ওয়াকফ সংশোধনী বিল: জেপিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে জামাআতে ইসলামী হিন্দ এর শীর্ষ নেতৃত্ব
বিশেষ প্রতিনিধি : বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান তথা লোকসভার বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালের সঙ্গে বৈঠক করল জামাআতে ইসলামী হিন্দ। জামাআতের সর্বভারতীয় সভাপতি সৈয়দ সা’দাতুল্লাহ হুসাইনির নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ওয়াকফ সংশোধনী বিল-২০২৪ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট বিলের বিরোধিতা করেন তাঁরা।
শুক্রবার জামাআতের মারকাযী প্রতিনিধিদলে ছিলেন সভাপতি সাইয়েদ সাদাতুল্লাহ হোসায়েনি, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিম ইঞ্জিনিয়ার, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আমিনুল হাসান, আব্দুর রফিক সহ মোট ৬ জন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা ইতিমধ্যেই লোকসভায় পেশ হওয়া ওয়াকফ বিল সম্পর্কে জেপিসি চেয়ারম্যানের সামনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ, এটি দেশজুড়ে বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তির স্বায়ত্তশাসন এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি বড় রকমের হুমকি বলে উল্লেখ করেন জামাআত নেতারা। বিষয়টিকে সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী বলেও জানান তাঁরা। সর্বোপরি নরেন্দ্র মোদির ওয়াকফ বিল নিয়ে আপত্তির কথা সাংসদ জগদম্বিকা পালকে সাফ জানিয়ে দিয়ে আসেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কেন্দ্র সরকারের তরফে আনা বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় দেশজুড়ে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে কথা বলছেন জামাআত নেতারা। পাশাপাশি ওয়াকফ বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোয় সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের বৈঠক করছেন জামাআতের বিভিন্ন রাজ্যের শীর্ষনেতারা। জানা গিয়েছে, সবশেষে জামাআতে ইসলামী হিন্দের তরফে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল দিল্লিতে যৌথ সংসদীয় কমিটির সকল সদস্যের সঙ্গে এক টেবিলে মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মুসলিম সংগঠনগুলোর তরফে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল এনে মূলত দেশের বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তিকে কুক্ষিগত করতে চাইছে কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি দল। তাছাড়া ওয়াকফ বোর্ডে দুজন অমুসলিম প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে বিলটিতে। এতে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা সংক্রান্ত বোর্ডে অমুসলিমদের ঢুকিয়ে পুরো বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দিতে চাইছে মোদি সরকার। প্রশ্ন উঠছে, হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি কিংবা শিখ, পাঞ্জাবী, খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের ধর্মীয় সম্পত্তি, উপাসনালয় ইত্যাদির পরিচালন বোর্ড বা কমিটিতে দেশের কোথাও মুসলিম প্রতিনিধি রাখা হয় না। অথচ মুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে কেন অমুসলিম বা হিন্দু প্রতিনিধি ঢোকানোর পাঁয়তারা করছে কেন্দ্র সরকার। এমতাবস্থায় খোদ কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের জোটশরিক নীতীশ কুমারের জেডিএস, চন্দ্রবাবু নাইডু টিডিপি, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি-র মতো দলগুলোও ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করায় বাধ্য হয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠায় কেন্দ্র সরকার।
জেপিসিকে আপনার মতামত পাঠান, আহ্বান মুসলিম সংগঠনগুলোর জেপিসি-র তরফে এই বিল সম্পর্কে দেশবাসীর মতামত জানতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যান করে মোবাইল থেকে খুব সহজেই এই মতামত পাঠানো যাবে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ জেপিসি-র কাছে এই মতামত পাঠিয়েছেন। যারা এখনও এটা করেননি, তাদের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে মতামত জানানোর জন্য মুসলিম সংগঠনগুলো যৌথ উদ্যোগে বিবৃতি দিয়েছেন। এই কাজটি সকলের জন্য সহজ করার উদ্দেশ্যে একটি লিংক এবং কিউআর কোড প্রকাশ করেছে বোর্ড, সেই লিংকে ক্লিক করে অথবা কিউআর কোড স্ক্যান করে আমরা আমাদের মতামত JPC-কে পাঠাতে পারি। যদি লিংক কাজ না করে, তাহলে লিংক কপি করে গুগল ক্রোমে পেস্ট করে নিজের মতামত পাঠানো যেতে পারে। লিংক ওপেন করার পর হিন্দি বা ইংরেজি ভাষা নির্বাচন করুন, তার পরে “জিমেইল খুলুন” এ ক্লিক করুন। বার্তাটি জিমেইলে খুললে শুধু সেন্ড বাটনে ক্লিক করলেই আপনার মতামত JPC-র কাছে পৌঁছে যাবে। https://tinyurl.com/is-no-waqf-amendment
পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল এবং আলেমদের পক্ষ থেকে সকলের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের মতামত পাঠান। মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা শুক্রবার জুম্মার খুতবায় মসজিদের মুসুল্লিদেরকে উৎসাহিত করুন, যেন তারা উপরের লিংক বা কিউআর কোডে ক্লিক করে নিজেদের মতামত JPC-কে পাঠায়। মতামত পাঠানোর শেষ তারিখ ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
এই যৌথ আবেদনপত্রে সই করেছেন
১) ক্কারী ফজলুর রহমান – ইমাম ঈদায়েন, কলকাতা; প্রেসিডেন্ট: অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিল, মেম্বার: অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড
২) ডা. মসিহুর রহমান – আমীরে হালকা, জামাআতে ইসলামী হিন্দ, প:ব:
৩) মওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, প্রেসিডেন্ট: জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ
৪) মাওলানা মারুফ সালাফী – জমিয়তে আহলে হাদীস
৫) মাওলানা আবু তালেব রহমানী – সদস্য, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড
৬) মুফতি আব্দুল মাতিন – অল ইন্ডিয়া সুন্নাত ওয়াল জামাত
৭) আহমাদ হাসান ইমরান – সম্পাদক: পুবের কলম
৮) আব্দুল আযীয – জেনারেল সেক্রেটারি: এফডিসিএ
৯) মাওলানা যাকি মাদানি – জমিয়তে আহলে হাদীস
১০) নাসীর আহমেদ – জেনারেল সেক্রেটারি: কলকাতা খিলাফত কমিটি
১১) মুফতি তাহেরুল হক – সেক্রেটারি: দারুল কাযা, প:ব:
১২) মাওলানা মাযহারুল ইসলাম – প্রেসিডেন্ট: মজলিস উল উলামা ওয়াল আইম্মা
১৩) মুফতি খালিদ আযম হায়দারি – ইনচার্জ: উলেমা বোর্ড, প:ব:
১৪) শা’দাব মাসুম – সেক্রেটারি: জামাআতে ইসলামী হিন্দ, প:ব:
১৫) উমার আওয়িস – হিউম্যান কেয়ার ট্রাস্ট
১৬) সাঈদ বি.এস আল মামুন – প্রেসিডেন্ট: এসআইও অফ ইন্ডিয়া, প:ব:
১৭) ওসমান গণি – প্রেসিডেন্ট: সলিডাটিরিটি ইউথ মুভমেন্ট, প:ব:
১৮) মাওলানা মুজাহিদ হোসাইন হাবিবি – জেনারেল সেক্রেটারি: অল ইন্ডিয়া তাবলীগে এ সীরাত, প:ব:
১৯) মাওলানা আসলাম মিনাঈ – প্রখ্যাত বক্তা
২০) সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন – সাধারণ সম্পাদক: জমিয়তে উলামায়ে বাংলা, ফুরফুরা
মুখপাত্র: মাদ্রাসা শিক্ষক শিক্ষা কর্মী সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ।
২১) মাওলানা আমিনুল আম্বিয়া: ঐকতান মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদ
২২) মুফতি আব্দুল মুয়িদ কাশেমী – ইমাম` মিল্লাত নগর মসজিদ, তপসিয়া