ঝাড়খন্ডে বিজেপিকে হারাতে হেমন্ত সরেন সফল, দিল্লিতে কেন পারলেন না কেজরিওয়াল? রহস্য কোথায়?
সেখ ইবাদুল ইসলাম: জেলে গিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন। জেল মুক্তির পর তিনি আবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তারপর জনগণের মুখোমুখি হন জনগণ তাকে পুনরায় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত করেন। একই ঘটনা দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ক্ষেত্রে ঘটেছে। তিনি গেলে গিয়েছিলেন তবে জেল থেকে ফিরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং নতুন একজনকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন। আবার ব্যতিক্রমী বিষয় হলো জেলে থাকাকালীন সময়ে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
কিন্তু একজন জিতলেন কেন জিতলেন? বিজেপির সঙ্গে আপোস করেননি! হেমন্ত সরেনের বিশ্বাসযোগ্যতার পেছনে সবচেয়ে বড় কাজ করেছে তার বিজেপি বিরোধিতা। একজন আদিবাসী সমাজের নেতা কে জেলের ভিতর অকারণে ঢুকিয়ে মোদি সরকার নানাভাবে হেনস্থা করলেও তিনি কোনোভাবেই বিজেপির কাছে মাথানত করেননি। কিংবা গোপনে সমঝোতা করেননি। বরং তিনি বরাবরই রাহুল ও প্রিয়াংকার প্রতি নিজের আস্থা প্রকাশ করে গেছেন।
হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সরে নো কোনভাবেই কোন সময় রাহুল বা প্রিয়াঙ্কাকে বা কংগ্রেসকে অন্যায় ভাবে আক্রমণ করেননি। শুধু কংগ্রেস কেন ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার যারা শরিক তাদের প্রতি তিনি সমান মর্যাদা দেখিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। এই যে বিশ্বস্ততা বিজেপি বিরোধিতা হেমন্ত সরেন কে আদিবাসী সমাজের হিরো তৈরি করে দিয়েছে। উল্টোদিকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জেলে থাকাকালীন সময়ে কংগ্রেসের কাছ থেকে সুযোগ নিয়েছে রাহুল গান্ধী তার জন্য গলা ফাটিয়েছেন আর গত লোকসভা নির্বাচনে তলে তলে বিজেপির সঙ্গে আঘাত করে কংগ্রেস এবং নিজে দুজনেই হেরেছেন। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সুবিধা বাদি রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আজ দিল্লিতে তার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেস ভেবেছিল হয়তো। আপ শেষপর্যন্ত তাদের সঙ্গে জোট করবে সেই প্রত্যাশা নিয়ে কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনে সেভাবে প্রস্তুতি নেয়নি। শেষ লগ্নে এসে অরবিন্দ কেজরিওয়াল যেভাবে কংগ্রেসের পেছনে ছুরি মারলেন এবং জোট ভেঙ্গে দিলেন তার প্রতিক্রিয়া দিল দিল্লি সাধারণ জনতা। এরপরেও রয়েছে, দিল্লির দাঙ্গার সময় এই অরবিন্দ কেজরিওয়াল কোনভাবেই সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান নেই। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এবার মুসলমানরা কংগ্রেসকে এবং মিমকে তাদের বন্ধু বলে মনে করেছে। তবে দিল্লিতে মুসলমানরা ভুল করেছে একটা জায়গায় তারা যদি মীমকে ভোটটা না দিয়ে সরাসরি কংগ্রেসকে ভোট দিত তাহলে কংগ্রেস এবারে অন্তত ভালো রেজাল্ট করত কয়েকটি আসন দখল করতে পারত। মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবের জন্যেই এবার দিল্লিতে কার্যত কংগ্রেস কোন আসনই পেল না।
দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এই বিপর্যয়ের পেছনে তিনি নিজেই দায়ী। আত্মম্ভরিতা, কংগ্রেস সম্পর্কে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ এবং ইন্ডিয়া জোটে থেকেও জোট থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এবং বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্যই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পরিণতি এই জায়গায় এসে ঠেকলো আগামী দিনে ভারতবর্ষের রাজনীতির প্রেক্ষাপট থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা।