বিচারাধীন বিষয় আলোচনা হলে লাইভ স্ট্রিমে আপত্তি কেন? : অশোক গঙ্গোপাধ্যায়
বিশেষ প্রতিনিধি : গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে নানা মুনি মত প্রকাশ করে চলেছেন। কেউ বলছেন লাইভ স্ট্রিম হলে অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না আবার কেউ বলছেন প্রশাসনিক বৈঠকে বা এই ধরনের বৈঠকে লাইভ স্ট্রিম প্রয়োজন নেই। এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় আজ শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়ের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে রাজি হননি, তা একেবারেই ওঁর মস্তিষ্কপ্রসূত যুক্তি। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে যদি আলোচনা হতে পারে, তা যদি রেকর্ড করা হতে পারে, তা হলে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আপত্তি থাকবে কেন? আইনে এ রকম কিছু নেই৷’’
বৃহস্পতিবার মমতা বলেছিলেন, ‘‘সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে। আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা চলতে পারে। চিঠিতে আমরা লিখেছিলাম, সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব না। ওঁরা যে কোনও ইস্যু তুলতে পারতেন। সেটা ওঁরা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানাতে পারতেন। আমরা যুগ্ম ভাবেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম।’’
অশোকের ব্যাখ্যা, সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছিল সরকার এবং চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচনাসাপেক্ষে জট কাটুক। পরোক্ষে সুপ্রিম কোর্টই আলোচনার প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিল। তাঁর কথায়, ‘‘সেই আলোচনা কী ভাবে হবে বা হবে না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কিছু বলেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই৷’’
আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, লাইভ স্ট্রিমিংয়ে কোনও আইনি বাধা ছিল না। বিকাশের কথায়, ‘‘চিত্রনাট্য অনুযায়ী বৈঠক হবে না বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী লাইভ স্ট্রিমিংয়ে রাজি হননি। অন্য সময় তো প্রশাসনিক বৈঠক লাইভ হয়। এখন কেন করলেন না?’’
আইনজীবী তথা শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর মতে,‘‘কোন আলোচনায় কোথায় লাইভ স্ট্রিমিং হয়? কোন আইনে রয়েছে যে, লাইভ স্ট্রিমিং বাধ্যতামূলক? জেদ করে একটার পর একটা শর্ত চাপানো হচ্ছে। এটা এক ধরনের দর কষাকষির রাজনীতি (বার্গেনিং পলিটিক্স) চলছে।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দরকার কী? বৈঠকটা তা হলে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে হোক। এটা কি কোনও যুক্তি হতে পারে?’’
তৃণমূলের অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, বিষয়টি যতটা না আইনি তার চেয়েও বেশি প্রশাসনিক। কোনও সরকারই এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনার লাইভ সম্প্রচার করবে না। কারণ বৈঠকে নানা রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তা থেকে বাইরে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। যা সামগ্রিক ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও শুভ সঙ্কেত হত না। তা ছাড়া সরকারের তরফ থেকে রেকর্ড করার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তাতে জুনিয়র ডাক্তারেরা রাজি হননি।