প্রচ্ছদ 

মৌসম বেনজির নূরের কংগ্রেস ত্যাগের পর মালদাতে অধীর চৌধুরির মত দক্ষ সংগঠককেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত প্রদেশ কংগ্রেসের

শেয়ার করুন
  • 15
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : মৌসম বেনজির নূর কংগ্রেস ছাড়বেন এ খবর এক বছর ধরে শোনা যাচ্ছিল । তিনি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের কংগ্রেসের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন । কিন্ত তৃণমূল নেতৃত্ব তখন গণি পরিবারের বাইরের নেতা-নেত্রীদের দলে নিতে ব্যস্ত ছিলেন । তাই তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি ; খোদ গণি খানের বিশেষ স্নেহভাজন ছোট ভাগ্নীই দলত্যাগ করে তৃণমূলে আসতে পারেন। তাই কয়েক বছর ধরে মালদার রাজনীতিতে আমরা লক্ষ্য করলাম কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতে জেলায় যারা মৌসম বিরোধী তাদের একটাংশ শাসক দলে যোগ দিতে । এদের মধ্যে কয়েকজন বিধায়কও আছেন । কিন্ত মৌসমই যখন শাসক দলে তখন ওই সব নেতারা কী করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে।

সহজ সত্য কথাটি কংগ্রেস নেতারা আত্মস্থ করতে পারছেন না । তাহল গণি পরিবারের বাইরে থেকে কোনো নেতৃত্ব তুলে আনা । সেটা করতে চাননি দিল্লি নেতৃত্ব একই সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্ব । আসল বিষয়টি হল বরকত গণি খান চৌধুরির যে সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা ছিল তা বর্তমান গণি পরিবারের কারও মধ্যে নেই । তিনি দোদন্ডপ্রতাপ সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই  করার ক্ষমতা ধরতেন । খোদ তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে জ্যোতিবাবুরা হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছেন এমনকি দেশের তাবড় তাবড় কংগ্রেস বিরোধী নেতাদের বিশেষ করে ফারুক আবদুল্লাহর মত নেতাকেও গণি-র বিরুদ্ধে প্রচারে নামিয়েও তাঁকে হারাতে পারেনি সিপিএম । কারণ তিনি একাই শাসক দলের ভোট মেশিনারী রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন । তিনি রাজীব গান্ধীর মত নেতাকে বলতে পারতেন , প্রচারে আপনার প্রয়োজন নেই । আপনি রাজ্যের অন্য জায়গাতে প্রচারে যান । মালদাতে আসতে হবে না । কারণ তিনি এমন একজন জননেতা ছিলেন যিনি মনে করতেন তাঁর এলাকার মানুষের কাছে একবার তিনি যেতে পারলে মানুষ তাকে কোনোভাবেই ফিরিয়ে দেবে না । বার বার এটা প্রমাণিত হয়েছে । তাই দু একবার চেষ্টা করে তাকে হারাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত সিপিএম আর চেষ্টা করেনি ।

Advertisement

আর গণির উত্তরসূরিরা কী করছেন ; শাসক দলের চাপে মাথানত করে পঞ্চায়েতে হেরে গেলেন । লড়াইয়ের চেষ্টা পর্যন্ত করেননি । মৌসম বেনজির নূর এর কথা না বলায় ভাল । তিনি কস্মিনকালেও রাজনীতি করেননি । মায়ের মৃত্যুর পর তিনি বিধায়ক হয়েছিলেন মায়ের আসন থেকে । মুখে চামচ দিয়ে এবং গণি খানের বোনের মেয়ে এই সূত্রেই তিনি বিধায়ক হয়েছিলেন । পরবর্তীতে মালদাতে দুটি লোকসভা কেন্দ্র হওয়ার কারণে তিনি একটিতে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান । আর গণি খানের নাম ভাঙিয়েই সাংসদ হয়ে যান । তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা যে কিছু নেই বোঝা গিয়েছিল তিনি যখন যুব কংগ্রেসের সভাপতি হন । রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে মৌসম সবচেয়ে ব্যর্থ সংগঠক হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন । আর জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসাবে তিনি যে চূড়ান্ত ব্যর্থ তার প্রমাণ পাওয়া গেল দলত্যাগে । যে সেনাপতি নিজের জয়কে সুনিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে পারেন , সেই সেনাপতি উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী আস্থা রাখবেন ! তৃণমূলের ইতিহাস বলছে এ পর্যন্ত কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট থেকে যত নেতা-নেত্রী এবং বিধায়ক –সাংসদ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁদের কেউ দলীয় নেত্রীর ‘ গুড বুকে ‘ নেই । মৌসমও থাকবেন না বলে আমার বিশ্বাস ! আর যদি হেরে যান তাহলে একমাত্র কংগ্রেস দল ছাড়া আর কেউ তাঁর রাজনীতি কেরিয়ারের উত্থানের ভূমিকা নেবে না ।

আসলে এরকম একজন নেত্রীর প্রতি আস্থা রাখাটই সোমেন মিত্রদের কাছে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল । বরকত গণি খান চৌধুরি অতীত হয়ে গেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন । বরকতের ক্যারিসিমার সঙ্গে তাঁর পরিবারের অন্যান্যদের যোগ্যতা এক হতে পারে না । এটা কংগ্রেস নেতৃত্বকে উপলদ্ধি করতে হবে । মালদাতে এমন একজনকে প্রয়োজন যিনি অধীর চৌধুরির মত হবেন । অধীর চৌধুরি নিজের যোগ্যতায় সংগঠক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । মূর্শিদাবাদের হারিয়ে যাওয়া মাটি এখন একক অধীর শাসক দলের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে আগে সমগ্র মুর্শিদাবাদে আবার নতুন করে কংগ্রেসকে উজ্জীবিত করেছেন ।

এটা তাঁর একক কৃতিত্ব । তাই মালদাতেও এমন কাউকে খুঁজে বের করতে হবে যে আসলে সাধারন পরিবার থেকে ওঠে আসা অসাধারন সংগঠক । আর এটা না করতে পারলে আখেরে পস্তাতে হবে কংগ্রেসকেই । কারণ মনে রাখতে হবে গণি পরিবারের সদস্যদের সাংগঠনিক যোগ্যতা খুব বেশি নেই । তাঁরা গণি খান নামক ব্যক্তির ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়েই সাংসদ বিধায়ক হতে অভ্যস্ত । আর এই অভ্যাসের কারণেই নিজের গদিকে টিকিয়ে রাখার জন্য মৌসম বেনজির নূররা একবার তৃণমূল ,আবার অন্য কোনো দলে ভিড়তে থাকবে । এদের কাছে গণি খানের আর্দশ নয় , নিজেদের গদিকে সুরক্ষিত রাখা প্রধার লক্ষ্য ।


শেয়ার করুন
  • 15
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

eighteen + twelve =