সম্প্রীতির সোপান উৎসব, বিষয়ে আলোচনা বাংলার জনরবের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে
সংবাদদাতা বাংলার জনরব: ভারতবর্ষ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ নিজনিজ ধর্মীয় রীতিরেয়াজ মোতাবেক ধর্মীয় উৎসবাদি উদযাপন পালন করলেও উৎসবের আনন্দ জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য। এটাই শ্বাশত নিয়ম। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই নিউজ পোর্টাল বাংলার জনরবের সাহিত্য বিভাগ গত ২৬ অক্টোবর ২০২৪ সন্ধ্যায় এক অনাড়ম্বর ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। যাতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন গুয়াহাটির দুই সংস্কৃতি মনস্ক ব্যাক্তিত্ব অজিত কুমার সেন ও অসীম কুমার ঘোষ, বাঁকুড়ার বিশিষ্ট সাহিত্যিক গবেষক ড. আশিস কুমার নন্দী, মুর্শিদাবাদের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কবি সৈয়দ সোফিয়া নওয়াজ এবং কলকাতার বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মায়া দাস।
উল্লিখিত বিষয়ে আলোচনা, গান ও কবিতার সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার সূচনায় প্রারম্ভিক বক্তব্য পেশ করেন বাংলার জনরবের সম্মাননীয় সম্পাদক ইবাদুল ইসলাম। তিনি বলেন প্রতি ইংরেজি মাসের চতুর্থ শনিবার বাংলার জনরবের মাসিক ভার্চুয়াল সাহিত্য সংস্কৃতির যে অনুষ্ঠান হয়ে আসছে তার মূল লক্ষ্য একদিকে গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিভাকে তুলে এনে মূল স্রোতের সাথে পরিচয় ঘটানো, অন্যদিকে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার মধ্যে যাতে সমন্বয় সাধন হয় সেই প্রয়াস চালানো । আজকের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সেটাই। সমাজে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন হলেও উৎসবের আনন্দ যাতে নির্বিঘ্নে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় আজকের অনুষ্ঠানের মতো বিবিধ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সেই প্রয়াস করা হয়।

সাহিত্য সম্পাদক সেখ আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুভ উদ্ভোধন হয় আমন্ত্রিত সংগীত শিল্পী মায়া দাসের সুকন্ঠে পরিবেশিত সংগীত দিয়ে। তিনি ‘সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল’ কালজয়ী সংগীতের ভেতর দিয়ে অনুষ্ঠানের সুরটি বেঁধে দেন। এরপর তিনি পরিবেশন করেন রাগপ্রধান নজরুল গীতি ‘অরুন কান্তি কে গো যোগী ভিখারি ‘।
আলোচনার শুরুতে ড. আশিস কুমার নন্দী বলেন, ধর্মীয় উৎসব আমাদের চাই, কেননা উৎসব আমাদের সত্য সুন্দর কল্যাণের মন্ত্র শেখায়। প্রসঙ্গত তিনি উল্লেখ করেন এই দেশে একাধারে হিন্দু রাজারা মুসলিম,খ্রীষ্টান, জৈন, বৌদ্ধদের যেমন ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করেছেন তেমনি সম্রাট আকবর বাদশাও এই দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্য সম্প্রদায়ের উপাসনালয় এবং প্রচার প্রসারের ভূমিকা পালন করেছেন। আলোচনা ছাড়াও তিনি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বরচিত দুটি মূল্যবান কবিতা ‘আবু চাচা’ ও ‘আবাহন’ উপস্থাপন করেন।
নাট্যকার ও বাচিক শিল্পী অসীম কুমার ঘোষ অনুষ্ঠানের বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, আজকের উৎসব সমন্বয়ের উৎসব। তবে ‘ সম্প্রীতির সোপান উৎসব’ এই বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং ভাবগম্ভীর। তাঁর সংক্ষিপ্ত কথার রেস ধরে তিনি আবৃত্তি করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গীতিকার ও ছড়াকার সলিল চৌধুরীর চিরস্মরণীয় ছড়া ‘বোঝার ছড়া’। এছাড়াও তিনি আবৃত্তি করেন গুয়াহাটির বিশিষ্ট কবি সজল কুমার পালের ‘মল্লিকা তোমার জন্যে’ এবং বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদক সেখ আব্দুল মান্নানের ‘মায়ের ঘ্রাণ’ কবিতা দুটি। তাঁর ভরাট কন্ঠের আবৃত্তি বেশ শ্রুতিমধুর হয়েছিল।
গুয়াহাটি তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী তথা বিশিষ্ট সমাজ সচেতক অজিত কুমার সেন বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেন। তিনি সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে দিয়ে কিভাবে সর্বসাধারণের মধ্যে মৈত্রীর ভাব রক্ষিত হয় তা সবিস্তারে বর্ণনা করেন। একই সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামের মূল কথা নিজ ধর্মের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। আলোচনার পাশাপাশি তিনি আবৃত্তি করেন নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ কবি কৃষ্ণা গুহ বোসের ‘ দর্শন কথা’ ও সেখ আব্দুল মান্নানের ‘ জাতির পিতা’ কবিতাগুলি।
অনুষ্ঠানের বিদগ্ধ অতিথি সোফিয়া নওয়াজ উল্লিখিত বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আলোচ্য বিষয়ের গুরুত্ব আরোপ করে বলেন আজকের দিনে এ ধরণের আলোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ ধরণের আলোচনা যত বেশি হবে ততই সমাজে ধর্ম নির্বিশেষে উৎসবের আনন্দ আপামর মানুষের মাঝে সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরিতে সাহায্য করবে। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে তিনি পাঠ করে শোনান অস্থির সময়ের প্রেক্ষিতে রচিত তাঁর কবিতা ‘আমি এক নির্বাসিত দ্বীপ।’
এদিন শিল্পী মায়া দিবসের সংগীত দিয়ে যেমন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল তেমনি তাঁর গান দিয়েই অনুষ্ঠানের সমাপন হয়।