মাধ্যমিকে সব বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে অংক পরীক্ষা ভালো করার কৃৎ-কৌশল
*মাধ্যমিকে সব বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে অংক পরীক্ষা ভালো করার কৃৎ-কৌশল*
নায়ীমুল হক, শিক্ষক, হরিনাভি ডি ভি এ এস হাইস্কুল
〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️
আসন্ন মাধ্যমিক ২০২৫। ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের ভিত।আগামি দিনে মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট সব ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই মাধ্যমিকে ভাল ফল করতে সমস্ত দিক থেকে চেষ্টা করে সকলে।
তবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেরই ভয়-ভীতি থাকে অঙ্ক পরীক্ষা নিয়ে। এটা যেমন সত্য, অপর দিকে স্রেফ অনুশীলন করতে করতে দেখা গেছে বেশ ভালো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে টেস্ট পরীক্ষার পরও, এটাও কিন্তু বেশি সত্য। সুতরাং শুধু শুধু ভয়-ভীতি না বাড়িয়ে কয়েকটি উপায়ের কথা বলা যাক, যা অনুসরণ করলে আশা করা যায় অনেকটাই সাবলীলভাবে অংক পরীক্ষা দিতে পারবে।
প্রথমে বলে নিই যার যেকোনো বিষয়ে প্রস্তুতি যেমনই থাকুক না কেন, কাতার শুরুতে সুন্দর হাতের লেখায় নিজের নাম রোল নম্বর রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখবে আর প্রতিটি পাতায় পেন্সিল দিয়ে সুন্দর করে মার্জিন টানবে। আর জ্যামিতির ছবি যেখানে যা আঁকবে, তা পেন্সিল দিয়ে হবে।
এবার আসি,যারা বাস্তবিক-ই অঙ্কে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছ, তাদের জন্য এই মুহূর্তের সমাধান হল– কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ নির্বাচন করে নাও এবং যেগুলো বারবার করে অনুশীলন করো। যেমন জ্যামিতিতে উপপাদ্য ও সম্পাদ্য, পাটিগণিতে সমহার হ্রাস ও বৃদ্ধি, পরিমিতির গোলক ও শঙ্কু, ত্রিকোণমিতিতে মান নির্ণয় এবং রাশিবিজ্ঞানের মধ্যমা ও সংখ্যাগুরু মান নির্ণয়। এর সঙ্গে যারা বীজগণিত একটু পারো, এভাবে নির্বাচন করে পড়লে তাদের জন্য চিন্তা তো নেই-ই বরং ভালো নম্বর তুলে আনার আশা করতে পারো। তবে মনে রাখতে হবে বারবার অনুশীলন কিন্তু চাই এবং যেটুকু করবে বুঝে করবে।
এবার আসা যাক যারা অংকে ফুল মার্কস অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষায় ৯০ এ ৯০ পাওয়ার কথা ভাবছো, তাদের কথায়।
প্রথমেই বলি খাতা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে। রাফ ওয়ার্ক সেখানেই থাকা ভালো, যেখানে মূল অংকটি করছো। তাতে অংক যেমন নির্ভুল হবে আবার সময়ও খানিকটা বাঁচবে। পরীক্ষক অনেক সময় ছোট ছোট গুন-ভাগ মিলিয়ে দেখে নিতে চান, সেটাও তাঁর জন্য সুবিধা হবে। লাভ ওয়ার্ড যেখানে করবে সেখানেও যেন নোংরা না হয়। এ কথাগুলো মেনে চলা কিন্তু কঠিন কিছু নয়, অনুশীলন করলেই অভ্যাসে পরিণত হবে। ভবিষ্যৎ জীবনেও খুব কাজে লাগবে।
এবার আসি অংক প্রশ্নপত্রের পরিকাঠামোয়। ছবির মতো নিশ্চয়ই ভাসছে অংক প্রশ্নপত্র। দাগ নম্বর ১ থেকে ৩ পর্যন্ত অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, যার মধ্যে পরপর থাকে– mcq, শূন্যস্থান পূরণ এবং সত্য/মিথ্যা, এগুলোর জন্য সমাধান করে দেখাতে হয় না কেবলমাত্র উত্তরটুকু লিখে দিলেই হয়। চার নম্বর দাগে থাকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন। এই পর্যন্ত মোট মান ৩৬, এরপর শুরু হয় বিভাগ ধরে ধরে। ৫ নম্বর দাগে থাকে তাকে পাটিগণিত, ৬ থেকে ৮ দাগে বীজগণিত, ৯ থেকে ১১ দাগে থাকে জ্যামিতি, ১২-১৩ দাগে ত্রিকোণমিতি, 14 দাগে পরিমিতি এবং 15 নম্বর দাগে থাকে রাশিবিজ্ঞান।
দাগ নম্বর ধরে ধরে ক্রমানুযায়ী অংক করবে। জ্যামিতির ক্ষেত্রে সব সময় শুরু করবে খাতার বাঁ দিক থেকে, তাহলে দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় গেলে পাতা ওল্টাতে হবে না। পরিমিতিতে একক-এর ভিন্নতা থাকে যেগুলিকে সযত্নে সচেতন তার সঙ্গে একই এককে এনে তবে ক্যালকুলেশন করতে হবে। ক্যালকুলেশনের আকার যত ছোট হবে এবং পরিষ্কার হবে ততই ভুলের সম্ভাবনা কমে আসবে। বিষয়টার দিকে নজর রাখবে। কারণ প্রায়শই ভালো খাতায় দু-এক নম্বর এই জায়গাতে কমে যায়।
এবার আসি টাইম ম্যানেজমেন্টের কথায়। তিন ঘন্টা অর্থাৎ ১৮০ মিনিটের জন্য ৯০ নম্বর, সরল হিসেবে প্রতি নম্বরের জন্য দু মিনিট। কিন্তু অংকের ক্ষেত্রে এই সরল হিসেব মেনে চললে চলবে না। কিছু কিছু অংকের জন্য সময় বেশি লাগে আবার কিছু অংক আছে যেগুলো খুব দ্রুত করা যায়। এটা নিজেকেই ঠিক করতে হবে, যাতে করে সমস্ত অংক আড়াই ঘন্টা থেকে পৌনে তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে পারো। ৯০ নম্বরের উত্তর দেওয়া শেষ হলে তারপর কিছু কিছু extra অংক করতে পারো। ভালো খাতায় এরকমও দেখা যায়, যেখানে এক্সট্রা অংক করতে গিয়ে পরে তাড়াহুড়ো এসে যায় এবং অংক ভুল হয়ে যায়। সমগ্র উত্তরপত্র খুব ঠান্ডা মাথায় মিনিট 15 ধরে রিভিশন করতে হবে, যাতে কোনো ভুল থাকলে তা যেন সংশোধন করে নিতে পারো। লুজ শিট ক্রমিক নম্বর প্রতিটি পরীক্ষায় ঠিক রাখতে হবে যাতে শেষের দিকে এসে বিভ্রান্তি তৈরি না হয়। যে সমস্ত কথাগুলো এখানে আলোচনা হল, তা প্রায় তোমরা সবগুলোই রপ্ত করে ফেলেছ ইতিমধ্যে, তবু আর একবার জ্বালিয়ে নেয়ার জন্য বললাম।
অংক পরীক্ষা এবার ১৫ ফেব্রুয়ারি তার আগে তিন দিন ছুটি পাচ্ছো। খুব সুন্দর করে এসব জিনিস বারবার করে দেখতে পারবে। এদিক থেকে এবার তোমরা সৌভাগ্যবান বলতেই হয় অংক পরীক্ষা প্রত্যেকের ভালো হবে। আর অংকের চিন্তা দূর হলে বাকি পরীক্ষা তো ভালো হবেই। সকলকে অন্তর থেকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
➖➖➖➖➖➖➖
*সৌজন্যে : অনুসন্ধান সোসাইটি*