অন্যান্য কলকাতা 

শিশু শেখা-শিখি : বানান শেখার মজার উপায়/ সুদেষ্ণা মৈত্র

শেয়ার করুন

শিশু শেখা-শিখি

*বানান শেখার মজার উপায়*

নতুন শিক্ষাবর্ষ আসন্ন। প্রতি বছরের মতো কত শত শিশুর জীবনে আগামী বছর থেকে সূচিত হতে যাচ্ছে স্কুল জীবনের নতুন যাত্রাপথ। এই পথ ততখানি মসৃণ ও সহজ হবে, শিশুদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা যতখানি বিজ্ঞান ভিত্তিক হবে। তাই শুরু হলো প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ বাংলা বানান লিখেছেন শিশু শিক্ষা বিশেষজ্ঞ সুদেষ্ণা মৈত্র সৌজন্যে–অনুসন্ধান সোসাইটি

〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️

Advertisement

ছোটোদের বানান নিয়ে ভাবনা কাজ করে। ছোটোথেকেই শুনে আসে বাংলা বানান বেশ কঠিন কারণ কোথায় কোন ‘ন’, কোন ‘স’, কোন ‘জ’ বসাবে সে নিয়ে গোলমাল হয়ে যায়।শব্দের সঙ্গে পরিচয় হওয়র আগে ছোটোদের নানা ছড়া শোনাতে হবে বারবার।একশব্দ, এক পংক্তি বারবার কানে অনুরণিত হলে ছড়াটি তারা মুখস্থ বলতে পারবে।তখন আপনা থেকেই ওদের মনে বাংলা শব্দ সংখ্যা বেড়ে যাবে। এর পাশাপাশি স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ শিখাতে হবে।এবার ছোটোদের নিয়ে খেলতে বসতে হবে কবিতায় শোনা শব্দের প্রথম বর্ণ কী শুনছে ! এরপর ছোটোদের চেনা জিনিস দেখিয়ে তাদের বলতে বলা হবে। ওরা যখন বলবে, তখনই ওদের জিজ্ঞাসা করতে হবে প্রথম কোন বর্ণটি শুনলে? ছোটোরা উত্তর দিলেই ওই বর্ণ দিয়ে ওদের আর কী কী শব্দ মনে আসছে বলতে বলা হবে। এতে ওদের মাথায় শব্দ সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। এরপর ছোটোরা বই , ভাত, রুটি কোন কোন বর্ণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে বলতে পারবে। এবার ছোটো ছোটো শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করে হাতের লেখা লেখাতে হবে। শব্দ চিনে সেটা লিখতে গেলে শব্দের ছবিটি মাথায় থেকে যাবে।তাহলে শ্রুতলিপি লিখতে বা বাক্য গঠনে কম ভুল হবে।

এরপর ছোটোদের দিয়ে ধীরে ধীরে তিন বর্ণের শব্দ, চার বর্ণের শব্দ তৈরি করতে বলতে হবে।যেমন কলস, কমল, অলস, অমল, অজয়, অংশ, কংস, রামায়ণ, নারায়ণ ইত্যাদি।নিজেরা শব্দ তৈরি করতে পারলে ছোটোরা আনন্দ পাবে, পাশে অভিভাবক বা শিক্ষকদের থাকতেই হবে।।এরপর ছোটোদের সঙ্গে বড়োদের শব্দ নিয়ে খেলা করতে হবে।মুখে মুখে বলে দিতে হবে করণ, বরণ, ধরণ।এই শব্দগুলির মধ্যে যে সুর আছে সেইটি বারবার বলে ‘প্রথম বর্ণের সঙ্গে আ-কার দিয়ে শব্দটা বলো’ বলতে হবে। ওরা শব্দ তৈরির মজা পাবে।ওরা নিজেরাই বলতে পারবে কারণ, বারণ, ধারণ।আ-কার দিয়ে তিন বর্ণের শব্দ বলবে ও লিখবে।সিড়ি ভাঙা অঙ্কের মতো দুই বর্ণ, তিনবর্ণ , চারবর্ণ, পাঁচবর্ণের শব্দ শেখাতে হবে।ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ দেখলে এই ধারাটি দেখা যাবে। তবে ছোটোরা যে সব শব্দ চেনে সেই শব্দগুলি বলবেন বড়োরা বা শিক্ষক। অযথা কঠিন শব্দ শেখাবেন না। এবার ছোটোদের দিয়ে গল্প বলাতে হবে, ওদের গল্প বলতে হবে। শুনতে শুনতে ওদের ভাবনার জগত সুন্দর হয়ে উঠবে। গল্পের বই হাতে তুলে দিতে হবে। চেনা শব্দগুলিকে ছাপা অক্ষরে দেখে আনন্দ পাবে। শব্দগুলির বানান আপনা থেকেই মনে থাকবে।

বড়োরা বা শিক্ষক বাংলার ছয়টি ঋতু পরপর দু তিনবার বলবেন। এরপর প্রশ্ন করবেন কোন ঋতুতে ‘স’ শুনতে পেলে না? অনেকেই ঠিক উত্তর দেবে। তখন আবার ঋতুর নাম গুলি পরপর বলে শিখিয়ে দিতে হবে। এবার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘বারোমেসে’ কবিতাটি বা সুকুমার রায়ের ‘বর্ষ গেল, বর্ষ এল’ পড়ে শোনাতে হবে ছোটোদের। এইভাবেই ছোটোরা খুব তাড়াতড়িই ঋতুর নাম আর বাংলা মাসের নাম শিখবে। গ্রীষ্ম উচ্চারণে ‘ষ’ টি উচ্চারণ করছি সেটি স্পষ্ট করে দিতে হবে। এবার আসবে বর্ষা । বলা যেতেই পারে ছোটোদের আকাশ কেটে জল যখন ঝরে পড়ে তখনই তো বৃষ্টি পড়ে তাই এটাতেও ‘ষ’ হবে।এইভাবে নানা গল্প, ছড়ার মধ্য দিয়ে মাস ও ঋতুর বানান শেখাতে হবে।

শরৎ কালের ‘শ’ ( তালব্য শ) সেটা শেখাতে গিয়ে বলতে হবে শারদীয়া উৎসব,শিউলি ফুল, কাশ ফুলের কথা বলতে হবে।ওদের বলতে হবে শরৎ ‘শ’ নিয়েই চলে আসে। এবার শোনাতে হবে ‘ আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি, পূজার সময় এল কাছে’ এই কবিতাটি ।এই সময়ে বলে দিতে হবে এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পূজার সাজ’ কবিতা।এই পূজাই শারদীয়া উৎসব এটি শিখিয়ে দিতে হবে। পূজাকে লোক মুখে বলতে বলতে পুজো হয়ে গেছে এটিও বলতে হবে ।

এবার ছোটোদের পূজা হলে ‘ঊ-কার’ পুজো হলে ‘উ-কার’বলে দিতে হবে।একই সঙ্গে শেখাতে হবে ‘দুর্গা’ সব সময় উ-কার হবে । কারণ হিসেবে ছোটোদের বলতে হবে বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে ‘দূর, দূত, দূষণ, দূর্বা’ ছাড়া আর কোনো দ-ঊ-কার হবে না।তাই দুর্গা সব সময় উ-কার হবে।

এইভাবে নানা গল্পের মধ্যে দিয়ে খেলতে খেলতে বানান শেখাতে হবে।

লেখিকা: সুদেষ্ণা মৈত্র, বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ