সংখ্যালঘু সমাজ নিয়ে কিছু কথা, কিছু ব্যাথা!/ আবদুল ওহাব
আবদুল ওহাব :কিছু কথা না বললে নয়, আজ সারা বাংলায় তথা ভারতে কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের নাম কুড়াবার জন্য বা রাজনৈতিকভাবে কিছু পোস্ট হোল্ড করার উদ্দেশ্যে অথবা কিছু পয়সা রোজগার করার উদ্দেশ্যে কিছু নামধারী সংখ্যালঘু সংগঠন বিভিন্ন জায়গায় বা বিভিন্ন সময় সেমিনার করে থাকেন। সংখ্যালঘুর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল মাইনরিটি বলা হয়। ভারতের সংবিধানে ৩০ এর ধারা অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের অধিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। এই অধিকারের বিরুদ্ধে আমাদেরই তথাকথিত কিছু শিক্ষিত পন্ডিতমশাইরা সুপ্রিম কোর্ট ে কেস করে সংখ্যালঘুদের অধিকার বিনষ্ট করে দিয়েছে। আজ আবার তারা সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন সম্পর্কে নানা জায়গায় সভা সমিতি বা সেমিনার করে থাকেন।
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যেমন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অধীনে যে সমস্ত মাদ্রাসা গুলি রয়েছে সেখানে দিনের পর দিন সংখ্যালঘুদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে অদূর ভবিষ্যতের আসাম ইউপির মত মাদ্রাসার শিক্ষা পর্ষদ থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আমার ব্যক্তিগত মতামতে সংখ্যালঘুদের অধিকার সংখ্যালঘুরাই নষ্ট করে দিচ্ছেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। সেটা কেউ যদি ভেবেচিন্তে দেখেন তাহলে পরিষ্কার ছবি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়ে যাবে। শুধুমাত্র মাদ্রাসার ক্ষেত্রে নয় আজ যারা জেগে উঠেছেন ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার করার জন্য তারা কি ভেবে দেখেছেন আজ অবধি ওয়াকফ সম্পত্তি গুলি কারা নষ্ট করছেন বা করেছেন বা বিক্রি করে খেয়েছেন বা খাচ্ছেন?
সরকার যে পলিসি নিয়েছে নিঃসন্দেহ সেটি খারাপ আমি খুব ভালো করে জানি বিশেষ করে কলকাতার বুকে কত মুসলিম এমএলএ মিনিস্টার উকিল মোক্তার সেইসঙ্গে মতোয়াল্লিরা ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি দখল করে কেউ রেখেছেন আর কেউবা বিক্রি করে খেয়েছেন। এটা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? ঠিক তেমনি মাদ্রাসাগুলির বিরুদ্ধে সরকার যে পলিসি নিক না কেন, আজ যারা মাদ্রাসার সার্ভিস কমিশন বা মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদে বা এমএলএ মিনিস্টার বা যারা মেম্বার তারা তো নিজেরাই নিজেদের কাজ না করে নিজের সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের কথা না ভেবে তারা দিনের পর দিন নিজেদের চেয়ার বা পোস্ট বা কিছু টাকা রোজগার করার ধান্দায় নিজেরাই শেষ করে দিচ্ছেন, সেখানে সরকার বা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের দোষারোপ করে লাভ কি?
যতদিন পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্পদের মানুষেরা নিজেদের ধান্দাবাজি বা চামচাগিরি না ছাড়বেন ততদিন পর্যন্ত এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের কিছু হবে না যেভাবে চলছে এইভাবে চলতে থাকবে। এই কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি কয়েকটি জেলায় মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় গিয়ে একটা ভ্রমণ করে এলেন আসার পর ফলাও করে তারা বলতে লাগলেন যে আমরা এই মাদ্রাসার গুলির উন্নয়নের কাজে দৌড়ে বেড়াচ্ছি। এদের তো হাড়ে হাড়ে আমি চিনি সে কথাগুলি বলে লাভ নেই। বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম নামে যে সংগঠনটি সংখ্যালঘুদের মাদ্রাসাগুলি বাঁচানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে জিতে এসে বড় বড় কথা বলছেন। কিন্তু ভেবে দেখলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। যেমন ঘর পোড়া গরু সিঁদুরের মেঘ দেখলে ভয় পায়। আজ সেই অবস্থা আমাদের। আমি একটা প্রশ্ন করি আজ যারা এম সি বা ম্যানেজিং কমিটির বিপক্ষে এবং সার্ভিস কমিশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট গেলেন। আচ্ছা মাদ্রাসায় কমিটি গঠন করার কোন কি প্রয়োজন আছে? মেন কাজ তো ছিল নতুন মাদ্রাসা তৈরি, শিক্ষক নিয়োগ আজকের দিনে সেই এম সি কে বলা হয় চোর তাহলে এমসি ইলেকশন বা সেলেকশন করার দরকার কি? তারা কি কেবল এ সি আর এর টাকা মিড ডে মিলের টাকা হেডমাস্টার মশাইদের সঙ্গে নিয়ে ঝেড়ে খাওয়ার জন্য কি কেবল এই কমিটি গঠন? এমন অনেক মাদ্রাসা আছে যেখানে টিআইসি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পিপি পর্যন্ত করেননি। আমি মনে করি এম সির কোন প্রয়োজন নেই এডমিনিস্ট্রেট আর যথেষ্ট। যারা উন্নয়নের কথা বলছেন তাদেরকে আরেকটি প্রশ্ন করি বহু মাদ্রাসায় শিক্ষক নেই। সেখানে তারা নীরব কেন? বছরে একবার করে রাজ্য সম্মেলন করে দেখাতে চান যে আমরা কত বড় সংগঠনের কাজ করছি। আশা করি সমালোচনা না করে সঠিক উত্তর পেলে খুশি হব।
লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সমাজসেবী।