Abdus Sattar: তৃণমূলের ঝান্ডা না ধরে মমতা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আব্দুস সাত্তার, বাঙালি মুসলিম সমাজের প্রত্যাশা বাড়ছে পূরণ করতে পারবেন?
সেখ ইবাদুল ইসলাম: ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পর পশ্চিমবাংলার রাজনীতির চিত্রটা অনেকটাই বদলে গেছে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। বিরোধীদলের অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে। ২০১১ সালের পরেই আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি দল ভাঙার খেলাটা তীব্রভাবে হয়েছে এই বাংলায়। আজ যে কংগ্রেস কিংবা সিপিএমে আছে কালকেই তাকে দেখা যেতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসে। একুশে জুলাই কিম্বা বিভিন্ন তৃণমূলের সভার সমাবেশে বিরোধী নেতা কর্মীদের দল পরিবর্তন ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
কিন্তু ২০২৪ সালে কোথায় যেন বিষয়টি পাল্টে গেল। পাল্টে গেল কার জন্য? বামফ্রন্ট সরকারের আমলের মাদ্রাসা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, রাজ্যের সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী ড .আব্দুস সাত্তার এর ক্ষেত্রে! তৃণমূলের ঝান্ডা ধরাটা কোথায় যেন ব্যতিক্রমী হয়ে গেল। তৃণমূল কংগ্রেস কেন এই ব্যতিক্রমী ভাবে আব্দুস সাত্তারকে দলে নিল তা নিয়ে হয়তো গবেষণা হতে পারে। কিন্তু বাংলার সংখ্যালঘু সমাজে ইতিমধ্যেই এটা আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। আব্দুস সাত্তার সাহেবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ব্যক্তিগতভাবে কুড়ি বছরের তারও বেশি সময় ধরে তিনি আমাকে চেনেন এবং জানেন। আব্দুস সাত্তার সাহেব একজন কর্মযোগী মানুষ। এ নিয়ে কোন সন্দেহ আমাদের মধ্যে নেই।
কিন্তু মুশকিলটা হলো বামফ্রন্টে সরকারের আমলে ডঃ আব্দুস সাত্তারের কাজ করার সুবিধা হয়েছিল কেন তিনি অনিল বিশ্বাসের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। বামফ্রন্ট সরকারের আমলের রাজনীতির খোঁজ-খবর যারা রাখেন তারা এটা জানেন অনিল বিশ্বাস এর আস্থা পাওয়াটা দল এবং সরকারের কাজ করার পক্ষে কতটা সুবিধা জনক ছিল। যদিও অনেকেই বলবেন সাত্তার সাহেব যখন মন্ত্রী হয়েছিলেন তখন তো অনিল বিশ্বাস বেঁচে ছিলেন না। কিন্তু এটা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই অনিল বিশ্বাস বেঁচে থাকাকালীন সময়ে যে সকল ব্যক্তিকে রাজনীতির মঞ্চে তুলে এনেছিলেন বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্তা করে বসিয়েছিলেন তাদের সকলকে সিপিএমের নেতা জ্যোতি বসু থেকে শুরু করে বর্তমান নেতারাও সম্মান করেন। সুতরাং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আব্দুস সাত্তারকে যথেষ্ট সম্মান দেখাতেন এবং কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই জন্যই বাংলার সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের পর যেটুকু কাজ হয়েছে সেটা আব্দুস সাত্তারের আমলে হয়েছে বললে অতুক্তি হবে না।
আব্দুস সাত্তার ২০১১ সালের যখন রাইটার্স বিল্ডিং ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তখন তিনি আক্ষরিক অর্থেই সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য বাগান সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বলতে কোথাও দ্বিধা নেই মমতা সরকার এবং তার মুসলিম নেতারা সেই সাজানো বাগানকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাত্তার সাহেব যে বাগান সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেই বাগানকে নিয়মিত জল এবং নিয়মিত সার দিলেই আজকে বাংলার সংখ্যালঘুরা অনেক বেশি সফল হতে পারত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরকে আলাদা করা সবই ছিল তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত। কিন্তু প্রায় তেরো বছর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা করে যখন আব্দুস সাত্তারকে বসালেন বলতে দ্বিধা নেই তখন বাগানের অনেক গাছ শুকিয়ে গেছে।
নয় নয় করে মাদ্রাসাগুলিতে দশ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য। স্কুলগুলোতে যখন আইসিটি শিক্ষক আছে তখন মাদ্রাসা গুলিতে কম্পিউটার শিক্ষক নেই। কিছু মাদ্রাসায় হয়তো আইসিটি শিক্ষক আছে কিন্তু যে সকল মাদ্রাসাগুলিতে কম্পিউটার দেয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সেই সকল অনেক মাদ্রাসাতেই কম্পিউটার শিক্ষক নেই। অথচ স্কুলে আছে সমস্যা গভীরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত প্রকল্প আন-এডেড মাদ্রাসা যেগুলির অনেকেই এখনো মিড ডে মিল পায় না। মিড ডে মিল থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে ছেলেমেয়েরা পড়তে যেতে চাই না। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন রয়েছে তার চেয়ারম্যান নেই। অভূতপূর্ব ব্যবস্থা মমতা সরকারের আমলে। মনে হয় সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান বলেই হয়তো এই অবহেলা। তা না হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র একদিনের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কোন আমলাকে বসিয়েছিলেন রাত্রি বারোটার সময় কলকাতা হাইকোর্ট খুলে শুনানি হয়েছিল। এই রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস করা মুসলিম নেতাদের এইটুকু ক্ষমতা হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে গিয়ে বলা যে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কেন আমলাকে বসানো হয়েছে দিনের পর দিন।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম এর চেয়ারম্যান পদে আমলা বসেছেন। সিপিএমের আমলে যেখানে এই দফতর তৈরি হওয়ার পর থেকেই মোহাম্মদ সেলিম ছিলেন চেয়ারম্যান সেখানে মমতা সরকারের আমলে কেন আমলা? বড্ড জানতে ইচ্ছা করে? বাংলায় কি কোনো সংখ্যালঘু সমাজের মানুষ নেই যিনি ওই চেয়ারে বসতে পারেন?
সুতরাং মমতার ব্যানার্জি এর আমলে এই বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে গেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। ওবিসি সংরক্ষণ এখন সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে কবে কোথায় কিভাবে তার সমাধান হবে? কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। সার্বিকভাবে এই শুকিয়ে যাওয়া বাগানের বর্তমানে মালির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ড. আব্দুস সাত্তারকে। তিনি কি পারবেন আবার এই বাগানকে সজীব করে তুলতে! সেটা কি সম্ভব হবে? নাকি আব্দুস সাত্তার ক্যাবিনেট মর্যাদার একজন মন্ত্রী হিসাবে রয়ে যাবেন ?
এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। তবে শেষ কথায় একটা যদি সত্যিকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে এই বাংলার সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন করার তাহলে সাত্তারকে অধিকার দিতে হবে। ক্ষমতা দিতে হবে এবং তাঁর কথা সরকারকে শুনতে হবে। তা না হলে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মরহুম জনাব নূরে আলম চৌধুরী, একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে মন্ত্রী হিসাবে আমি দুধের দাম খুব কম পয়সা বাড়িয়েছিলাম। তার জন্য ক্যাবিনেটের অন্যান্য সদস্যদের সামনে যেভাবে মমতা আমাকে ধমক দিয়েছিলেন। তা ছিল আমার কাছে অকল্পনীয়। বিচারপতি হিসাবে শুধু নয় কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে আমি অবসর নিয়েছিলাম তারপর মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে বিধায়ক হই, কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে আমি ব্যর্থ কিনা জানিনা তবে সফল হতে চেষ্টা করেছিলাম পারিনি। একদিন হয়তো এই আক্ষেপ আব্দুস সাত্তারকেও করতে হতে পারে। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আব্দুস সাত্তারকে সঠিকভাবে ক্ষমতা দিলে তিনি অবশ্যই পারবেন শুকিয়ে যাওয়া বাগানকে সজীব করে তুলতে।।