কলকাতা 

“একজন ব্যতিক্রমী আদর্শ ও অনুকরণীয় শিক্ষক”/ মনিরা বেগম

শেয়ার করুন

“একজন ব্যতিক্রমী আদর্শ ও অনুকরণীয় শিক্ষক”

মনিরা বেগম 

শিক্ষিকা, হাতিশালা হাই মাদ্রাসা (উচ্চ মাধ্যমিক)

“যেখানেই থাকো

Advertisement

এ পথে আসতেই হবে …

আমি যাই

তোমরা পরে এসো ,”

শিক্ষক হিসাবে সত্যিই তার পথ অনুসরণ করতে পারাটা গর্বের বিষয়ই বটে । ব্যাপারটা এবার একটু বিস্তারিত ভাবেই বলি ।গত ১৫.১১.২৪ পুবের কলম পত্রিকায় মৌলানা আব্দুল ওয়াহাব সাহেবের অবসরপ্রাপ্তি উপলক্ষে মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন হাই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । এই প্রতিবেদনটিতে ১৪-১১-২৪ তারিখে হয়ে যাওয়া অনুষ্ঠানটির একটি প্রাঞ্জল চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। আমার এহেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল । সেদিন  যদিও মৌলানা আব্দুল ওয়াহাব সাহেব ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ শে অবসর নিয়েছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে এ . আই কবিরুল ইসলাম সাহেবদের মত উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসারদের পাশাপাশি যেমন ওই মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি তথা আব্দুল ওয়াহাব সাহেবের অগণিত গুণমুগ্ধ প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী ও ওই মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকাগন উপস্থিত ছিলেন তেমনি আমাদের মত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা শিক্ষক শিক্ষিকা ও প্রধান শিক্ষক , বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি গণ হাজির হয়েছিলেন । উপস্থিত সকলেই শিক্ষকতার পাশাপাশি আল আমিন মিল্লি মিশনের প্রতিষ্ঠা তথা বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা আবাদ করা ও অসংখ্য গঠনমূলক সামাজিক কাজে আব্দুল ওয়াহাব সাহেবের অবদান ও ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেন। যদিও অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একান্ত ব্যক্তিগত এবং তা সেই শৈশব বেলা থেকেই তবে এদিন তার ৪০ বছরের চাকরি জীবনে প্রাপ্ত জনপ্রিয়তা আমাকে মুগ্ধ করে ।আরো অভিভূত হই তার আবেগ বিগলিত বক্তব্য শুনে সত্যিই তিনি ব্যতিক্রমী। তিনি জীবনের চূড়ান্ত উন্নয়নের শিখরে পৌঁছেও তার নিজ জীবনের আদর্শ , তার অনুপ্রেরণা তথা পথপ্রদর্শক তার শিক্ষক মরহুম জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান সাহেবের কথা জনসমক্ষে স্মরণ করতে ভুলে যাননি।এই বিদায়ী শিক্ষক বলে চলেন কিভাবে মনু মেমোরিয়াল হাই মাদ্রাসার মতো একটি জীর্ণ চারা গাছ তার যোগ্য নেতৃত্বে মহীরুহে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে | তিনি প্রায় ১১ বছর ওই মাদ্রাসার টি . আই . সি ছিলেন |তিনি বলেন , ” এই মাদ্রাসাকে আমি অন্তর দিয়ে ভালোবেসে এসেছি এলাকার ছেলেমেয়েদের উন্নয়নের স্বার্থে | আগামীতেও ভালবাসব , তার জন্য আমি কোন পদের অপেক্ষা রাখি না ।আপনারা আমাকে যখন যে কাজে ডাকবেন আমি হাজির হয়ে যাব ।” এরপর তিনি সকলকে এক রকম চমকে দিয়ে ওই মাদ্রাসার বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব আরাফাত আলী মিদ্যা সাহেবের হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দেন মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে I তিনি আরও বলেন যে এই মাদ্রাসার মুমূর্ষ আর্থিক পরিস্থিতি যাতে উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে তাই তার এই সিদ্ধান্ত । আমরা জানি সাধারণতঃ বিদায়ী শিক্ষকেরা ফেয়ারওয়েলে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপহার নিয়ে বাড়ি ফেরেন ।

এই ব্যতিক্রমী শিক্ষক বিদায় বেলায় অশ্রু সজল চোখে প্রশ্ন ছুড়ে দেন , ” আমি ৪০ বছর যে মাদ্রাসায় চাকরি করে মাইনে নিয়ে গেলাম তাকে কি আমার কিছুই দেওয়ার নেই ?” উপস্থিত প্রায় সকলের সিক্ত নয়ন বলে দিল তিনি কতখানি ছাত্রদরদী এবং এলাকার দরিদ্র অসহায় শিক্ষার্থীদের কিভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে গেছেন এ যাবৎ তার এই স্বার্থত্যাগ ও মহানুভবতা দেখে আমাকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রার্থনা করতেই হল আব্দুল ওহাব সাহেব যেন আগামীতে সুস্থ থেকে তার সামাজিক কর্মকাণ্ড নির্বাধায় চালিয়ে যেতে পারেন ও যে পরিবার তাকে সামাজিক সেবায় নিয়োজিত হতে উৎসাহিত করে এসেছে আল্লাহ যেন তাকেও সুস্থতা দান করেন ও শান্তিময় করে তোলেন তাদের ভবিষ্যৎ জীবন । আমিন ।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ