হরিয়ানায় বিজেপির জয় ভারতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদির গুরুত্ব আরো বাড়লো!
সেখ ইবাদুল ইসলাম: সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দল একক গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় অনেকটাই মুষড়ে পড়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতিশ কুমারের সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসে থাকলেও প্রতিনিয়ত তার নেতৃত্ব নিয়ে বিজেপির অন্দরে এবং আরএসএসের ভেতরে আলোচনা ও সমালোচনা চলছিল। এমনকি বিজেপি দলেরই প্রবীন নেতারা হরিয়ানায় হেরে গেলে নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রীদের পথ চলে যেতে পারে এমনও একান্তে প্রচার করে চলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার সম্ভব হলো না। সমস্ত রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের হিসাব নিকাশ কে পাল্টে দিয়ে কার্যত বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়েই হরিয়ানায় ক্ষমতা এলেন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি।
হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির স্ট্যাটেজি ছিল দেখার মত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সেভাবে প্রচার করেননি এই নির্বাচনে। নির্বাচনে জেতার নানা কৌশল অবলম্বন করছিলেন বলেই এখন আমাদের ধারণা যদিও ওই সময় বিভিন্ন সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছিলেন যেহেতু হরিয়ানাতে হেরে যাবে বিজেপি সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেভাবে প্রচারে আসছেন না। এটাও ঠিক প্রধানমন্ত্রীর প্রচার সভাতে তেমন লোকজনক হয়নি। তা সত্ত্বেও জিতেছে নরেন্দ্র মোদি জিতেছে বিজেপি। আর এমন ভাবে জিতেছে কেউ বলতে পারবেনা যে জনাদেশ তাদের বিরুদ্ধে ছিল। বিজেপির এই জয় প্রমাণ করছে শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে শুধুমাত্র ভালো ভালো ভাষণ দিয়ে ভোটে জেতা যায় না ভোটে জিততে গেলে সংগঠনকে মজবুত করতে হয়। শুধুমাত্র সংগঠনের জোরে বিজেপি হারানো জমি পুনরায় ফিরে পেয়েছে বলে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা মনে করছেন।
এখানেই শেষ নয় ভোটের অঙ্কে বেশি শতাংশ ভোট পেয়েও কংগ্রেস আসন সংখ্যা এতটাই কমে গেছে যে বলার মত কিছু নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে প্রায় দশটি আসন পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস দল। এর ফলে আর যে কোনভাবেই সরকার গড়ার মতো জায়গায় কংগ্রেস পৌঁছাতে পারবেনা তার বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে বিজেপি প্রায় অর্ধেক আসন পেয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। সেটা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই।
হরিয়ানার নির্বাচন থেকে শিক্ষনীয় বিষয় হল এটাই জনা দেশ নিজেদের পক্ষে আনতে গেলে শুধু মানুষের ক্ষোভ থাকলেই হবে না সেটাকে কাজে লাগাতে হবে ভোট বাক্সে আনতে হবে। কংগ্রেস দল এই কাজটা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই জেতার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও হেরে গেল। আরেকটা কথা খুব স্পষ্ট ভাষায় ধরা পড়েছে রাহুল গান্ধী যে কথাটা বারবার বলতেন যে, আমার দলেও আরএসএস-এর লোকেরা আছে। সেটা হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে প্রমাণ করলো ভোটে জেতাটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো কে মুখ্যমন্ত্রী হবে সেটা ঠিক করা। আর এটা করতে গিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকন্দন তীব্র আকার ধারণ করে। ভূপেন্দ্র সিং হুডা যেভাবে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে নিজের সমর্থকদের প্রার্থী করেছে সেটাও কংগ্রেসের দলের কাছে অনেকটাই বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে।
এই নির্বাচন থেকে এই বিষয়টি খুব স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে যে এখনো নরেন্দ্র মোদির বিকল্প দেশে নেই। রাহুল গান্ধী চেষ্টা করলেও তার দলের অভ্যন্তরে আরএসএস এবং বিজেপির কিছু এজেন্ট তাকে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে যার ফলে যে তার সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও। কংগ্রেস হরিয়ানাতে হেরে গেল।