কলকাতা 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পুরানো সহকর্মীদের বাদ দিয়ে ‘নতুন তৃণমূল’ জনমানষে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : দক্ষিণে নতুন তৃণমূল গড়ার আহ্বান জানিয়ে পোষ্টার । সেই পোষ্টারে ছবি রয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের । তাতে লেখা রয়েছে, ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল’ এবং ‘ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ চায়।’ এই ব্যানার মূলত দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে । অন্যদিকে, উত্তর কলকাতার বিভিন্ন স্থানে আবার নতুন করে ব্যানার টাঙানো হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে,‘পুরাতনই ভিত্তি, নতুনই ভবিষ্যৎ।’  দক্ষিণের হোর্ডিংয়ে ছবি ছিল শুধুই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর উত্তরের ছবিতে অভিষেকের পাশাপাশি রয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দক্ষিণের হোর্ডিংয়ে ছিল ‘নতুন’ তৃণমূল গড়ার ডাক। আর উত্তরে ‘নতুন’ ও ‘পুরাতন’-এর সমন্বয়।

আজ রবিবার কয়েকটি হোর্ডিং দেখা যায় রামমোহন রায় রোড সংলগ্ন সুকিয়া স্ট্রিট অঞ্চলে। ওই হোর্ডিংগুলিতে মমতা ও অভিষেকের ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে, ‘পুরাতনই ভিত্তি, নতুনই ভবিষ্যৎ।’ তার নীচে লেখা, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ছিল, আছে, থাকবে।’ যদিও দলীয় ভাবে এই ব্যানার নয়। মূলত ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে এই হোর্ডিং দেখা যায়। প্রচারক হিসাবে নাম রয়েছে ‘২৮ বাংলা সিটিজেনস ফোরাম’। কেন এই ফোরাম, তা নিয়ে ওই ফোরামের এক সদস্যের যুক্তি, ‘‘দিদির বিকল্প কিছু নেই। তিনিই প্রধান মুখ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন হিসাবে আজকে যে ভাবে লড়ছেন সেটা ভাল লাগছে।’’ তিনি জানান, দলের তরফে এই ব্যানার নয়। সিটিজেনস ফোরামের তরফে।
আসলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে যাঁরা ভাবছেন নতুন তৃণমূল গড়বেন তাঁদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে । কারণ এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প তৃণমূল কংগ্রেস তো বটেই এই রাজ্যে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে নেই । সুতরাং মমতাকে বাদ দিয়ে নতুন তৃণমূল গড়া সম্ভব হবে না । একথা স্বীকার করতেই হবে মমতার অসম্ভব জনপ্রিয়তার কাছে বিজেপি এই রাজ্যে কার্যত অসহায় । এই পরিস্থিতিতে অমিত শাহরা খুব সুকৌশলে তৃণমূলকে ভাঙার চেষ্টা করছেন কিংবা দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভিলেন করে দেওয়ার গোপন কৌশল নিয়েছে । কারণ অমিত শাহরা ভাল করেই জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে কালি দিতে পারলে তাঁদের পক্ষে বাংলা দখল করা খুব সহজ হবে । সেই কারণে দেখা যাচ্ছে সিবিআই ও ইডির নজরে মমতা ঘনিষ্ঠরা । পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মন্ডলের গ্রেফতারি তার প্রমাণ ।
আর এঁদের গ্রেফতারির পর স্বাভাবিকভাবেই মমতার সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা । আর বিজেপি তো তেড়ে ফুঁড়ে বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ।
অন্যদিকে তৃণমূলের মধ্যে সুযোগ সন্ধানীরা ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে নানা মন্তব্য করে শাসক তৃণমূল দলকে জন বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে । এঁরা আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ঘুরপথে ক্ষমতায় যাওয়ার । এজন্য শাসক দলের অন্দরেই নতুন তৃণমূল গড়ার ডাক দেওয়া হয়েছে । একথা বলতে দ্বিধা নেই নতুন তৃণমূল যদি অভিষেকের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোদ্ধাদের বাদ দেওয়া হয় তাহলে সেই তৃণমূলের আয়ু মাস-ছয়েকের বেশি হবে না । আর বিজেপির কেন্দ্রীয় এটাই চাইছে । কোনোভাবে নবান্ন থেকে যদি মমতাকে একবার সরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে বিজেপির বাংলা দখলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না ।

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ