? চালও তো আমদানি করতে হবে বাইরে থেকে! জমি কমছে। উৎপাদন কমছে। সরকারের কোনও পরিকল্পনাই নেই। এর পর দুর্ভিক্ষের মতো চিত্র দেখা যাবে। নয়া কৃষিনীতির নাম করে বিপজ্জনক সংস্করণ তৈরি করছেন।’’

তৃণমূল-বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ

ব্রিগেড সমাবেশ থেকে তৃণমূল এবং বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করলেন অনাদি সাহু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শ্রমজীবী মানুষ আজ বিপন্ন। চাবাগান, চটকল, কয়লাখনি, ইস্পাত কারখানার মানুষ আক্রান্ত। দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী সরকার ১৪ বছর ধরে রাজ্যে লুটের রাজত্ব চালাচ্ছে। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে। ৩২ হাজারের চাকরি ঝুলে আছে। ছাত্রযুবরা পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। রাজ্যের অগ্রগতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়েছে এই সরকারের নীতির কারণে। গরিবের রোজগার বাড়ছে না। স্থায়ী কাজে অস্থায়ী শ্রমিক নিযুক্ত হচ্ছেন। শ্রম আইন ভঙ্গ হচ্ছে বার বার। সর্বত্র অস্থায়ী শ্রমিক, কম মজুরিতে কাজ করতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন। কেন্দ্র শ্রম কর লাগু করতে চলেছে। নরেন্দ্র মোদীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, আগুন নিয়ে খেলবেন না।’’

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ