মুখস্থবিদ্যা নয়; বরং শিক্ষার্থী বিষয়বস্তুকে কতটুকু আত্মস্থ করতে পেরেছে, তার মূল্যায়ন প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন দক্ষতা নির্ণয় এবং আর্লি গোল সেটিং/ নায়ীমুল হক
*মুখস্থবিদ্যা নয়; বরং শিক্ষার্থী বিষয়বস্তুকে কতটুকু আত্মস্থ করতে পেরেছে, তার মূল্যায়ন প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন দক্ষতা নির্ণয় এবং আর্লি গোল সেটিং*
〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️〰️
মুখস্থ করিয়া পাস করাই তো চৌর্যবৃত্তি। যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায় তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়; আর যে ছেলে তার চেয়েও লুকাইয়া লয়, অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লইয়া যায় সেই বা কম কী করিল?
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভীষণ রকমের মুখস্থনির্ভর। মুখস্তবিদ্যা কখনোই শিক্ষার্থীর জন্য উপকারে আসতে পারে না। ‘গরুর রচনা’ কিংবা ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ নিয়ে প্রবন্ধ আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ছোটবেলায় মুখস্ত করেছি। ভাববার সময় এসে গেছে, তা এখন ঠিক কী কাজে লাগছে! বাস্তব জীবনে এর প্রয়োজন কতটুক!
একজন ব্যাংকের কর্মচারী তাঁকে কী কখনো লোন, ব্যালেন্স শিট, ডেবিট, ক্রেডিট, ইনভেস্টমেন্ট, ফরেন এক্সচেঞ্জ, লেটার অফ ক্রেডিট এসব মুখস্ত করে আসতে হয়! নাকি এর বাস্তব ব্যবহার শিখলেই তখন ভালো ব্যাংকার হতে পারেন।
গণিতের ক্ষেত্রেও একই কথা। ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃকোনের সমষ্টি ১৮০° হলে, চতুর্ভুজের চারটি অন্তঃকোনের সমষ্টি ৩৬০° কেন, তা যদি আমরা বুঝিয়ে না করাতে পারি, কেবলই মুখস্থবিদ্যা দিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।
শিক্ষকরা কেবলই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে দেবেন, উত্তর করিয়ে দেবেন, লিখিয়ে দেবেন, এভাবে পরীক্ষার ঘাট পার করিয়ে দেবেন। যদিও অভিভাবকদের চাহিদাও তাই। এতে কিন্তু আর যাই হোক ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের বোঝার ক্ষমতা তৈরি হবে না। এর ফলে জ্ঞানের চাহিদাও যাবে কমে।
এবার আসা যাক, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন এবং তা ব্যবহারিক জীবনে কীভাবে কাজে লাগতে পারে সে বিষয়ে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা কার কোন দিকে এবং সেই মোতাবেক টার্গেট ফিক্সিং এর ব্যাপারে। একই সঙ্গে শিক্ষক হিসেবে আমাদের ভূমিকা কতখানি সে বিষয়েও আলোচনা করা যাক।
আজকাল ‘আর্লি গোল সেটিং’ বা ‘সময়মতো জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো’ বিষয়ে ছেলেমেয়েদের সজাগ করার নানা রকম কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন দিকে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এগুলো সত্যিই খুবই সময়োপযোগী। কারণ,আসলে স্বপ্ন থেকে তৈরি হয় লক্ষ্য। ছোটবেলা থেকেই আমরা কাউকে আদর্শ ভাবি, নিজের অগোচরে তাঁকে অনুসরণ করি। অভিলাষ তৈরি হয় তাঁর জীবনশৈলী থেকে।
তাই, সেই স্বপ্নকে পরবর্তী ধাপে পৌঁছে নিয়ে যেতে চিন্তাভাবনার খোরাক পৌঁছে দিতে হয় ছোট থেকেই। এ বিষয়ে খুবই সচেতন হতে হয় বাড়ির বড়দের। বলাবাহুল্য সন্তানের জন্য এ দায়িত্ব তার মাতা-পিতার। তবে সচেতনভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের স্নেহ, মেলামেশা, পড়ানোর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেন, ছাত্র-ছাত্রীর কাছে তাঁরা যে পরিমাণ আস্থাশীল হয়ে ওঠেন, তাতে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সব সময় ছাত্র-ছাত্রীরা তার মেন্টর কী পরামর্শ দিচ্ছেন, তার দিকেই তারা তাকিয়ে থাকে। তাই, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা এ বিষয়ে খুব বেশি। কিশোরমতি বাচ্চাদের মন বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রকৃতি, প্যাশন, ইচ্ছে থেকে তার দক্ষতার দিকগুলি নির্ণয় করা যেতে পারে। আর পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারণ করা যেতে পারে কোন দিকে সে যেতে পারে। এটাই হল গোল সেটিং বা লক্ষ্য নির্ধারণ। অতঃপর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাজ হল দক্ষতা অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা ও জীবনের লক্ষ্যপথে ধাপে ধাপে ওরে কি করে এগিয়ে যেতে হয় তার পথ দেখানো।
__________________________________
লেখক: নায়ীমুল হক,
হরিনাভি ডিভিএএস হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক