আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক মৃত্যু সংবাদ নিয়ে সেই বিতর্কিত অডিও ক্লিপ সামনে এলো! কি আছে এই ক্লিপে?
বিশেষ প্রতিনিধি : আর জি কর হাসপাতালের অভ্যন্তরে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় যে ফোন কলের কথা উঠেছিল সেই বিতর্কিত কোন কলের অডিও ভাইরাল হয়ে গেল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে থেকে সম্প্রচারিত এই ফোন কল থেকে জানা যাচ্ছে যে ওই দিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার পরিচয় দিয়ে যে মহিলা ফোন করেছিলেন তিনি প্রথমে সুইসাইড করেছেন বলেছেন পরে আবার অসুস্থ বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন। কেন এই ধরনের ফোন করা হয়েছিল তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠেছে ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে কেন এখনো পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে নিল না। সি বি আই জিজ্ঞাসা বাদের নাম করে যেভাবে সন্দীপ ঘোষকে প্রতিদিন ডেকে পাঠাচ্ছে তাতে আর যাই হোক সন্দেহ হচ্ছে। কেন সিবিআই এই লুকোচুরি খেলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ফোন কলে এক মহিলাকণ্ঠের সঙ্গে অন্য এক পুরুষ এবং নারীকণ্ঠের কথোপকথন রয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, আরজি করের ঘটনার দিন নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথোপকথনের অডিয়ো এগুলি। আনন্দবাজার অনলাইন যদিও ওই অডিয়োর কোনও ক্লিপেরই সত্যতা যাচাই করেনি।
এই অডিয়োর বিষয়ে নির্যাতিতার বাবা-মাকে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসকের বাবা বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কোথা থেকে হয়েছে, কিছুই জানি না।’’ তাঁরা এ-ও স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, এই ভিডিয়োর দায় তাঁরা নিচ্ছেন না। বাবার কথায়, ‘‘কে কোথা দিয়ে কী করছে, সবের দায় আমরা নেব কেন?’’
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রচারিত এই ভাইরাল হওয়া অডিওর কথোপকথন আমরা তুলে ধরলাম। সূত্র হিসাবে ডিজিটাল আনন্দবাজারকে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রথম অডিয়ো:
প্রথম মহিলাকণ্ঠ: ওর একটু শরীরটা খারাপ হয়েছে। আপনারা কি একটু আসতে পারবেন ইমিডিয়েট?
পুরুষকণ্ঠ (সম্ভবত নির্যাতিতার বাবা): কেন কী হয়েছে কী?
মহিলাকণ্ঠ: ওর শরীরটা খারাপ। আমরা ভর্তি করাচ্ছি ওকে। আপনারা কি ইমিডিয়েট একটু আসতে পারবেন?
পুরুষকণ্ঠ: কী হয়েছে কী সেটা বলবেন তো!
মহিলাকণ্ঠ: সেটা তো ডাক্তাররা বলবে আপনারা এলে। আমরা আপনার নম্বরটা জোগাড় করলাম। করে জানালাম যে, বাড়ির লোক হিসাবে আপনারা একটু তাড়াতাড়ি আসুন।
পুরুষকণ্ঠ: কী হয়েছে সেটা বলো না তুমি!
মহিলাকণ্ঠ: পেশেন্টের শরীরটা খারাপ। ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। বাকিটা আপনারা এলে ডাক্তার বলবে।
দ্বিতীয় মহিলাকণ্ঠ ( সম্ভবত নির্যাতিতার মা): ওর কি জ্বর হয়েছে?
মহিলাকণ্ঠ: আপনারা একটু আসুন! জলদি চলে আসুন! যত তাড়াতাড়ি পারবেন।
পুরুষকণ্ঠ: কেন? খুব অবস্থা খারাপ?
মহিলাকণ্ঠ: খুব অবস্থা খারাপ! হ্যাঁ, খুব অবস্থা খারাপ! একটু তাড়াতাড়ি চলে আসুন।
দ্বিতীয় অডিয়ো:
প্রথম মহিলাকণ্ঠ: ওঁর অবস্থা খুবই খারাপ। ওঁর অবস্থা খুবই খারাপ। আপনি যতটা তাড়াতাড়ি পারবেন চলে আসুন!
পুরুষকণ্ঠ: কী হয়েছে সেটা বলো না!
মহিলাকণ্ঠ: সেটা তো ডাক্তার বলবে। আপনি একটু তাড়াতাড়ি চলে আসুন এখানে।
পুরুষকণ্ঠ: আপনি কে বলছেন বলুন তো?
মহিলাকণ্ঠ: আমি অ্যাসিসট্যান্ট সুপার বলছি। আমি ডাক্তার বলছি না।
পুরুষকণ্ঠ: ডাক্তার নেই ওখানে কেউ?
মহিলাকণ্ঠ: আপনার মেয়েকে আমরা ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছি। আপনারা আসুন। এসে যোগাযোগ করুন।
দ্বিতীয় মহিলাকণ্ঠ: ওর কী হয়েছিল কী? ও তো ডিউটিতে ছিল!
প্রথম মহিলাকণ্ঠ: আপনারা জলদি চলে আসুন! যতটা তাড়াতাড়ি পারবেন।
তৃতীয় অডিয়ো:
এই ক্লিপটিতে শুধুমাত্র এক মহিলাকণ্ঠই রয়েছে। প্রথম মহিলাকণ্ঠই বলে মনে করা হচ্ছে।
মহিলাকণ্ঠ: উনি সুইসাইড করেছেন হয়তো। বা মারা গেছেন। পুলিশ রয়েছেন। আমরা হাসপাতালে সবার সামনেই রয়েছি। ফোন করছি।
প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা ঘটনার পর থেকেই অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের হাসপাতাল থেকে ‘ভুল তথ্য’ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের প্রশ্ন, কেন প্রথমে বলা হয়েছিল, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ এবং পরে বলা হয়েছিল তাঁদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। আদতে যেখানে তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে!
প্রথমে অভিযোগ উঠেছিল, কলকাতা পুলিশ থেকে নির্যাতিতার বাবা-মাকে ফোনে খবর দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা পুলিশ জানিয়ে দেয়, তাদের তরফে নির্যাতিতার বাড়িতে কোনও ফোন করা হয়নি। হাসপাতালের তরফে কেউ ফোন করেছিলেন। পরে নিহতের বাবা-মা জানিয়েছিলেন, ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার’ পরিচয় দিয়ে কেউ এক জন ফোন করেছিলেন। তিনি প্রথমে ‘মেয়ে অসুস্থ’ বলেন। পরে বলেন, ‘সুইসাইড’ করেছে বলা হয়। প্রকাশ্যে আসা ফোন কলেও তেমনই শোনা যাচ্ছে।
এ বার সে দিনের কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে। যাতে তিনটি অডিয়ো ক্লিপিং আছে। তবে দু’টি ফোন কলই তিনটি ভাগে ভেঙে প্রকাশ্যে এসেছে? না কি তিন বারই ফোন করা হয়েছিল? না কি এক বারের ফোন কলই তিনটি ক্লিপিংয়ে প্রকাশ্যে এসেছে, তা স্পষ্ট নয়। এ-ও স্পষ্ট নয় যে, এর পরে আরজি কর হাসপাতালের তরফে নির্যাতিতার পরিবারকে প্রাথমিক ভাবে ‘ভুল তথ্য’ নিয়ে কী বলা হবে।
যাইহোক এই অডিও ক্লিপ থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে ঐদিন ফোন করে নির্যাতিতার বাবা-মাকে ভুল সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছিল। কেন ভুল তথ্য দেয়া হয়েছিল এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গোয়েন্দারা। প্রশ্ন উঠেছে এত উত্তর খোঁজার আগে কেন এখনো পর্যন্ত গ্রেফতারি হলো না।