জেলা 

জিডি স্টাডি সার্কেলের উদ্যোগে হাতে-কলমে শিক্ষাদান নিয়ে শিক্ষক কর্মশালা

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন : শুধু লেকচার মেথড নয়, পাঠদান আকর্ষণীয় করে তুলতে হাতে-কলমে করে দেখানো অপরিহার্য করে তুলুন, এমনই আহ্বান নিয়ে এবছর জিডি স্টাডি সার্কেল আয়োজন করেছিল শিক্ষকদের নিয়ে বিশেষ কর্মশালা। বর্ধমান আল-আমিন মিশনে গত ১৯-২০ অক্টোবর দুদিনের কর্মশালায় প্রথম দিন আহ্বান জানানো হয়েছিল শিক্ষকদের সঙ্গে সঙ্গে ৩০ টি মিশনের সম্পাদকদেরকেও। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পর তার গুণমান বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণ কীভাবে হতে হবে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয় সম্পাদকদের সঙ্গে। সেখানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক পাঠভবন সোসাইটির সম্পাদক বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনুসন্ধান সোসাইটির সভাপতি ডঃ দেবব্রত মুখোপাধ্যায় প্রমূখ।

দুদিনের কর্মশালা শুরু হয় বর্ধমান আল-আমিন মিশনের সাধারণ সম্পাদক আসফার হোসেনের স্বাগত ভাষণ দিয়ে।

Advertisement

বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ত্রিশটি মিশনের ৭৫ জন শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন দুদিনের এই কর্মশালা থেকে আমরা কতটা নিজেদেরকে উন্নীত করতে পারি, সেটা যেমন বড়ো কথা, তেমনি তা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে কতখানি পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছেন, সেটাই হল আসল কথা। কি-নোট স্পিচ দেন জিডি মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত আই.এ.এস শেখ নুরুল হক। তিনি বলেন এ বছরের শিক্ষক কর্মশালার মুখ্য বিষয়– হাতে-কলমে শিক্ষাদান। এ বিষয়ে অনুসন্ধান সোসাইটি আমাদের সঙ্গে বিশেষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাংলা, ইংরেজি, জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান এবং গণিত, মাধ্যমিক পর্যায়ের এই পাঁচটি বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের পরিচালনায় চলবে দুদিনের এই কর্মশালা। কী করে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় পড়াশোনাকে সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন তাঁরা। ছোটো ছোটো কম দামি ফেলে দেওয়া বস্তু থেকে কী করে মডেল বানাতে হয় এবং তা কিশোরমতি পড়ুয়াদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হয় কীভাবে, সে বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকগণ হ্যান্ড-আউট দেবেন। দিল্লি থেকে এই কর্মশালায় সকলকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অনুসন্ধান সোসাইটির মুখ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক মতিয়ার রহমান খান। তিনি বলেন পড়ানো একটা আর্ট, এটাকে সার্বক্ষণিক চিন্তা-ভাবনা-চর্চার মধ্যে রেখে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ক্রমান্বয়ে সময়োপযোগী করে তুলতে হবে, তবেই শিক্ষকতার সার্থকতা।

কর্মশালার প্রথম দিনে উপস্থিত বিভিন্ন গুণীজন ও শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে জিডি স্টাডি সার্কেলের অন্তর্গত দক্ষিণ দিনাজপুরের বেস আন-নূরকে এ বছরের সেরা স্কুল ঘোষণা করা হয়। পাঠভবন সোসাইটির পক্ষ থেকে তাঁদেরকে বিশেষভাবে সম্মানিত ও উপহার প্রদান করা হবে, সে কথাও ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও ধী-লার্ন অ্যাকাডেমির সহযোগিতায় ‘শেখা-শিখি’ নামের একটি অত্যন্ত মূল্যবান ভাষা, সাহিত্য ও বিজ্ঞান কেন্দ্রিক পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। শিক্ষকদের জন্য গবেষণাধর্মী এই পুস্তিকা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তা হ্যান্ডবুক হিসেবে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন বিভিন্ন মিশন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কর্মশালার দ্বিতীয় দিন ছিল একেবারেই ভিন্ন ধরনের। দিনের শুরুতেই কোন পাঠের জন্য কেমন মডেল বানানো যেতে পারে, তা বুঝিয়ে দিয়ে উপকরণ দিয়ে দেওয়া হয় অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গিয়ে তাঁরা কাগজ, থার্মোকল কেটে বিভিন্ন বিষয়ের রং-বেরঙের আকর্ষণীয় মডেল তৈরি করেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে পাঠ্য বিষয়গুলিকে চোখের সামনে তুলে ধরা হয়। সেগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে কিভাবে উপস্থাপন করা হবে তা-ও ব্যাখ্যা করে বোঝান তাঁরা। অভিভূত হয়ে পড়েন শেখ নুরুল হক সহ লিয়াকত আলী, সৈয়দ নাসির উদ্দিন প্রমূখ যাঁরা বিভিন্ন ঘরে গিয়ে গিয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার এই কর্মশালা পর্যবেক্ষণ করেন। সমাপ্তি অধিবেশনে তাঁদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারাও দুদিনের অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার কথা সুন্দর ভাবে সকলের সামনে তুলে ধরেন।

হাতে-কলমে গণিত বিভাগে সেরা মডেল প্রস্তুতি ও প্রদর্শনীর জন্য পুরস্কার জিতে নেয় বর্ধমান আল-আমিন মিশনের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রধান শিক্ষক মির্জা ফারুক তাঁদের এই কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানান। সমগ্র কর্মশালায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আতিথেয়তার জন্য মিশনের কর্তৃপক্ষ সহ সকলকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানান অধ্যাপক বি এন দাস, ডঃ শশাঙ্ক শেখর মন্ডল, বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত, ডঃ পার্থ সারথি দাস, কাজী নিজাম উদ্দিন, ডঃ স্বাগতা বসাক, জহরলাল নাইয়া, অলোক বর্ধন, গৌরাঙ্গ সরখেল, আনিসুর আলী জমাদার প্রমূখ।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ