অন্যান্য কলকাতা 

বিনীত গোয়েলকে কেন মমতা সরাচ্ছেন না?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : অনেক আগেই বিনীত গোয়েলকে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ এ কথা ঠিকই আর জি কর মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কলকাতা পুলিশ তার দায় এড়াতে পারেনা। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই কলকাতা পুলিশের কমিশনার দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে গেছেন। প্রথমত ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যেই আরজিকর মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে পৌঁছে যান পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল।

ঘটনার দিন থেকে বিভিন্ন রকম ভাবে বিবৃতি দিয়ে পুলিশ কমিশনার এদেশের নাগরিককে অনেক বেশি সন্দেহভাজন করে তোলে। পুলিশ কমিশনার যেভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে শুধুমাত্র একজনকে মূল অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করে দাবি করেছিলেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাতেই আমজনতার সন্দেহ দৃঢ় হয়। শুধু তাই নয় ঘটনার পরে পরেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে সন্দীপ ঘোষ কিংবা সুপারকে সেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কেন তদন্ত নিয়ে এত সাফাই দিচ্ছিলেন পুলিশ কমিশনার?

Advertisement

এখানেই শেষ নয় ১৪ই আগস্ট রাতে যেভাবে আরজিকর মেডিকেল কলেজের ভেতরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা বেশ কিছুক্ষন ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে তারপরে নৈতিকতার দায় থেকে পুলিশ কমিশনার পদে বিনীত গোয়েলের থাকা উচিত ছিল না। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের অভিভাবক মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক প্রধান তিনি প্রথম দিনেই অর্থাৎ ১৪ই আগস্ট এর দিনেই সরিয়ে দিতে পারতেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে। ১৪ ই আগস্ট রাতের এই তাণ্ডব লীলা প্রমাণ করেছে কলকাতা পুলিশ কমিশনের পদে থাকার কোন অধিকার বর্তমান কমিশনারের নেই।

কিন্তু সমস্যা ওই জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর মানসিকতা যার ফলে বিনীত গোয়েলকে সরানো গেল না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই একটি মাত্র সিদ্ধান্তই তার সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে। আপনারা জানেন জুনিয়ার ডাক্তারদের সংগঠন দাবি করেছে বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ। মনে করা হয়েছিল সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারির পর জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে ভাটা পড়ে যাবে হয়তো সেই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থেকেই সিবিআই সন্দীপকে গ্রেফতার করে থাকতে পারে। না হলে ১৬ দিন ধরে ছেড়ে দেওয়ার পর হঠাৎই যেদিন চিকিৎসকরা পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে লালবাজার অভিযানের ডাক দিলেন সেদিনই গ্রেফতার করা হলো। রহস্য এখানে? কিন্তু চিকিৎসকরা অনড় অবস্থানে রয়েছেন তাদের দাবি একটাই বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও আর কোন অপশন খোলা নেই পুলিশ কমিশনারকে সরাতেই হবে। পুলিশ কমিশনার কে সরানোর পর এবার হয়তো দাবি আরো বৃহত্তর উঠতে পারে। সেই দাবীকে সামাল দেবেন কিভাবে? যে কাজটি একজন গণ আন্দোলনের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব সহজেই করে দিতে পারতেন সেই কাজটি যখন আন্দোলনের চাপে করতে হয় তখন তাতে সরকারের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ধরা পড়ে! এর ফলে আগামী দিনে এই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের অভ্যন্তরে একটা বিরাট সংকটের তৈরি হবে যা সামাল দিতে আগামী দিনে মমতা প্রশাসন পারবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে!

প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই পুলিশ কমিশনারকে সরালেন না? সন্দীপ ঘোষকে যেমন আরজিকর থেকে সরাতে চাননি প্রথম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রশ্নের উত্তর সাধারণ মানুষের অজানা কেন সরাতে চান নি? ঠিক একইভাবে একজন পুলিশ কমিশনার কে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরালেন না সেটাই এখন সাধারণ নাগরিকদের কাছে কোটি টাকার প্রশ্ন বলে আমাদের মনে হয়েছে! সব মিলিয়ে শেষ কথা একটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি প্রথমে সন্দীপ ঘোষ এবং ১৪ আগস্ট এর পর বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দিতেন পর থেকে তাহলে হয়তো আজকের দিনটা তৃণমূল নেত্রীকে দেখতে হত না। আসলে ক্ষমতার ঔদ্ধত্য আত্মম্ভরিতা অহংকার নেত্রীকে জনমানষ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। যার ফলে গণ আন্দোলনের নেত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বুঝেই উঠতে পারেননি এই আন্দোলন কোথায় যে পৌঁছাতে পারে।

শুধুমাত্র একটি ভুল মমতা সরকারের পতনের কারণ হতে পারে। শুধু পতনের কারণ নয় বাংলার ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ভিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। আমরা বুঝে উঠতে পারিনা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে কমিটেড ভোটব্যাঙ্ক সেই মুসলিম সম্প্রদায়কেও তিনি কিন্তু চটিয়ে চলেছেন।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ