জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান বিক্ষোভ চলছে, পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলবে! মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপ নিতে পারছেন না কেন?
বিশেষ প্রতিনিধি : পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা। সোমবার বিকেল থেকে লালবাজার অভিযান করার সময় তাদের এক দফা দাবি ছিল অবিলম্বে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু বিবি গাঙ্গুলির স্ট্রীট এবং ফিয়াস লেনের সংযোগস্থলে জুনিয়র চিকিৎসকদের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। এর ফলে ওইখানেই বসে পড়ে জুনিয়ার চিকিৎসকরা এবং তারা দাবি করতে থাকে পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সোমবার বিকেল থেকে যে অবস্থান কর্মসূচি চলছে তার সময়ের বিচারে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে এর পরেও অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট দাবি যতক্ষণ না পর্যন্ত পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ওখানেই বসে থাকবেন।
সোমবার বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কে পাঠানো হয় চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। ফলে আলোচনা কার্যত ভেস্তে যায়। সোমবার সারারাত ধরে অবস্থান চলার পর মঙ্গলবার ভোর থেকে আবারো অবস্থান কর্মসূচি চলছে।।
মঙ্গলবার ভোরে এই পরিস্থিতির মধ্যেই সকলকে এড়িয়ে লালবাজার ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় সিপি-কে। আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি তিনি হবেন কিনা, সে নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।
অন্যদিকে, ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের তরফে আন্দোলনকারীদের বার্তা পাঠানো হয়েছে, দরকারে আন্দোলনকারীদের তরফে একটি প্রতিনিধিদল লালবাজারের ভিতরে গিয়ে কথা বলতে পারে। এই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
তাঁদের স্পষ্ট দাবি একটাই, হয় পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ করুন, কিংবা তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করুন। অথবা ব্যারিকেড সরিয়ে চিকিৎসকদের যেতে দেওয়া হোক লালবাজারের দিকে। এই দাবিতেই আপাতত ফিয়ার্স লেনে ট্রাম লাইনের উপর অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
আন্দোলনের মাত্রা যত বাড়ছে, লালবাজারে পুলিশি তৎপরতাও তত বাড়ছে। ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে চারপাশ। পুলিশকর্মীরা। ব্যারিকেডের ওপারে বসে কড়া নজর রাখছেন চিকিৎসকদের গতিবিধির উপর। সেই ব্যারিকেড থেকে লালবাজারের দিকে আরও একটু এগোলেই প্রায় ৯ ফুট উঁচু, লোহার চওড়া আরও একটি ব্যারিকেড। অর্থাৎ আন্দোলনকারীরা যাতে কোনওভাবেই ভিতরে যেতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
গতকাল রাত যত বাড়তে থাকে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মানুষের ভিড়ও বাড়তে থাকে অবস্থানস্থলে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানাতে লালবাজারের সামনে পৌঁছে যান অভিনেত্রী সোহিনী সরকার, চৈতি ঘোষাল, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, দেবলীলা দত্ত-সহ টলিপাড়ার একঝাঁক শিল্পী। জোর গলায় তাঁরা বললেন, “এনাফ ইজ এনাফ। বিচার চাইতে এবার থেকে দরকার হলে প্রতিটা রাত জাগব।
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে মধ্যরাতে লালবাজারের আন্দোলনস্থলে দেখা মিলল অনেক সিনিয়র চিকিৎসককেও। বললেন, “ডিউটি সেরে এসেছি, জুনিয়রদের আন্দোলনকে বুস্ট আপ করতে।”
জানা যাচ্ছে, ৪ সেপ্টেম্বর লালবাজারের সামনে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের রাত দখলের কর্মসূচিতে সামিল হতে পারে আরজি করে নিহত শিক্ষার্থী চিকিৎসকের বাবা-মাও। ওই দিন তাঁরাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাত জাগবেন বলে জানালেন সোহিনীরা।
প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রদের দাবি মেনে কেন রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক আধিকারিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দিচ্ছেন না? দিনের পর দিন কলকাতার রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকলে সমস্যা তো নাগরিকদের হবেই সেক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দের কথা কেন বিবেচনা করছেন না! পুলিশ কমিশনার কে সরিয়ে দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কি ক্ষতি হবে তাও সাধারণমানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না? তাহলে কেন পুলিশ কমিশনারকে রক্ষা করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন! জুনিয়র চিকিৎসকদের আবেগ এবং সাধারন মানুষের ভাবাবেগকে সম্মান জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি আজি পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে অব্যাহতি দেবেন?