কলকাতা বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

হিন্দু মুসলমান মিলনের জয় গান গেয়ে গেছেন কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবির জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বললেন বিশিষ্টরা

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব সংবাদদাতা: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোন বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর কবি ছিলেন না তিনি ছিলেন মানবতার কবি তিনি ছিলেন সম্প্রীতির কবি। তাঁর সাহিত্য চর্চায় হিন্দু মুসলমান মিলনের কথায় প্রাধান্য পেয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী যুগে জন্মগ্রহণ করে এবং লেখক কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পরেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক লড়াকু লেখক। আপোষহীনভাবে ব্রিটিশের বিরোধিতা করে গেছেন তিনি কোনদিন চটি চাটা ছিলেন না।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তীতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথাগুলো বললেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও প্রাক্তন সাংসদ সরদার আমজাদ আলী। এদিনের সভার উদ্বোধনী বক্তব্য দিতে গিয়ে বিধান নগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমানুল হক বিদ্রোহী কবিকে বাংলার জাতীয়তাবাদের অন্যতম মুখ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন বাঙালির আদর্শের সঙ্গে নজরুলের আদর্শের পরিপূরক। বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি সমগ্র বিশ্বজুড়ে ফ্যাসিবাদের যে দাপাদাপি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার লেখক সাংবাদিক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না সবাই এখন আপোষ করতে ব্যস্ত। এই সময়কালে দাঁড়িয়ে নজরুলের অভাব আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি।

Advertisement

গত ২২ জুন ২০২৫ রবিবার এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে দিয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মজয়ন্তী সাড়ম্বরে উদযাপিত হলো কলকাতা নলিনী গুহ সভাগৃহে। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বাংলার জনরব আয়োজিত আলোচনা, আবৃত্তি, গান, শ্রুতি নাটক এবং স্বরচিত কবিতা পাঠের এদিন মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় পদার্পণ সাহিত্য গোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দের পরিবেশিত দুখানি সবমেত নজরুল সংগীত দিয়ে। শিল্পী শর্মিষ্ঠা মাজি পরিচালনায় সমবেত সংগীতে অংশ নেন শিল্পী সুজাতা চক্রবর্তী, পিংকি দাস, শিল্পী সাহা, প্রীতি সিনহা রায়, অনিতা রুদ্র ও দেবলীনা পাল।

বাংলার জনরবের সম্মানীয় সম্পাদক সেখ ইবাদুল ইসলামের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা সহ স্বাগত ভাষণের পর শুরু হয় নির্ধারিত আলোচনা সভা। “বর্তমান রাজনৈতিক সামাজিক প্রেক্ষাপটে নজরুল চর্চার গুরুত্ব” বিষয়ক একটি তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট আইনজীবী লেখক ও প্রাক্তন সাংসদ সরদার আমজাদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন আলোচনা উদ্বোধক প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. ইমানুল হক,

বিশেষ অতিথি দীর্ঘতম বাংলা কবিতা জনক কবি সেখ রবিয়েল হক বলেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বঞ্চিত অবহেলিত সমাজের কথাকে দীপ্ত কণ্ঠে তুলে ধরতে পেরেছিলেন। পরাধীন দেশের তিনি যেভাবে স্বাধীন তার কথা বলতে পেরেছিলেন তা আজকের দিনে কল্পনাতিত।

সম্মানীয় অতিথি অধ্যাপক সাদ রহমান, ঔপন্যাসিক জারিফুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব সাহিত্যিক জয়ন্ত রসিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক নৌশাদ মল্লিক, বিশিষ্ট গবেষক ও সমাজসেবক ড. ঋতা ভট্টাচার্য এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুচরিতা চক্রবর্তী ।‌

অনুষ্ঠানে “বাংলার জনরব-২০২৫” গুণীজন সম্মাননায় সম্মানিত হন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা সম্প্রীতি আকাদেমির প্রাণপুরুষ অধ্যাপক ড. সুরঞ্জন মিদ্দে ও নদীয়া আশ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার জাকির হোসেন।

এদিন আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দুটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো শ্রুতি নাটক ও নজরুল কবিতা আবৃত্তি। মেমারি ‘আবৃত্তির পাঠশালা’ পরিবেশিত “নজরুলের নার্গিস” শ্রুতি নাটক উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করে দেয়। নার্গিস চরিত্রে অভিনয় করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ব্রততী ঘোষ আলী, নজরুল চরিত্রে অভিনয় করেন শ্যামল মজুমদার এবং আবহ সঙ্গীতে সুনির্মল বিশ্বাস।

নজরুল কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বেতার বাচিক শিল্পী আশীষ হাজরা, মইদুল ইসলাম, আফ্রুজা খাতুন, শ্রাবন্তী চক্রবর্তী,সুতীর্থ চ্যাটার্জি, তন্দ্রা নস্কর ও হাফিজুর রহমান।

একগুচ্ছ নজরুল সংগীত ছিল অনুষ্ঠানে উপরি পাওনা। পরিবেশন করেন বিশেষ আমন্ত্রিত শিল্পী সুনীল ঘোষাল ও মৃণাল দত্ত।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কয়েকজন স্বনামধন্য কবির নজরুল বিষয়ক কবিতা আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়ে যান শ্রোতারা। কবিতা পাঠে অংশ নেন‌ কবি সুভাষ চন্দ্র ঘোষ, গৌতম বালা, অদৃশ্য নাথ, অপর্ণা হালদার, আরেফা গোলদার, সুতপা মুখার্জি ও আলমগীর রাহমান।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সেখ আব্দুল মান্নান ও কবি সাবিনা সৈয়দ। কয়েকটি মূল্যবান কথায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন মাওলানা আব্দুল ওহাব।

__________________________________


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ