জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে বামফ্রন্ট! জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়াকে সমর্থন করার জন্য কেন আপত্তি জানাচ্ছে তৃণমুল! মেডিকেলে দুর্নীতি ও থ্রেট কালচারের পক্ষে কি তৃণমূল?
বিশেষ প্রতিনিধি : জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সমর্থন করছে বামফ্রন্ট এটা নতুন কিছু কথা নয়। এ বিষয়ে যারা একটু খোঁজখবর রাখেন তারা স্পষ্ট জানতে পারবে যে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের পেছনে বামফ্রন্টের একটা বড় সমর্থন রয়েছে। কারণ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও তৃণমূল কংগ্রেস এখনো সেভাবে চিকিৎসক ই বলুন আর শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই বলুন সংগঠন দানা বাঁধতে পারেনি। কিছু সুযোগ সন্ধানী ধান্দাবাজ এবং আদর্শহীন ব্যক্তি চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু নিজের নামে ভোট চান সেহেতু সংগঠন করার দিকে মনোনিবেশ করেননি। তাই সংকটকালে তৃণমূল নেতারা এখন হাত কামড়াতে শুরু করেছেন। তাদের দলে থাকা একজন সবজান্তা নেতা তিনি প্রকাশ্যেই ধরে ফেলেছেন বলে দাবি করেছেন যে এই জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের পেছনে আছেন বাম দলের নেতারা। তাঁর তার এই স্বভাব সিদ্ধ গবেষণালব্ধ বিষয়টির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত এখনই তাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে দেওয়া।
নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলনকে সমর্থন করার দায় এবং দায়িত্ব দুটোই থাকা উচিত ছিল শাসকদলের নিজের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি নিজেকে স্বচ্ছতার প্রতীক বলে দাবি করে থাকেন তিনি যদি সেটাই করেন তাহলে তার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব ছিল চিকিৎসকদের এই দাবিগুলোকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া এবং মেনে নেওয়া। জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে যেহেতু বিজেপি নেই তাই হয়তো তৃণমূলের মুখপাত্রের পাত্র জ্বালা হচ্ছে। কারণ বিজেপি আর তৃণমূল একই মুদ্রার এপিঠ ওপিট। এটা সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে ধরা পড়েছে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের পিছনে বিজেপি কিংবা শুভেন্দু অধিকারীরা থাকলে এতক্ষণ সেই আন্দোলনকে হাইজ্যাক করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে অনেক সহজ হয়ে যেত কিন্তু হচ্ছে না কারণ পেছনে রয়েছে পাকা মাথার বামেরা। আর এজন্যই তৃণমূল নেতৃত্বের তীব্র আপত্তি হচ্ছে। তৃণমূল মুখপাত্রের এটুকু দাবি করতে সাহস হচ্ছে না যে মেডিকেল কলেজগুলোকে থ্রেট কালচার মুক্ত করতে হবে এবং মেধাবীদের যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। একমাত্র মেধাই হবে মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়াশোনার মূল মাপকাঠি। টাকার বিনিময়ে ফেল করে দেওয়া আবার টাকার বিনিময়ে পাশ করে দেওয়া যে রীতি তৃণমূলের আমলে মেডিকেল কলেজগুলোতে চালু হয়েছে তা বন্ধ করতে হবে এই দাবিতে সরব হতে কোন তৃণমূল নেতাকে আমরা দেখলাম না।
আর বামেরা যদি থেকে থাকেন তারা যদি এই আন্দোলনকে সমর্থন করে থাকেন তারা যদি মেডিকেল কলেজগুলি থেকে থ্রেট কালচার মুক্ত করতে আন্দোলনকে সমর্থন করে থাকেন তাহলে সেটা ভালো না থ্রেট কালচারের পক্ষে কথা বলে বড় বড় গল্প তৈরি করাটা মানুষের কাছে ভালো বলে মনে হয়? যাই হোক সিপিএম নেতা মোহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন যে তাদের পক্ষ থেকে সাধারণ নাগরিকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে যে শুক্রবারের সমাবেশে যেন হাজির হয়! কোন দলীয় পতাকা নিয়ে নয় সাধারণ নাগরিক হিসেবে জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সহানুভূতি এবং সমর্থন জানাতে তাদের দলের নেতারাও দূরে দাঁড়িয়ে থেকে এই বিষয়টিকে সমর্থন দেবেন। এরপরেই অবশ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ খোঁচা দিয়ে বলেছেন তাহলে এবার আপনারা অনিতা দেওয়ান কিংবা নার্স বর্ণালীর বিষয়টিও সামনে আনুন! আশির দশকে ঘটে যাওয়া অনিতা দেওয়ানের ঘটনাকে সামনে এনে তৃণমূল কংগ্রেসের কী লাভ হবে সেটা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। আর এইসব নেতাদের জন্যই তৃণমূল কংগ্রেসকে আগামী দিনে এই রাজ্য থেকে কার্যত উঠে যেতে পারে তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।