মস্তিষ্কের ভান্ডার গড়ে ওঠে শিশুর প্রথম পাঁচ বছরে, বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন এই সময়ে: দিব্যগোপাল ঘটক
নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন : প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য দুদিনের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ৯-১০ ডিসেম্বর। দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারিতে বেস আন-নূর মডেল স্কুলে এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছিল বিভিন্ন জেলা ও ব্লক থেকে ১৫টি প্রাথমিক স্কুলের ৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডাইরেক্টর দিব্যগোপাল ঘটক প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদিনের এই কর্মশালায়।
তিনি বলেন শিশুর দৈহিক গঠন ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের ধারা অনুযায়ী প্রথম পাঁচ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়ে শিশুর দেখার, শোনার, শেখার, চিন্তা করার এবং উন্নতি করার ক্ষমতার প্রায় ৯০ শতাংশ তৈরি হয়ে যায়। এই সময়ের বিবিধ অভিজ্ঞতা-ইতিবাচক বা নেতিবাচক-তাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এই সময়ে শিশুরা কঠিন পরিশ্রম করতে পারে। সেকেন্ডে প্রায় দশ লাখ নিউরাল সংযোগ ঘটে। এর সুফল পেতে আমাদের উচিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। সঠিক সময়ে যথাযথ সহযোগিতা পেলে সারা জীবন তা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। উল্টোদিকে আছে আশঙ্কার কথাও। সময় মতো যত্নশীল না হতে পারলে পরবর্তীকালে ওই কাজটিই শিশুর জন্য অনাগ্রহ সৃষ্টি করে। তখন পড়াশোনা বা যেকোনো বুদ্ধি বৃত্তিক কাজ তার জন্য বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। যা পরবর্তী জীবনে তাদের তৈরি করা আরও কঠিন করে তোলে। দু দিনের কর্মশালার প্রথম দিন ছিল শিশুর প্রাক-প্রাথমিক কাল অর্থাৎ তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স, এই সময়ে শোনা, দেখা ও বলার মাধ্যমে শিখনকে কীভাবে আনন্দদায়ক করে তোলা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে পারস্পতিক আলোচনার ভিত্তিতে এই সময়ে শিশুর শেখা কেমন হবে তা আলোচিত হয়। বাংলা, ইংরেজি, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, গণনা আর অবশ্যই ছিল পরিবেশ চেনা, শরীর-স্বাস্থ্য, আচার-ব্যবহার, চরিত্র গঠন, নৈতিকতা ইত্যাদি।
বেস এডুকেশনাল হাব-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা, জানান সম্পাদক ও বিশিষ্ট সমাজসেবী খাদেমুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর থেকেই তাঁরা শুরু করতে চলেছেন ‘শিশু পার্ক’, যেখানে শিশুরা মনের আনন্দে দেখবে, শিখবে, তরতরিয়ে বেড়ে উঠবে। তাহলেই যথাযথ বিকাশ ঘটবে দক্ষতা ও যোগ্যতার। জেলা জুড়ে বছরভর চলবে এই ধরনের কর্মসূচি।
তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রশিক্ষক দিব্যগোপাল ঘটক সহ অংশগ্রহণকারী সকলকে। এছাড়াও সুদূরপ্রসারী এই কাজ কলকাতার জিডি স্টাডি সার্কেল এবং অনুসন্ধান সোসাইটির তত্ত্বাবধানে রাজ্যের সর্বত্র সুচারুরূপে এগিয়ে যাবে, এই আশা তিনি ব্যক্ত করেন।