প্রচ্ছদ 

রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

শেয়ার করুন
  • 345
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে এখন বদল দেখা দিয়েছে । ৭২ বছর পর বাংলার মানুষ আবার নতুন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে ভাবছে । কয়েক দিন আগেই বাংলার জনপ্রিয় সমাজকর্মী এই প্রতিবেদককে বললেন , এই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে কী , আসবে না সেটা বড় প্রশ্ন নয় . বড় প্রশ্ন হল বাংলায় সম্প্রীতির বন্ধন আলগা হয়ে গেছে । বিগত কয়েক বছরে আমাদের গর্বের পশ্চিমবাংলায় আরএসএস মদতপুষ্ট সংগঠন এবং কয়েকটি  সংখ্যালঘু সংগঠন যেভাবে রাস্তায় নেমে অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছে তাতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটলটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে । গত আট বছরে বাংলায় আরএসএস সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে । তারা এতটাই শক্তিশালী সংখ্যালঘুদের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাদের কাছে আত্মসর্মপন করতে হয়েছে । এখন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে হিন্দু বলে দাবি করতে হয় । শাসক দলের মদতে কীর্তন হয় । রামনবমীর মিছিল করতে হয় ।

পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু সমাজ ৪৭ সালের স্বাধীনতার পরও এতটা নিরাপত্তাহীনতায় ছিল না । ৬৪ দাঙ্গায় কলকাতা থেকে বাঙালি মুসলমানরা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও তার অসহায় হয়নি । আজ সমগ্র বাংলা জুড়ে মুসলিম সমাজ অসহায় হয়ে উঠেছে । তাঁদের হয়ে কথা বলার মত কোনো নেতা নেত্রী শাসক দলে আর দেখা যাচ্ছে না । শাসক দলে যে কয়েকজন মুসলিম নেতা আছেন তাদের সেই অর্থে কোনো ক্ষমতা নেই । তাঁরা নিজেদের গদি বাঁচাতে ব্যস্ত । সত্য কথা সহজে বলতে তারা পারছেন না । বরং যারা বাইরে থেকে বলার চেষ্টা করছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে । হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে ।

Advertisement

আসলে বাংলা জুড়ে নতুন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে । এই পরিবেশ তৈরির নেপথ্যে অনেকটাই দায়ী শাসক দল । ইমাম-ভাতা মোয়াজ্জেম ভাতা ওয়াকফ বোর্ডের আয় থেকে দেওয়া হয় ঠিকই কিন্ত প্রথমে বিষয়টিকে এমনভাবে দেখানো হয়েছিল যে তাতে মনে হয়েছে এটা সরকার দেয় । আর এতেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির সুবিধা হয়েছে সবচেয়ে বেশি । তারা প্রচারে বলছে মমতা সরকার যা করেছে তার সবটাই সংখ্যালঘুদের জন্য । হিন্দুদের জন্য তেমন কিছু করেনি । আর এই প্রচারে রাজ্যে বিজেপি বাজিমাত করতে পেরেছে । অথচ সত্য হল , মমতা সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য তেমন কিছুই করেনি । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও ইমাম ভাতা দেওয়া ছাড়া ।

বলা হচ্ছে সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে । সেটা তো কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প । বিশেষ করে কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-র আমলে মুসলিম ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য যে স্কলারশিপ দেওয়া শুরু হয়েছিল সেটাই এখনও মোদী সরকার চালু রেখেছে । সেই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে রাজ্যের মুসলিম ছেলেমেয়েরা । এতে রাজ্য সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা নেই । সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে দাবি করেছেন , ১.৭ কোটি সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েকে স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে । এটা যদি সত্য হয় তাহলে বলতে হবে এর অধিকাংশ কৃতিত্বটাই কেন্দ্র সরকারের । তাদের দেওয়ার টাকা সরকার শুধু মাত্র বিতরণ করছে ।

সুতরাং বিজেপির পক্ষ থেকে যে দাবি করা হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমানদের জন্য কাজ করছে এটা ঠিক নয় । সরকারি চাকরি থেকে আরম্ভ করে সব ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবস্থা বাম আমলের তুলনায় কোনো পরিবর্তন হয়নি ।

বরং রাজ্য জুড়ে বিগত আট বছরে মেরুকরণ স্পষ্ট হয়েছে । হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি আস্ফালন বৃদ্ধি পেয়েছে । বিভেদ স্পষ্ট হয়েছে । রাজ্যের সংখ্যালঘুরা মনে করছে তারা যে আশা-প্রত্যাশা নিয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিল সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি । উপরন্ত হুগলী মাদ্রাসার মত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । একই সময়ে তৈরি হওয়া হিন্দু স্কুলের ২০০ বছর যখন ঘটা করে উদযাপন করা হয় ঠিক তখনই হুগলী মাদ্রাসাকে বন্ধ করে দেওয়া হয় । অথচ এই মাদ্রাসাটি বাংলার নবজাগরণে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল । এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা উপমহাদেশের কৃতি সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন ।

সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয় । সংক্ষেপে বলা যেতে পারে , গ্রাম-বাংলার কিছু মুসলিম ছেলেমেয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা যেমন পেয়েছে একই সঙ্গে প্রতিদিন এই ক্ষমতার লড়াই-এ বলি হচ্ছে মুসলিম ছেলেমেয়েরাই । এছাড়া তেমন কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ছে না । আর যেটা সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ছে তা হল , সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ । আর এতেই আতংকিত রাজ্যের মুসলিমরা ।

রাজ্যের অধিকাংশ মুসলিম অধ্যাপক , শিক্ষক সমাজকর্মীরা মনে করছেন , বিজেপিকে রোখার ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেস দলেরই আছে । তাই কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানো উচিত । তাদের এই বক্তব্যের পর রাজ্যের সাধারণ মুসলিমদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারাও মনে করে বিজেপির বিকল্প একমাত্র কংগ্রেস । রাজ্যে কংগ্রেসের সম্ভাবনা আছে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সমাজে তাদের জনপ্রিয়তা আছে কিন্ত তাদের কোনো মুখ নেই । রাজ্য কংগ্রেস যদি জনপ্রিয় কিংবা সংখ্যালঘু সমাজের কোনো তরুনকে সামনে রেখে সংগঠন সাজায় তাহলে আগামী দিনে এই রাজ্যে কংগ্রেস তার হৃত গৌরব পুনরায় ফেরত পেতে পারে ।

 


শেয়ার করুন
  • 345
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

3 × three =